শুভেন্দু দাবি করেছিলেন, তৃণমূল জাতীয় দলের তকমা হারানোর পরে মমতা অমিত শাহকে একাধিক বার ফোন করে ওই বিষয়ে সাহায্য চেয়েছেন। ফাইল চিত্র
বলেছিলেন ‘মুখোশ খুলবেন’। কিন্তু আড়াল সরাতে পাjলেন না শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূলের জাতীয় দলের তকমা হারানোর পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অমিত শাহের মধ্যে কথোপকথনের প্রমাণ দিতে পারলেন না বিরোধী দলনেতা। বললেন, মুখ্যমন্ত্রী চূড়ান্ত স্তরের নিরাপত্তা পান। তাই তাঁর ‘কল ডিটেলস’ জনসমক্ষে আনতে চান না।
বুধবারেই শুভেন্দু দাবি করেছিলেন, তৃণমূল জাতীয় দলের তকমা হারানোর পরে মমতা অমিত শাহকে একাধিক বার ফোন করে ওই বিষয়ে সাহায্য চেয়েছেন। যা শুনে মমতা বলেছিলেন, শুভেন্দু যদি তাঁর বক্তব্য প্রমাণ করতে পারেন, তা হলে তিনি মুখ্যমন্ত্রিত্বে ইস্তফা দেবেন। শুভেন্দু আবার দাবি করেছিলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে মমতার কল রেকর্ডিং প্রকাশ্যে এনে ‘সব ফাঁস’ করবেন। গোটা রাজ্য অধীর আগ্রহে বসেছিল শুভেন্দুর বক্তব্য জানার জন্য। কিন্তু শুভেন্দু বললেন, ‘‘আপনি মুখ্যমন্ত্রী। নিরাপত্তা সংক্রান্ত অনেক রকম ব্যাপার থাকে। নিরাপত্তার জন্যই আপনার কল রেকর্ড প্রকাশ্যে আনা যায় না। তাই আনছি না!’’
শুভেন্দুর এই ‘ডিগবাজি’-তে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ টুইট করে বলেছেন, ‘‘অমিত শাহকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফোনের প্রমাণ দিতে পারল না শুভেন্দু। আইনি জাগলারি দেখিয়ে প্রশ্ন এড়াচ্ছে। ও কিসের ভিত্তিতে কথাটা বলল, সেই কথাটুকুও বলতে পারল না। অন্য প্রসঙ্গে কুৎসা করে গেল।’’
কেন তিনি মমতার-শাহ ফোনের প্রমাণ দিতে পারলেন না? শুভেন্দুর ব্যাখ্যা, এ সংক্রান্ত আইন আছে। তাই তিনি এই কাজ করতে পারবেন না। তবে একই সঙ্গে তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ করে শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘আপনারা আমার বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়েছেন! সেই মামলা করুন। কারণ, সে ক্ষেত্রে মামলার সূত্রেই মুখ্যমন্ত্রীর কল রেকর্ডিংয়ের তথ্য প্রকাশ্যে আনতে বাধ্য হবে সংশ্লিষ্ট টেলি যোগাযোগ সংস্থা।’’
ঘটনাচক্রে, এর আগেও এমন ‘বিস্ফোরক’ দাবি করে শেষমেশ পিছিয়ে আসতে দেখা গিয়েছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুকে। সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে তৃণমূলের অনেকে মনে করিয়ে দিয়েছেন শুভেন্দুর দেওয়া ‘ডিসেম্বর ডেডলাইন’-এর কথা। সে বারও শুভেন্দুর ভবিষ্যদ্বাণী মেলেনি। ফলে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল বিজেপিকে। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হল বলে অভিমত তৃণমূলের একাংশের। অথচ শুভেন্দু দাবি করেছিলেন, তিনি মুখোশ খুলে দেবেন! দাবি করেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ল্যান্ডলাইন থেকে শাহকে ফোন করেছিলেন। সে ফোনের প্রমাণও তিনি পেশ করে দেবেন।
ঘটনা সূত্রপাত গত সোমবার। সিঙ্গুরের সভা থেকে শুভেন্দু দাবি করেছিলেন, তৃণমূলের জাতীয় দলের তকমা হারানোর পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহকে ফোন করে সেই স্বীকৃতি ফেরানোর অনুরোধ করেছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা। যার জবাবে মমতা বলেন, ‘‘যদি এই অভিযোগ প্রমাণ করতে পারে, তা হলে আমি মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেব! আমাকে এত সহজ ভাবার কোনও কারণ নেই। আমি দীর্ঘ দিন রাজনীতি করছি।’’ পাশাপাশিই মমতা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘প্রমাণ করতে না পারলে তুমি মানুষের সামনে নাকখত দেবে তো?” বৃহস্পতিবার অবশ্য মমতার সেই প্রশ্নের কোনও জবাব দেননি শুভেন্দু।
ওই বিষয়ে তৃণমূলের তরফে মামলার চিঠিও পেয়েছেন শুভেন্দু। যার পরে তিনি বুধবার টুইটারে লিখেছিলেন, ‘‘ইয়ে ডর মুঝে অচ্ছা লগা।’’ বৃহস্পতিবার অবশ্য শুভেন্দু বলেছেন, এ ব্যাপারে যা বলার আদালতেই বলবেন তিনি। উল্টে তৃণমূলকে মামলা করার চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছেন, ‘‘আমি আদালতে যাব না। ওরা যাক। তার পর আমি বিএসএনএলকে ওই মামলায় পক্ষ (পার্টি) করতে বলব। ৪ মার্চ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর কল রেকর্ডিং প্রকাশ্যে আনার অনুরোধও করব। তখনই সব জানা যাবে।’’ যার প্রেক্ষিতে শুভেন্দুকে প্রশ্ন করা হয়, তা হলে তিনি বলছেন কল রেকর্ডিং আছে? জবাবে শুভেন্দু বলেন, ‘‘আমি এ সব কিছুই বলছি না।’’