মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
দশ বছর ধরে প্রশাসনিক স্তরে আটকে থাকা জমি সংক্রান্ত একটি সমস্যার সমাধান হয়ে গেল দশ দিনেই! তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপেই এমনটা হল।
বড়জোড়া ব্লকের ১৬টি পরিবার বছর দশেক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে জমির পাট্টা পেয়েছিলেন। অথচ স্থানীয় কিছু সমস্যার জন্য সেই জমির দখল তাঁরা পাননি। ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরও তাঁদের অভিযোগ কানে তোলেনি বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের সূত্র ধরে তাঁরা অভিষেকের ডায়মন্ডহারবারের অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে নির্দেশ পেয়েই প্রশাসন তৎপর হয়। শুক্রবার পরিবারগুলিকে জমির দখল দেওয়া হয়।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, জট কাটাতে এতদিন কেন সময় লাগল? বাঁকুড়ার জেলা শাসক সিয়াদ এন বলেন, “সমস্যাটি আমাদের নজরে আসতেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ওই পাট্টাদারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের খাস জমির প্লট ভাগ করে বণ্টন করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, মোট ১৮টি পরিবার পাট্টা পেয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে। তাদের মধ্যে ১৬টি পরিবারকে জমির দখল দেওয়া হয়েছে। বাকি দু’টি পরিবার কোথায় রয়েছে, খোঁজ নিচ্ছে প্রশাসন। পুজোর মুখে জমির দখল পেয়ে খুশি ওই পরিবারগুলি। তবে দ্রুত যাতে সরকারি প্রকল্পে তাদের বাড়ি বানিয়ে দেওয়া হয় সেই দাবি তুলেছে পরিবারগুলি।
প্রশাসন সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারের ‘নিজ ভূমি নিজ গৃহ’ প্রকল্পে বড়জোড়া ব্লকের বেলিয়াতোড়ের ওই জমিহীন, গৃহহীন পরিবারগুলিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত দিয়ে জমির পাট্টা তুলে দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে সাতটি পরিবার পাট্টা পেয়েছিল ২০১৩ সালে। ১১টি পরিবার পাট্টা পায় ২০১৪ সালে। বেলিয়াতোড়ের নতুনগ্রাম মৌজায় সরকারি খাসজমিতে তাদের বসবাসের জায়গা চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ, সরকারি জমির পাট্টা পেলেও জমি মাফিয়াচক্র ও স্থানীয় একটি ক্লাবের আপত্তিতে সেই জমির দখল নিতে পারেনি পরিবারগুলি। এরপরে জমির অধিকার চেয়ে বহুবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও কাজ হয়নি।
পাট্টাপ্রাপকদের তরফে মিলন দাস বলেন, “জমির অধিকার না পেয়ে কখনও ব্লক ভূমি অফিসে, কখনও বাঁকুড়ায় জেলা ভূমি অফিসে ছোটাছুটি করেছি। প্রতিটি দফতরই বার বার ফিরিয়ে দিয়েছে। এক অফিসে গেলে অন্য অফিসে যেতে বলা হত। সেখানে গেলে আবার আগের অফিসেই ফিরিয়ে দেওয়া হত। আমরা লিখিত অভিযোগ জানাতে গেলেও দফতর তা জমা নেয়নি। এ ভাবে দশ বছর ধরে কেবল আমরা ঘুরেছি।” তিনি জানান, জেলার ভূমি দফতর কিছু করবে না বুঝেই জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে পাট্টাদারদের তরফে অভিষেকের অফিসে যোগাযোগ করে সব কথা জানানো হয়।
সূত্রের দাবি, সব জেনে দিন দশেক আগে অভিষেকের তরফে জেলা প্রশাসনকে সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরেই প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে পাট্টাদারদের জন্য চিহ্নিত খাস জমি ১৮টি প্লটে বিভক্ত করে ১৬টি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। অভিযোগ নিয়ে ভূমি দফতরের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। জেলা প্রশাসনও বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে চায়নি।
তবে বড়জোড়ার বিডিও কার্তিকচন্দ্র রায়ের আশ্বাস, ‘‘পাট্টাদারদের সরকারি প্রকল্পে বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’’ জেলা শাসক বলেন, “প্রশাসন সব রকম ভাবে পরিবারগুলির পাশে রয়েছে।”