অমিত শাহ (বাঁ দিকে)। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে অভিষেকের করা পোস্ট। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
অমিত শাহের নিয়ন্ত্রণাধীন দিল্লি পুলিশের ‘সক্রিয়তা’র জবাব গান্ধীগিরির মাধ্যমেই দিতে চায় রাজ্যের শাসক তৃণমূল। মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিবসে নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, গান্ধীর অহিংস পথেই চলতে চান তাঁরা। তবে মহাত্মার বিচার এবং সমানাধিকারের দাবিতে যে লড়াই, তাঁকেও অনুসরণ করার কথা বলেছেন অভিষেক। যা থেকে মনে করা হচ্ছে রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের ‘বঞ্চনা’কে সামনে রেখে যে লড়াইয়ের বার্তা দিচ্ছে তৃণমূল, তাকে অহিংস পথেই এগিয়ে নিয়ে যেতে চান দলের সেনাপতি অভিষেক।
সোমবার অভিষেক এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, “জন্মদিবসে বাপুকে স্মরণ করছি। তাঁর সত্য এবং অহিংসার আদর্শ শুধু আমাদের অতীতকেই তৈরি করে দেয়নি, ভবিষ্যতের পথকেও অলঙ্কৃত করে যাচ্ছে।” ভবিষ্যতের সেই পথ যে বিচার এবং সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার পথ, তা-ও উল্লেখ করেছেন অভিষেক। গান্ধীর আদর্শকে কাজে রূপায়িত করারও ডাক দিয়েছেন ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ। আপাত ভাবে এটি নিছক গান্ধী-স্মরণ হলেও এর নেপথ্যে দলের ভবিষ্যতের পথনির্দেশিকা রয়েছে বলে মনে করছেন তৃণমূলের কেউ কেউ।
সোমবার সকাল থেকেই দিল্লিতে ঢুকতে শুরু করেছে তৃণমূলের একের পর এক বাস। বাসযাত্রীদের প্রত্যেককেই রাখা হচ্ছে সেখানকার অম্বেডকর ভবনে। দলীয় সূত্রে খবর, ওই ভবনে বিশ্রাম নিয়েই কর্মসূচিতে অংশ নেবেন দলের কর্মী এবং কেন্দ্রীয় প্রকল্প থেকে ‘বঞ্চিত’ মানুষজনেরা। এই পরিস্থিতিতে সোমবার সকালেই অম্বেডকর ভবনে যায় দিল্লি পুলিশের একটি দল। ক’টি বাস এসেছে, ক’টি বাস আসার সম্ভাবনা রয়েছে, দিল্লিতে আসা কর্মী-সমর্থকদের দেখভালের দায়িত্বে কারা রয়েছেন, সেই বিষয়ে খোঁজখবর নেয় পুলিশ।
পুলিশের এই ‘অতি সক্রিয়তা’ নিয়েই প্রশ্ন উঠছে তৃণমূলের অন্দরে। দিল্লি পুলিশ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন, যে মন্ত্রকের দায়িত্বভার সামলান নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভার ‘নম্বর টু’ অমিত শাহ। তাই এই ‘সক্রিয়তা’র নেপথ্যে বিজেপির হাত রয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও তুলছেন তৃণমূলের কেউ কেউ। তবে প্রকাশ্যে এই নিয়ে এখনই মুখ খুলতে চাইছেন না শাসকদলের কেউই। অম্বেদকর ভবনে ইতিমধ্যেই একটি ‘হেল্প ডেস্ক’ খুলেছে তৃণমূল। তবে পুলিশের এই খোঁজখবর নেওয়া থেকে অনেকেই মনে করছেন যে, বাংলার শাসকদলের কর্মসূচির আগে সব তথ্য হাতের মুঠোয় রাখতে চাইছে তারা।
তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, সোমবার দুপুর ১টা নাগাদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্য নেতারা রাজঘাটে গিয়ে গান্ধীকে শ্রদ্ধা জানাবেন। সেই সময় থেকেই আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হবে দিল্লিতে তৃণমূলের দু’দিনের কর্মসূচি। তৃণমূল সূত্রে খবর, মঙ্গলবার যন্তরমন্তরে দলের কর্মসূচি রয়েছে। তার জন্য দিল্লি পুলিশের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। দলীয় সূত্রেরই দাবি, সেই অনুমতি মিলেছে। কিন্তু তার পরেও বিকল্প রাস্তার কথা ভেবে রাখা হচ্ছে। কারণ, যদি পরে পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয়, তা হলে কী কী করণীয়, তা নিয়ে পরে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে আপাতত স্থির রয়েছে।
সোমবার সকালে রাজঘাটে গিয়ে মহাত্মাকে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পরে এক্স হ্যান্ডলে প্রধানমন্ত্রী লেখেন, “মহাত্মার চিরন্তন শিক্ষা আমাদের পথকে অলঙ্কৃত করছে। মহাত্মা গান্ধীর প্রভাব গোটা বিশ্বে। তিনি ঐক্য এবং সমবেদনার দ্বারা গোটা বিশ্বকে উদ্বুদ্ধ করেছেন।”