রাজভবনের সামনে ধর্নামঞ্চে অভিষেক এবং অন্যান্যরা। — নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যপাল কলকাতায় ফিরে দেখা না করা পর্যন্ত রাজভবনের সামনেই বসে থাকবেন তৃণমূল নেতৃত্ব। রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের দফতরের সামনে দাঁড়িয়ে তেমনই ঘোষণা করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। টানা অবস্থানে বসবেন তাঁরা। রাতও কাটাবেন ধর্নামঞ্চেই। তবে তৃণমূলের সভায় যোগ দেওয়ার জন্য যাঁরা দূর দূরান্ত থেকে এসেছেন, তাঁরা চাইলে ফিরে যেতে পারেন বলে জানিয়েছেন অভিষেক। শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে আবার রাজভবনের সামনে তৃণমূলের কর্মসূচি শুরু হবে।
রাজভবনের সামনে সভামঞ্চ থেকে অভিষেক বলেন, ‘‘আমাদের এই কর্মসূচির কারণে অনেক মানুষের হয়তো অসুবিধা হয়েছে। তার জন্য ক্ষমা চাইছি। যাঁরা আমাদের পাশে থেকেছেন, এত দূর এসেছেন, তাঁদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আপনারা চাইলে ফিরে যেতে পারেন। কিন্তু যত ক্ষণ না রাজ্যপালের দেখা পাচ্ছি, আমরা ধর্নামঞ্চে থেকে যাব। এখানেই রাত কাটাব। এখান থেকে এক চুলও নড়ব না। সকাল ১১টায় আবার কর্মসূচি শুরু হবে। ’’
ধর্নামঞ্চে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
দিল্লি থেকে ফিরে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে ‘রাজভবন অভিযান’-এর ডাক দিয়েছিল তৃণমূল। সেই মতো বুধবার দুপুর ২টোর পরে রবীন্দ্র সদন থেকে শুরু হয় মিছিল। অভিষেকের নেতৃত্বে রাজভবন পর্যন্ত সেই মিছিলে চোখে পড়ার মতো ভিড় হয়েছিল। ভিড়কে কুর্নিশ জানিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘আমি অনেক রাজনৈতিক কর্মসূচি দেখেছি। আজকের এই সমাবেশের জন্য আমরা মাত্র ২৪ ঘণ্টা সময় পেয়েছিলাম। তা-ও এত মানুষ এসেছেন। এই মিছিল সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। এটা মানুষের স্বতস্ফূর্ত যোগদান।’’
জনস্রোত নিয়ে রাজভবনে পৌঁছলেও রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের দেখা মেলেনি। তিনি বৃহস্পতিবার সকালে উত্তরবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে আবার দিল্লিতে ফিরে যান। কলকাতায় আসেননি। তৃণমূলের তরফে অভিযোগ, রাজ্যপাল তাঁদের সমাবেশকে ভয় পেয়ে পালিয়ে গিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ধর্নামঞ্চ থেকে অভিষেক বলেন, ‘‘কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ আমাদের সঙ্গে দেখা করেননি। প্রতিমন্ত্রী পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন। এখন রাজ্যপালও চলে গেলেন। আমি তো সবার সামনে। বিজেপি নেতারা কেন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন?’’
অভিষেক জানিয়েছেন, সুব্রত বক্সীর নেতৃত্বে তৃণমূলের ২৫ জন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাজভবনে যাবেন এবং সেখানকার আধিকারিকের হাতে একটি স্মারকলিপি জমা দেবেন। এই ২৫ জনের মধ্যে ১০ জন কেন্দ্রীয় বঞ্চনার ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্য থাকবেন। বাকি ১৫ জন থাকবেন দলের প্রতিনিধি হিসাবে।
রাজ্যপালের কাছে কী দাবি অভিষেকদের? ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ বলেন, ‘‘গায়ের জোরে কেন্দ্র টাকা আটকে রেখেছে। আমাদের রাজ্যপালের কাছে দু’টি প্রশ্ন রয়েছে। এই ২০ লক্ষ মানুষকে দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কাজ করিয়েছে কি? যদি করিয়ে থাকে, তবে কোন আইনে তাঁদের পারিশ্রমিক আটকে রাখা হয়েছে? রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা হলে এই প্রশ্নগুলিই ওঁকে কেন্দ্রীয় সরকারের সামনে রাখতে অনুরোধ করব।’’
তৃণমূলের ‘রাজভবন চলো’ অভিযান ঘোষণার কথা শোনার পরেই রাজ্যপাল কলকাতায় না ফিরে দিল্লি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। রাজভবনের সামনে দাঁড়িয়ে তেমনই দাবি করলেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘আমি যখন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলাম, রাজ্যপাল কলকাতায় ছিলেন না। কেরলে ছিলেন। ৪ তারিখ ওঁর কলকাতায় ফেরার কথা ছিল। আমার কাছে যত দূর খবর আছে, আমাদের ঘোষণার আধঘণ্টার মধ্যে রাজ্যপালের তরফে গ্রুপে গ্রুপে মেসেজ করে জানিয়ে দেওয়া হয়, তিনি ফিরছেন না। দিল্লি যাচ্ছেন।’’
বৃহস্পতিবার সময় চেয়ে রাজ্যপালকে চিঠি লিখেছিল তৃণমূল। রাজ্যপাল শিলিগুড়িতে ছিলেন। তিনি ইমেল মারফত জানান, শিলিগুড়ির সার্কিট হাউসে গিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারেন। এ প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, ‘‘শিলিগুড়ি গিয়ে দেখা করতে আমাদের আপত্তি নেই। আমরা ভেবেছিলাম, উনি দু’তিন দিন শিলিগুড়িতে থাকবেন। কিন্তু খবর পেলাম, শিলিগুড়িতে উনি আছেন বিকেল ৪টে পর্যন্ত। অর্থাৎ, মাত্র দু’তিন ঘণ্টার মধ্যে উনি আমাদের যেতে বলেছিলেন, যেটা সম্ভব নয়!’’
১০০ দিনের কাজে বঞ্চনার অভিযোগে ভুক্তভোগীদের নিয়ে দিল্লিতে গিয়েছিল তৃণমূল। সেখানে ২ অক্টোবর গান্ধীজয়ন্তীর দিন মহাত্মা গান্ধীর সমাধিস্থল রাজঘাটে অভিষেকের নেতৃত্বে ধর্নায় বসেন তৃণমূল কর্মী, সমর্থকেরা। অভিযোগ, দিল্লি পুলিশ তাঁদের জোর করে তুলে দিয়েছে। পরের দিন ৩ অক্টোবর দিল্লির যন্তরমন্তরে হাজির হয় বাংলার শাসকদল। সেখান থেকে কেন্দ্রীয় কৃষি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে কৃষিভবনে যান অভিষেকরা। কিন্তু মন্ত্রী দীর্ঘ ক্ষণ তাঁদের বসিয়ে রেখে দেখা না করে ‘পিছনের দরজা দিয়ে’ চলে যান বলে অভিযোগ।
এর পর কৃষিভবনে অভিষেকরা অবস্থানে বসেছিলেন। তাঁদের আটক করে মুখার্জিনগর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। রাতে সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পরেই রাজভবন অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূলের ‘সেনাপতি’। রাজ্যপাল সেই সময় কেরলে ছিলেন। সেখান থেকে দিল্লিতে চলে যান। বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে উত্তরবঙ্গে এলেও কলকাতায় পা রাখলেন না বোস। কবে তিনি ফিরবেন, স্পষ্ট নয়। রাজভবন সূত্রে খবর, দিল্লিতে শুক্রবার তাঁর কর্মসূচি রয়েছে। তিনি না ফেরা পর্যন্ত রাজভবনের সামনে ধর্না চালিয়ে যাবেন অভিষেকরা।