কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
রাজ্যের পাওনা নিয়ে এ বার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গেই রাজ্যে বিধানসভা ভোটের সময় বিজেপির স্লোগান বদলে দিয়ে তৃণমূলের কটাক্ষ, ‘অব কি বার, ফির সে হার’।
শুক্রবার বীরভূমের সভায় দুর্নীতি ও আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে শাসক তৃণমূলকে তুলোধোনা করেন শাহ। তার জবাবে রাজ্যের প্রাপ্য অর্থ আটকে দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে অভিষেক জানিয়ে দেন, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের পাওনা সেই এক লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা ছেড়ে দিক। তা হলে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াতেও রাজি তিনি।
পঞ্চায়েত ভোটমুখী রাজ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বারের রাজ্য সফর যে ‘হাই ভোল্টেজ’ হবে, গত দু’দিন ধরে তার ইঙ্গিত মিলছিল। শাহের সফরসূচি নির্দিষ্ট হওয়ার পর থেকেই রাজ্যে প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনার অভিযোগে সুর চড়াতে থাকে তৃণমূল। বুধবার, শাহের সফরের আগের দিনই দলের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে মোদী সরকারের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ শাহের উদ্দেশে দুর্নীতি আর প্রাপ্য অর্থ আটকে রাখা নিয়ে একগুচ্ছ প্রশ্নও রাখে তৃণমূল। বৃহস্পতিবার শাহের বিমান রাজ্যে নামার সময় থেকে ফের সেই প্রচারই সামনে নিয়ে আসেন তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা। শেষ পর্বে সেই আক্রমণে যোগ দেন অভিষেক।
দলীয় সভায় শাহ দুর্নীতির যে অভিযোগ তুলছেন, তাতেও নিশানা ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর ‘ভাতিজা’ অভিষেক। তা নিয়ে রাতে শাহের উদ্দেশে অভিষেকের টুইট, ‘আপনি আমার সম্পর্কে যে অভিযোগ করেছেন, তা কল্পিত। আর বিজেপি রাজ্যের যে ক্ষতি করেছে, সে সম্পর্কে আপনি নীরব।’ সেই সূত্রেই পাওনা নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘আমার উপস্থিতি নিয়ে যদি আপনার এতই কষ্ট হয়, আমি রাজনীতি ছেড়ে দিতে রাজি। তবে তার আগে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাজ্যের ন্যায্য প্রাপ্য ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা ছেড়ে দিন।’
তবে শাহকে আলাদা করে বিশেষ আক্রমণে না গিয়ে রাজ্যের প্রাপ্যের বিষয়টিই ফের এক বার সামনে নিয়ে এসেছেন অভিষেক। তবে জনসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে ঝাঁঝালো আক্রমণ করেছেন তৃণমূলের অন্য সাংসদ, মন্ত্রী, নেতারা। শাহ যেমন গরু ও কয়লা পাচার, নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তৃণমূলকে বিঁধেছেন, তাঁর দিকেও একই ভাবে প্রশ্ন ছুড়ে দলের জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘কেন্দ্রের মন্ত্রী রাজ্যে এসে কয়লা পাচারকারীর সঙ্গে দেখা করছেন, সিবিআইয়ের মামলায় অভিযুক্ত রাজ্যের বিরোধী দলনেতা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মঞ্চে বসে! তার পরও দুর্নীতি নিয়ে কথা বলছেন কোন মুখে!’’ এ দিন রাজ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শুভেন্দুকেই কার্যত মুখ হিসেবে তুলে ধরেছেন শাহ। তার পরে শুভেন্দুর পুরনো একটি ভিডিয়ো সামনে এনে নারদ মামলার কথাও তুলেছে তৃণমূল।
আবাস যোজনা ও ১০০ দিনের কাজের টাকা নিয়ে বিজেপি-তৃণমূল চাপানউতোর বহু দিনের। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসার আগে তৃণমূল সেই টাকা আটকে রাখার কারণ জানতে চেয়েছিল। দলীয় সভায় শাহ তা নিয়ে কিছু না বলায় রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সংবিধানের কোন ধারায় তা আটকে রেখেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার জবাব দেননি। অর্থাৎ জবাব নেই।’’
দলীয় সভায় রাজ্যে ৩৫টি লোকসভা আসন ‘চেয়ে’ তৃণমূলের ‘দুর্নীতি ও অনুন্নয়নে’র রাজত্বে ইতি টানার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শাহ। সেই সূত্রেই ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের পরে তৃণমূল সরকার পড়ে যাবে বলেও দাবি করেছেন তিনি। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটের সঙ্গে বিধানসভার সম্পর্ক কী? দিল্লি থেকে রাজ্যের নির্বাচিত সরকার ভাঙার যে চক্রান্ত হয়, সেই বিড়ালই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঝুলি থেকে বেরিয়ে পড়েছে।’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘অমিত শাহ আসলে বুঝিয়ে দিয়েছেন, মোদীর হাল ভাল নয়! মোদীকে ফেরানোর পূর্বশর্ত হল, বাংলা থেকে ৩৫টা আসন জিততে হবে! তৃণমূল আগের বার বলেছিল, ৪২টা আসন পাব। তার পরে কী হয়েছে, সবাই দেখেছে। এই শাহেরা বাংলায় বিধানসভা ভোটের আগে দু’শো আসনের লক্ষ্যের কথা বলেছিলেন। তার পরে কী হয়েছিল, সবাই দেখেছে। এ বার ৩৫ কেন, একেবারে ৪২টা আসন বললেই পারতেন!’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘লোকসভায় বিজেপির আসনের সঙ্গে রাজ্যে সরকার পড়ে যাওয়ার কী সম্পর্ক? এটা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলভ কথা হল?’’