নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীকে (বাঁ দিকে) ‘ফাঁপা বেলুন’ বলেও কটাক্ষ করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। — ফাইল ছবি।
প্রত্যেক বার তিনি টুইট করে জানান, বোমা ফাটাবেন। তার পরে দেখা যায় কিছুই নেই। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে এ ভাবেই কটাক্ষ করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার শুভেন্দু সাংবাদিক বৈঠক করেন। তার পর পরই তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করেন অভিষেক। সেখানে নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ককে ‘ফাঁপা বেলুন’ বলেও কটাক্ষ করেন অভিষেক। শুভেন্দুকে খোঁচা দিয়ে অভিষেক আরও দাবি করেন, প্রায় হাজার দিন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। হাজার সাংবাদিক বৈঠক করে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও কোনওটাই প্রমাণ করতে পারেননি।
দিন কয়েক আগে সিঙ্গুরের একটি সভা থেকে শুভেন্দু দাবি করেছিলেন, জাতীয় দলের তকমা হারানোর পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চার বার ফোন করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার নবান্ন থেকে শুভেন্দুর সেই দাবিকে চ্যালেঞ্জ করেন মমতা। শাহকে ফোন করার বিষয়ে প্রমাণ দিতে পারলে তিনি মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেবেন বলে জানান। তার পরেই শুভেন্দু টুইট করে জানান, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে যে মুখ্যমন্ত্রী ফোন করেছিলেন, তার সপক্ষে প্রমাণ দিয়ে ‘মোক্ষম’ জবাব দেবেন বৃহস্পতিবার। বৃহস্পতিবার যদিও সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দু জানান, মুখ্যমন্ত্রীর ‘কল ডিটেলস’ প্রকাশ্যে আনতে চান না।
এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই সাংবাদিক বৈঠক করে শুভেন্দুকে জবাব দেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘উনি প্রত্যেক বার একটা টুইট করে বলেন, বোমা ফাটাবেন। আপনারা এক দিন ধরে নাচেন। আর দেখেন কিচ্ছু নেই। ফাঁপা বেলুন। বেলুন খুললে যেমন গ্যাস বেরিয়ে যায়, তেমন।’’ অভিষেকের আরও অভিযোগ, এমনটাই বার বার করে আসছেন শুভেন্দু। অভিষেকের কটাক্ষ, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন শুভেন্দু। তার পর প্রায় হাজার দিন কেটে গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘হাজার দিনে হাজার সাংবাদিক বৈঠক করেছেন শুভেন্দু। একটা সাংবাদিক বৈঠক দেখান, যেখানে উনি আমায় গালাগাল করেননি। দেখাতে পারবেন না। হাজার অভিযোগ করেছেন। একটাও প্রমাণ হয়নি। করতে পারেননি।’’ অভিষেকের সংযোজন, ‘‘ওঁর কাজই অভিযোগ করা। আর কথায় কথায় মিথ্যে বলা। উনি বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীকে প্রাক্তন করে রাজনীতি ছাড়ব। প্রমাণ করুন। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন প্রমাণ করলে ইস্তফা দেব। প্রমাণ করুন, কে বারণ করছে? এত ভাল সুযোগ সারা জীবনে পাবেন না। গতকাল বললেন, সব আগামী কাল ফাঁস করবেন। আজ বলছেন, আমি চাইছি হাই কোর্টে মামলা হোক। হাই কোর্টে মামলা হলে, কোর্ট নির্দেশ দিলে সব ফাঁস করব।’’ এর পরেই অভিষেকের হুঁশিয়ারি, ‘‘হাই কোর্টে মামলা হবেই, ল্যাজে-গোবরে করব। কেউ বাঁচাতে পারবেন না। প্রোটেকশন দেবেন না।’’
বৃহস্পতিবারের সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে কটাক্ষ করেছেন শুভেন্দু। প্রশ্ন তুলেছেন, প্রশাসনিক পদে বসে তিনি কী ভাবে কাউকে ‘কিম্ভূতকিমাকার’ বলেন? এ বার তা নিয়েই পাল্টা শুভেন্দুকে কটাক্ষ করেছেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘আপনি ভাষার মাধুর্য নিয়ে কথা বলছেন? মুখ্যমন্ত্রীকে যে বিরোধী দলনেতা ফুপু বলেন, খালা বলেন, তিনি ভাষার মাধুর্য নিয়ে কথা বলেন! আপনি ভাষা নিয়ে বলেন! আপনি ব্যক্তিগত স্তরে এত নীচে নেমে গিয়েছেন যে, কোনও গঠনমূলক আলোচনা নেই, শুধু এঁকে আক্রমণ, তাঁকে আক্রমণ।’’
মুখ্যমন্ত্রী বা অভিষেককে আক্রমণ করলেও শুভেন্দু সরাসরি কখনও তাঁদের নাম করেননি। এ বার তা নিয়ে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে এক হাজার অভিযোগ। একটার প্রমাণ চাইছি। ভয়েস ক্লিপের কথা বলেছি। উনি বলেননি। আমার নাম নিয়ে বলুন, কোর্টে নিয়ে গিয়ে ল্যাজে-গোবরে করব। উনি ভাববাচ্যে বলেন। তাতে মামলা হয় না। ও বাজার গরম করা টুইটার নেতা।’’ অভিষেক এ-ও জানান, তাঁর বিরুদ্ধে শুভেন্দু আদালতে গিয়ে অপরাধের মামলা করুন। তিনি আদালতে গিয়েই তাঁর প্রমাণ দেবেন। তাঁর দাবি, কিন্তু শুভেন্দু কখনওই তা করেন না। অভিষেকের কথায়, ‘‘তিনি বদলে টুইট করেন। জানেন, টুইট করলে খবর চালাবে। প্রচারের আলোয় থাকব। আমার বাড়তি পাওনা।’’
আগামী ২৫ মার্চ থেকে ‘সংযোগ যাত্রা’ করতে চলেছে তৃণমূল। কর্মসূচির নাম ‘তৃণমূলের নব জোয়ার’। তা নিয়েই বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করেন অভিষেক। সেখানে জানিয়ে দেন, কী ভাবে ৬০ দিন ধরে রাজ্যের সমস্ত জেলায় ঘুরবেন তিনি, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে শুনবেন, সাত হাজার গ্রামীণ বুথে কাকে প্রার্থী করতে চান তাঁরা। সেই মতোই পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী দেবে তৃণমূল। অভিষেক জানিয়েছেন, তৃণমূলের লক্ষ্য ‘মানুষের পঞ্চায়েত গঠন’। বুথ সভাপতি থেকে এলাকার বিশিষ্ট জন থেকে সাধারণ মানুষ, গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেবেন। ভোট দিয়ে জানাবেন, কাকে প্রার্থী করতে চান পঞ্চায়েত ভোটে। এই ভোটে সাধারণ মানুষ যদি চান যে, বিপক্ষের কেউ তৃণমূলের প্রার্থী হোক, তিনি তাতেও রাজি। অভিষেকের কথায়, ‘‘মানুষ সিপিএমের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে যদি বলে তৃণমূলের হয়ে দাঁড়াক, তিনি দাঁড়ালে আমি পরিষেবা পাব, দুর্নীতি হবে না, আমি নিজে তাঁর সঙ্গে কথা বলব। আমার ইগো নেই। তিনি রাজি না হলে বিকল্প নাম মানুষের কাছে চাইব।’’