(বাঁ দিকে) কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
মঙ্গলবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়োগ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে ইডি। কিন্তু তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মঙ্গলবার কলকাতায় নেই। তিনি দিল্লিতে দলের কর্মসূচিতে ব্যস্ত। কলকাতায় ইডির দফতরে হাজিরা দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। হাজিরা না দেওয়ার কথা অভিষেক আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন। অন্য দিকে, কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ ইডিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, কোনও ভাবেই যাতে ৩ অক্টোবরের তদন্তপ্রক্রিয়া ব্যাহত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। তার জন্য যে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে কেন্দ্রীয় সংস্থা।
এই পরিস্থিতিতে ইডির হাজিরা এড়াতে কৌশলী পদক্ষেপ করলেন অভিষেক। বিচারপতি সিংহের নির্দেশের ব্যাখ্যা চেয়ে তিনি হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছেন। পাশাপাশি, মঙ্গলবার ইডির হাজিরা এড়ানোর আবেদনও ডিভিশন বেঞ্চে জানিয়েছেন তিনি। মামলা দায়েরের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হবে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায়।
আবেদনে অভিষেকের যুক্তি, তাঁকে মামলায় যুক্ত না করেই সিঙ্গল বেঞ্চ নির্দেশ দিয়ে দিয়েছে। তাঁর বক্তব্য শোনা হয়নি। অথচ, বিচারপতির নির্দেশ অভিষেকের অধিকার এবং স্বার্থকে সরাসরি প্রভাবিত করছে। আবেদনে তাঁর আরও বক্তব্য, তদন্তকারী সংস্থার তদন্তপ্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করছেন বিচারপতি। তিনি নির্দিষ্ট ভাবে অভিষেক, তাঁর সংস্থা এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ইডিকে পদক্ষেপ করতে বলেছেন। শুধু তা-ই নয়, পদক্ষেপ না করলে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের হুমকিও দিয়েছেন। এ ভাবে বিচারপতি সিংহ ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করছেন বলে দাবি।
অভিষেকের আইনজীবী আবেদনে জানিয়েছেন, বিচারপতি সিংহের নির্দেশে ইডি অভিষেককে মঙ্গলবার তলব করেছে। কিন্তু তিনি জনপ্রতিনিধি। ওই দিন তাঁর দলের কর্মসূচি রয়েছে, যা পূর্বঘোষিত। তা ছাড়া, অভিষেকের আবেদনে এ-ও বলা হয়েছে যে, ইডি তাঁর কাছ থেকে যে নথি চেয়েছে, তা প্রায় ১০ বছরের পুরনো। তা জোগাড় করতে আরও পর্যাপ্ত সময় দরকার। এই সমস্ত কারণ দেখিয়ে হাজিরা এড়াতে চেয়েছেন অভিষেক।
শুনানি চলাকালীন বিচারপতি সৌমেন সেন প্রশ্ন করেন, ‘‘অভিষেক তো আগেও হাজিরা দিয়েছেন। এখন সমস্যা কোথায়?’’
উত্তরে অভিষেকের আইনজীবী কিশোর দত্ত বলেন, ‘‘তিনি পূর্বনির্ধারিত রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ব্যস্ত রয়েছেন। আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে যাবে, এমন একের পর এক নির্দেশ দিচ্ছে সিঙ্গল বেঞ্চ। সুপ্রিম কোর্টের একাধিক নির্দেশ অনুযায়ী, কোনও তদন্তের উপর আদালত ‘মনিটরিং’ করতে পারে। কিন্তু ‘সুপারভাইজিং’ করতে পারে না।’’ সিঙ্গল বেঞ্চ তদন্তের প্রতি পদক্ষেপ নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ করেছেন আইনজীবী।
উল্লেখ্য, এর আগে অভিষেকের সংস্থা লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস, তাঁর মা-বাবার সম্পত্তির হিসাব চেয়েছিলেন বিচারপতি সিংহ। অভিষেকের বাবা এবং মাকে ইডি তলবও করেছে।