‘অভয়া ক্লিনিক’ করলেন বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারেরা। — নিজস্ব চিত্র।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলন চলছে চিকিৎসকদের। তার পাশাপাশি, রবিবার কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলায় ‘অভয়া ক্লিনিক’ খুলে পরিষেবা দিলেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা। কোথাও আন্দোলনকারীরা পরলেন কালো ব্যাজ। কোথাও প্রেসক্রিপশনে লিখলেন, ‘বিচার চাই’। ক্লিনিকের সঙ্গেই রাজপথে চলল ‘আদালত’। সেই ‘আদালত’-এ নিজেদের মতামত জানালেন সাধারণ মানুষ। সোনারপুর, বারুইপুর, ভাঙড় থেকে আসানসোল— সর্বত্র চলল চিকিৎসকদের সেই কর্মসূচি।
গত ৯ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়েছে। তাঁকে ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগ উঠেছে। তার পর থেকে আন্দোলনে নেমেছেন ওই হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদের পাশে রয়েছেন রাজ্যের অন্য মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তারেরাও। বিচারের দাবিতে তাঁরা একাধিক কর্মসূচির ঘোষণা করেছেন। রবিবার জেলায় জেলায় সকাল ১০টা থেকে ‘অভয়া ক্লিনিক’-এর আয়োজন করা হয়। সেই ‘অভয়া ক্লিনিক’ সংলগ্ন এলাকাতেই ‘আদালত’ বসান তাঁরা। কলকাতায় ঘোষ বাগান এলাকায় ‘আদালত’ বসান আরজি করের আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা। সেখানে অনেক সাধারণ মানুষই অপরাধীর ফাঁসির দাবি তুলেছেন।
সাধারণ মানুষের মতামত জানতে ‘আদালত’ বসানো হয়েছে সোনারপুর, বারুইপুর, ভাঙড়েও। পাশাপাশি চলেছে ‘অভয়া ক্লিনিক’-ও। সোনারপুরের সুভাষ গ্রামে রবিবার সকালে অস্থায়ী ক্লিনিক খুলে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া হয়েছে সাধারণ মানুষকে। আন্দোলনরত চিকিৎসকদের দাবি, তাঁদের এই আন্দোলনের মূল শক্তি জনতা। তাঁদের সমর্থনেই এই আন্দোলন এত বড় হয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ যাতে অসুবিধায় না পড়েন, সে জন্য এই উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা। ‘অভয়া ক্লিনিক’-এর মাধ্যমে চিকিৎসা পরিষেবা পেয়ে খুশি এলাকার বাসিন্দারা।
রবিবার ‘অভয়া ক্লিনিক’ হয়েছে আসানসোলেও। আইএমএ (ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন)-এর আসানসোলের রানিগঞ্জ শাখার দফতরে বসে ক্লিনিক। রবিবার ছুটি থাকা সত্ত্বেও বহু চিকিৎসক এই ক্লিনিকে পরিষেবা দিয়েছেন। প্রেসক্রিপশনে ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’ স্ট্যাম্প দিয়েছেন। সুবিধা পেয়েছেন বহু মানুষ। বিনামূল্যে চিকিৎসা করার পাশাপাশি বিনামূল্যে বেশ কিছু ওষুধও দেওয়া হয় রোগীদের। একই সঙ্গে রোগীদের কাছে ছ’টি প্রশ্ন তুলে ধরে তাঁদের মতামত জানতে চান চিকিৎসকেরা। আইএমএ-র পক্ষ থেকে চৈতালি বসু বলেন, ‘‘কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন ওঠে, তার সঙ্গেই প্রশ্ন ওঠে কী ভাবে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’’
‘অভয়া ক্লিনিক’-এ রোগী দেখেন বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকেরাও। হাসপাতালের আউটডোরের সামনে চেয়ার, টেবিল পেতে পরিষেবা দেওয়া শুরু করেন আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকেরা। রোগীদের হাতে বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধও তুলে দেওয়া হয়। আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসক সুষমা ভক্ত বলেন, ‘‘দিদির বিচারের দাবিতে রবিবার আমরা এই ক্লিনিক শুরু করলাম। প্রাথমিক ভাবে আমরা বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের আউটডোরের সামনে এই পরিষেবা চালু করলেও আগামী দিনে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে এই পরিষেবা দেওয়া হবে।’’
গত ৮ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালে শেষ বার কাজ করেছিলেন মৃত চিকিৎসক। ঠিক এক মাস পর ওই দিনটিকে স্মরণ করে রবিবার হাওড়া জেলা হাসপাতালে ‘অভয়া ক্লিনিক’ খুললেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। কালো ব্যাজ পরে পরিষেবা দিলেন তাঁরা। বিনামূল্যে চিকিৎসা পেলেন সাধারণ মানুষ। চিকিৎসকেরা যে প্যাডে প্রেসক্রিপশন লিখেছেন, তাতে লেখা রয়েছে, ‘আরজি কর: বিচার চাই’।