অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিকল্প হিসেবে রাহুল গাঁধীর নামে আগেই প্রশ্ন তুলেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এ বার বিজেপি-বিরোধী লড়াইয়ে দল হিসেবে কংগ্রেসের উপরেও সরাসরি অনাস্থা জানালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেস নয়, তৃণমূলই বিজেপিকে হারাতে পারে বলেও জাতীয় স্তরে বিরোধী জোটের চর্চায় নতুন উপাদান যোগ করেছেন তিনি।
দু’টি বিধানসভা আসনে ভোটের প্রচারে বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুরে জোড়া সভা করেন অভিষেক। এই দু’টি আসনেই রাজনৈতিক ভাবে কংগ্রেস এখনও গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ দিন অভিষেকের নিশানায় ছিল কংগ্রেস। রাজ্যে কংগ্রেসের ভূমিকার সমালোচনা করার পাশাপাশি সর্বভারতীয় স্তরেও কংগ্রেসের সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন তিনি। শমসেরগঞ্জের সভায় অভিষেক বলেন, ‘‘কংগ্রেস ও তৃণমূল, দুই দলই বিজেপিকে হারাতে চায়। কিন্তু তফাত একটাই। কংগ্রেস সব জায়গায় বিজেপির কাছে হারে, তৃণমূল বিজেপিকে হারায়!’’ লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর অবশ্য পাল্টা অভিযোগ, ‘বিজেপির সুপারি’ নিয়ে বিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল। দিল্লিতে ইডি-র দফতরে হাজিরা দেওয়ার পর থেকেই অভিষেক কেন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন অধীর।
সম্প্রতি উত্তর কলকাতায় দলের একটি সভায় সরাসরি কংগ্রেস নেতা রাহুলের নাম ধরেই অনাস্থার কথা জানিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের মত হিসেবে প্রকাশ্য সভায় সুদীপ জানিয়েছিলেন, রাহুলকে তিনি বহু দিন চেনেন। এবং রাহুল কোনও ভাবেই প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিকল্প হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। দলের মুখপত্রে সুদীপের সেই বক্তব্য বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে তাতে নিজেদের সমর্থনও স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। লোকসভায় দলের নেতার সেই বক্তব্যে এ দিন আনুষ্ঠানিক সিলমোহর দিয়েছেন অভিষেক।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির জেলা মুর্শিদাবাদের এই সভায় অভিষেকের কটাক্ষ, ‘‘কংগ্রেস না কি বিজেপিকে হারাবে! কংগ্রেসকে দিয়ে হবে না!’’ রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্বকে খোঁচা দিয়ে তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘এই যে বহরমপুরের সাংসদ (অধীর), তাঁকে দেখা যায়? তৃণমূলকে দেখা যায়।’’ এ রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে নির্বাচনী লড়াইয়ে কংগ্রেস-বাম জোটের সমালোচনা করে অভিষেক বলেন, ‘‘কংগ্রেসের নেতারা মানুষের পাশে থাকে না। এঁরা বাইরে গিয়ে ফূর্তি করে। কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে ভোটটা নষ্ট করবেন না।’’
অভিষেকের এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে অধীরের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘পিসি বলছেন, বিরোধী জোট করতে হবে। ভাইপো বলছেন, কংগ্রেসকে দিয়ে হবে না! বাংলার বাইরে সারা ভারতে বিজেপির বিরুদ্ধে কে লড়ছে?’’ তাঁর আরও প্রশ্ন, ‘‘দিল্লিতে ইডি-র কাছে উনি (অভিষেক) হাজিরা দিয়েছিলেন ৬ সেপ্টেম্বর। তার পর থেকেই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিষোদগার শুরু হয়েছে। মুখে বলছেন, দলের মুখপত্রে ছাপছেন। রহস্যটা কী? বিরোধী ঐক্য ভেঙে গেলে সব চেয়ে খুশি হবে যারা, তাদের নাম বিজেপি!’’
কয়লা মামলায় বিজেপি-সহ বিরোধীদের অভিযোগের জবাব দিয়ে এ দিন পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক লড়াইয়ে না পেরে আমাকে পাঁচ বার সমন পাঠিয়েছে। পাঁচশো বার পাঠালেও তিন বছরের মধ্যেই বিজেপিকে দিল্লি ছাড়া করব!’’