Abhishek Banerjee

পঞ্চায়েতে বুথে বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়ায় শাপে বর হয়েছে! হাই কোর্টকে ধন্যবাদ জানালেন তৃণমূল সেনাপতি

কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে তৃণমূল ‘শঙ্কিত’ বা ‘উদ্বিগ্ন’ নয়, তা আগেই দলের তরফে জানানো হয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার অভিষেক বুথে বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের জন্য কোর্টকে ‘ধন্যবাদ’ জানালেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৩ ২১:৫৮
Share:

কলকাতা হাই কোর্টকে ‘ধন্যবাদ’ জানালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে রাজ্য সরকার, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আদালতে কম লড়াই হয়নি। রাজ্য সরকারের আইনজীবী হিসাবে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জোরাল সওয়াল করেছিলেন। সেই মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। ঠিক হয়েছে, রাজ্যে মোট ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে পঞ্চায়েত ভোট হবে। তাতে যে শাসক তৃণমূল ‘শঙ্কিত’ বা ‘উদ্বিগ্ন’ নয়, তা আগেই দলের তরফে জানানো হয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একধাপ এগিয়ে বুথে বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের জন্য কলকাতা হাই কোর্টকে ‘ধন্যবাদ’ জানালেন।

Advertisement

অভিষেকের মতে, কেন্দ্রীয় বাহিনী আসায় ‘শাপে বর’ হয়েছে। গত দু’টি বিধানসভা ভোটের উল্লেখ করে অভিষেক বলেন, ‘‘সেবারও তো বাহিনী এসেছিল। কিন্তু কী হয়েছিল? তৃণমূলই জিতেছিল।’’ তৃণমূলের নেতাদের মতে, ওই মন্তব্য করে অভিষেক দু’টি উদ্দেশ্য সাধিত করতে চেয়েছেন। প্রথমত, দলের তরফে এটা ঘোষণা করে দেওয়া যে, কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে তাঁরা ‘উদ্বিগ্ন’ নন। দুই, দলের কর্মীদের বার্তা পাঠানো যে, কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলেও সাংগঠনিক ভাবে ‘ভোট করাতে’ পারলে কেউ তৃণমূলকে হারাতে পারবে না।

বৃহস্পতিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবের ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন অভিষেক। সেখানে প্রত্যাশিত ভাবেই আবাস যোজনা, সড়ক যোজনা, ১০০ দিনের কাজের টাকা না পাওয়া নিয়ে তিনি তীব্র আক্রমণ করেন কেন্দ্রীয় সরকারকে। সেই সঙ্গেই হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, ‘‘অনেক সৌজন্যের রাজনীতি হয়েছে! এ বার দিল্লি গিয়ে বাংলার মানুষের হক ছিনিয়ে আনব। ওরা (বিজেপি) তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ভাবে না পেরে বাংলার মানুষকে ভাতে মারতে চাইছে।’’ সেই সঙ্গেই ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ আরও বলেন, ‘‘ভুয়ো জব কার্ডের যে যুক্তি কেন্দ্রের তরফে খাড়া করা হচ্ছে তা আসলে ঠুনকো। কারণ, সবচেয়ে বেশি ভুয়ো জব কার্ড বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশে।’’ অভিষেকের প্রশ্ন, ‘‘কই, সেই রাজ্যে তো রেগার টাকা বন্ধ করেনি!’’ এ ছাড়াও রাজ্যপাল আনন্দ বোস, লক্ষ্মীর ভান্ডার, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি-সহ একাধিক বিষয়ে তাঁর এবং দলের অবস্থানের কথা জানান অভিষেক।

Advertisement

কেন্দ্রীয় বাহিনী

পঞ্চায়েত ভোটে প্রতি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ সম্পর্কে অভিষেক বলেছেন, ‘‘আমরাও তো চাইছি কেন্দ্রীয় বাহিনী আসুক! প্রতি বুথে বাহিনী মোতায়েন করা হোক। একজনের জায়গায় ১০ জন দেওয়া হোক। কমিশনই এর সঠিক জবাব দিতে পারবে। তবে আমার মনে হয়, কমিশনের হয়তো মনে হয়েছিল, তার অধিকার বা এক্তিয়ারের জায়গাটা সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। ভোটে কী ব্যবস্থাপনা থাকবে, তা স্থির করার এক্তিয়ার শুধু তাদেরই রয়েছে। তাই হয়তো ইতস্তত করেছিল।”

ভোটের ফল

পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফল নিয়ে সে ভাবে কোনো আগাম ভবিষ্যদ্বাণী করতে চাননি অভিষেক। বলেছেন, ‘‘ভোটের ফলাফল মানুষের ওপর ছেড়ে দিন। মানুষ নিজের অভিজ্ঞতার নিরিখে সিদ্ধান্ত নেবে। আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, কানে শুনে নয়, চোখে দেখে ভোট দিন। কারণ, বিজেপি মুখে বলে। আর আমরা কাজে করে দেখাই। সেই নিরিখেই মানুষ আমাদের ভোট দেবে বলে আমি আশা রাখি।’’

রাজ্যপাল

বৃহস্পতিবার সকালেই রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস কমিশনের কাজকর্ম সম্পর্কে কড়া সমালোচনা করেছেন। সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অভিষেক বলেন, ‘‘বাংলায় একটা কথা আছে— আপনি আচরি ধর্ম। আজ যা বলছেন, তা তিনি নিজে পালন করতে পারতেন। তা হলে বাংলার ভাল হত।’’ অভিষেক প্রশ্ন তুলেছেন, করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার সময় কেন রাজভবনে কন্ট্রোল রুম খুললেন না রাজ্যপাল? কেন দুর্ঘটনায় মৃতদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কথা বললেন না? অভিষেকের কথায়, ‘‘রাজ্যপালকে কিছু বলব না। শুধু কেন্দ্রকে বলব, এত বুদ্ধিমান, জ্ঞানী একজন রাজ্যপালকে বাংলায় প্রয়োজন নেই। ওঁকে মধ্যপ্রদেশে বা মণিপুরে পাঠিয়ে দিন। বাংলার মানুষের জন্য যদি এত ভাবনা, তা হলে রাজ্যপাল কেন একবারও কেন্দ্রের কাছে বকেয়া টাকার জন্য সওয়াল করছেন না।’’

অমিত শাহ প্রসঙ্গে

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও কটাক্ষ করেছেন অভিষেক। বলেছেন, ‘‘অমিত শাহ বিধানসভা ভোটের সময় স্লোগান দিয়েছিলেন, অব কি বার, ২০০ পার! তিনি যে স্লোগান দিয়েছিলেন, ঠিক তার উল্টোটাই হয়েছিল। আমরা ২০০-র বেশি আসন পেয়েছিলাম। আবার এখন বলছেন, রাজ্যে ৩৫টি (লোকসভা) আসন পাবে বিজেপি। এ বারও উল্টোটা হবে! তৃণমূল রাজ্যে ৩৫-এর বেশি আসন পাবে।’’

অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রসঙ্গে

কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার সংসদে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আনতে চাইছে। সেই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে লোকসভার সাংসদ অভিষেক বলেন, ‘‘অভিন্ন দেওয়ানি ঠিক কী, তা এখনও স্পষ্ট নয়। আমাদের ঐক্য আমাদের বৈচিত্র্যের মধ্যে। ভারত তার একতা এবং বিভিন্ন সংস্কৃতির জন্য পরিচিত। প্রতিটি রাজ্যের বিভিন্ন খাদ্যাভ্যাস এবং ভিন্ন ভাষা রয়েছে। প্রথমে কেন্দ্রকে স্পষ্ট করতে হবে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কী। আপনি কী ভাবে আমাদের বিভিন্ন সংস্কৃতি, খাবার, ড্রেসিং সেন্সকে অভিন্ন করতে পারেন? আমরা যে ভাষাগুলি বলি বা আমরা যে ধর্মীয় নীতিগুলি অনুসরণ করি, সেগুলিকে আপনি কী ভাবে অভিন্ন করবেন?’’

লক্ষ্মীর ভান্ডার চাপানউতর

অভিষেকের বক্তব্য, ‘‘এখন সুকান্ত মজুমদার থেকে শুরু করে শুভেন্দু অধিকারী প্রতিযোগিতা করে বলে বেড়াচ্ছেন, এ রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে সব মহিলাকে ২০০০ টাকা করে দেওয়া হবে। একটা সময় বিজেপির নেতারা এই লক্ষ্ণীর ভান্ডারকে ভিক্ষা বলে আক্রমণ করতেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বর্তমানে দেশের প্রায় ১২টি রাজ্যে বিজেপির সরকার রয়েছে। তার একটিতেও বিজেপি লক্ষ্ণীর ভান্ডারের মতো প্রকল্প চালু করে দেখাক! ২০০০ টাকা নয়, ১০০০ টাকা দিয়েই দেখাক যে তাদের এ বিষয়ে আন্তরিকতা রয়েছে। এমনটা হলে আমি রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াব!’’ প্রসঙ্গত, অভিষেকের এই চ্যালেঞ্জকে হাতিয়ার করে বিজেপি ইতিমধ্যেই ময়দানে নেমেছে। তাদের দাবি, দেশের অন্তত দু’টি রাজ্যে মহিলাদের ১০০০ টাকার বেশি অর্থ দেওয়া হয়। সেই দৃষ্টান্ত তুলে ধরে এ বার তারা অভিষেককে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার পাল্টা চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement