সাগরদিঘির সভায় বিজেপিকে উৎখাত করার ডাক দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি ফেসবুক থেকে।
ত্রিপুরা অথবা মেঘালয়— যে কোনও একটি রাজ্যে বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করেই ছাড়বেন! রবিবার মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির সভায় গিয়ে এমনই কথা দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘কথা দিয়ে যাচ্ছি, ত্রিপুরা, মেঘালয়ের মধ্যে যে কোনও একটি রাজ্যে বিজেপি সরকারকে উৎখাত করেই ছাড়ব।’’ দু’টি রাজ্যের কুর্সিই বিজেপির দখলে।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিজয়রথ ঠেকাতে তাই বিভিন্ন রাজ্যে পদ্মশিবিরকে গদিচ্যুত করার কৌশল নিয়েছে বাংলার শাসকদল। এই প্রথম মেঘালয়ে পূর্ণশক্তি দিয়ে লড়ছে জোড়াফুল। অভিষেকের পাশাপাশি ভোটের আগে ত্রিপুরা, মেঘালয়ে বেশ কয়েক দফায় প্রচার পর্ব সেরেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ত্রিপুরায় ভোটগ্রহণ হয়ে গিয়েছে। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি মেঘালয়ে ভোটগ্রহণ। সাগরদিঘি কেন্দ্রের উপনির্বাচনও ওই একই দিনে। এই যোগসূত্রে সাগরদিঘির ভোটপ্রচারে গিয়ে ত্রিপুরা অথবা মেঘালয়ের কুর্সি থেকে বিজেপিকে হঠাতে অভিষেকের গলায় যে চ্যালেঞ্জর সুর শোনা গেল, তা গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে অভিষেক বলেছেন, ‘‘২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াই যাতে আরও শক্তিশালী হয়, সেটাও সুনিশ্চিত করতে হবে।’’
২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপিকে রুখে ক্ষমতা ধরে রেখেছে তৃণমূল। এর পরই বাংলার বাইরে গিয়ে বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনী যুদ্ধে সামিল হতে শুরু করে তৃণমূল। যার মধ্যে রয়েছে উত্তর পূর্বের এই রাজ্য। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে পুরভোটে আগরতলায় প্রায় ২০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল জোড়াফুল শিবির। এর পরই সে রাজ্যে বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রস্তুতি শুরু করে তৃণমূল। বিধানসভা নির্বাচনে ৬০ আসনের মধ্যে ২৮টিকে প্রার্থী দিয়েছে ঘাসফুল। বাঙালি অধ্যুষিত বেশ কয়েকটি আসনে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের লড়াই হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। তবে মনে করা হচ্ছে, এ বার ত্রিপুরার নির্বাচনী ফলে ‘কিং মেকার’ হয়ে উঠতে পারে ত্রিপুরার রাজ পরিবারের বংশধর প্রদ্যোতবিক্রম মাণিক্য দেববর্মনের দল তিপ্রা মথা। প্রদ্যোত দাবি করেছেন, কোনও শিবিরই গরিষ্ঠতা পাবে না। শেষমেশ যদি কোনও দল যদি গরিষ্ঠতা না পায়, তা হলে নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর সরকার গঠনের প্রক্রিয়ায় তুরুপের তাস হতে পারে তিপ্রা মথা। ফলাফল নিরঙ্কুশ হলে বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে জোট প্রক্রিয়ায় কি তৃণমূলও অংশ নিতে পারে? রবিবার সেই ইঙ্গিতই ধরা পড়েছে অভিষেকের গলায়। এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘তৃণমূলের হাত শক্তিশালী করতে হবে। বাংলার মাটিতে এখন আর তৃণমূল সীমিত নেই। আমরা ত্রিপুরা, মেঘালয়ে নির্বাচনে লড়ছি।’’ এর পরই বিজেপিকে উৎখাত করার কথা বলেন তিনি।
ত্রিপুরার পাশাপাশি এ বার মেঘালয়েও ভোটযুদ্ধে সামিল হয়েছে তৃণমূল। ৬০ আসনের মেঘালয়ে ৫৫টি কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছে মমতার দল। ত্রিপুরার তুলনায় মেঘালয়ে তাঁরা অনেকটাই ভাল ফল করবে বলে আশা করছেন বাংলার শাসকদলের একাংশ। মেঘালয়ের মানুষের মন জিততে প্রচারে সামিল হয়েছেন মমতা-অভিষেক। গত বছর ডিসেম্বর মাসে মেঘালয় সফরে গিয়ে একঝাঁক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে যে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ দিয়ে সাফল্য এসেছিল, সেই প্রকল্প মেঘালয়ে চালু করার আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ‘‘ক্ষমতায় এলে ‘উই কার্ড’ নামে প্রকল্পে মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।” আর এরই সুফল মিলতে পারে বলে আশা দলের। মেঘালয়ে অতীতেও জোড়াফুল ফুটেছিল। ২০০৪ সালে সে রাজ্যের তুরা কেন্দ্র থেকে জোড়াফুল প্রতীকে জিতেছিলেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার পূর্ণ অ্যাজিটক (পিএ) সাংমা। পূর্ণের ছেলে কনরাডই বর্তমানে সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। এ বার কনরাডের দল ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সঙ্গে জোট রয়েছে বিজেপির। সেই জোট সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচনী লড়াইয়ে সামিল হয়েছে তৃণমূল। অভিষেক বলেন, ‘‘দায়িত্ব নিয়ে যখন ঢুকেছি, বুকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি, কাঁধে জোড়াফুলের পতাকা, ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্তের চক্রব্যুহকে চূর্ণবিচূর্ণ করে জোড়াফুল ফুটিয়ে ফিরব।’’