ফাইল চিত্র।
বাম, কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের জন্য জোটের দরজা খুলে রেখে নিজের নতুন দল ঘোষণা করে দিলেন ফুরফুরা শরিফের পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী। তাঁর দলের নাম হয়েছে ‘ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট’ (আইএসএফ)। সংখ্যালঘু, জনজাতি, দলিত-সহ অনগ্রসর অংশের সমানাধিকার রক্ষা করাই তাদের মূল লক্ষ্য বলে ঘোষণা করেছে আইএসএফ। দলের সভাপতি হয়েছেন শিমুল সোরেন, কার্যকরী কমিটির চেয়ারম্যান নওসাদ সিদ্দিকী।
কলকাতা প্রেস ক্লাবে নতুন দলের নাম ঘোষণা ও পতাকা প্রকাশ করে বৃহস্পতিবার আব্বাস বলেছেন, বিজেপিই এখন ‘বেশি ক্ষতিকারক’ শক্তি। বিজেপি বা আরএসএসের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক মদতে তৃণমূলের ভোট ভাঙার জন্য তাঁরা আলাদা দল গড়লেন, এমন অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন তিনি। বরং, তাঁর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘দল তৈরি হওয়ার আগেই যদি আরএসএস টাকা দিয়ে দেয়, তা হলে তো নিজেদের বড় মাতব্বর ভাবতে হবে! বাংলায় বিজেপিকে নিয়ে আসার দায় তৃণমূলের। আগে তো সেই অপরাধ তাদের স্বীকার করতে হবে!’’বিজেপি এবং তৃণমূলকে নিশানা করার ক্ষেত্রে আব্বাসের সুর বাম ও কংগ্রেসের সঙ্গে মিলে গিয়েছে। সব দলের জন্য আইএসএফের দরজা খোলা থাকার কথা বললেও তৃণমূলকে যে তাঁরা সেই তালিকায় ধরছেন না, তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন আব্বাস। তাঁর কথায়, ‘‘দরজা সকলের জন্য খোলা হলেও সেই দরজা দিয়ে ঢোকার আগে ছাঁকনি তো থাকবে!’’
তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় অবশ্য আব্বাসদের পদক্ষেপে বিজেপির সুবিধাই দেখছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দল কেউ করতেই পারেন। কিন্তু ওঁরা তৃমূলের একটা ভোটও কাটলে সেটা যে বিজেপিকে সাহায্য করা হবে, সেই কথা মনে রাখতে হবে!’’ অন্য দিকে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ তাঁদের রাজনৈতিক ফায়দার অঙ্কে আব্বাসদের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। মগরাহাটে এ দিন বিজেপির সভায় দিলীপবাবু বলেন, ‘‘অন্য রাজ্যগুলিতে মুসলমানদের উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু এ রাজ্যেরমুসলমানদের দিদিভোটার করে রেখেছেন। তাঁদের উন্নয়নকরেননি। এখন আব্বাস সিদ্দিকি, ওয়াইসি আলাদা আলাদা দল করেছে। তাতে দিদির হার্ট বিট বেড়ে যাচ্ছে! কেন? মুসলমান ভোট কি আপনার জমিদারি নাকি? তাদের কি আলাদা দল করার অধিকার নেই?’’ রাজ্যে মাত্র দেড় শতাংশ সংখ্যালঘু মানুষ চাকরি পেয়েছেন বলে দিলীপবাবুর অভিযোগ।
জোটের আলোচনার দরজা খোলা আছে বলে ইঙ্গিত দিয়ে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম এ দিন রামপুরহাটে বলেছেন, ‘‘দলটা আসুক। ব্যক্তি হিসেবে নয়, দলের সঙ্গে দল হিসেবেই আলোচনা করব।’’
দল ঘোষণার পরে এ দিন রাতেই বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি মাদ্রাসা শিক্ষিকাদের দেখতে গিয়েছিলেন আব্বাস। অনশন করতে গিয়ে অসুস্থ হয়েছেন ওই শিক্ষিকারা। কিন্তু ‘ফিমেল ওয়ার্ড’-এ তাঁর যাওয়ার অনুমতি নেই, এই কারণ দেখিয়ে আব্বাসকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয়নিবলে অভিযোগ। হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়েই সংখ্যালঘুদের দাবি-দাওয়ার প্রতি রাজ্য সরকারের উদাসীনতাকে এক হাত নিয়েছেন আব্বাস।