১০০ দিনের কাজ

মমতার আপত্তি সত্ত্বেও আবশ্যিক হচ্ছে আধার

একশো দিনের কাজ প্রকল্পে মজুরি দেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে মাত্র দশ দিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কড়া চিঠি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিঠিতে মমতার মূল বক্তব্য ছিল, রাজ্যকে এড়িয়ে কেন সরাসরি শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মজুরির টাকা পাঠাবে কেন্দ্র?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৭
Share:

একশো দিনের কাজ প্রকল্পে মজুরি দেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে মাত্র দশ দিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কড়া চিঠি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিঠিতে মমতার মূল বক্তব্য ছিল, রাজ্যকে এড়িয়ে কেন সরাসরি শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মজুরির টাকা পাঠাবে কেন্দ্র? এতে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর শর্ত লঙ্ঘন হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি।

Advertisement

কিন্তু নবান্নের আপত্তি মানতে চাইল না মোদী সরকার। বরং কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন সচিব অমরজিৎ সিনহা রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে ফোন করে জানিয়ে দিলেন, মজুরি দেওয়ার পদ্ধতি অপরিবর্তিতই থাকবে। এবং তা যাতে আরও সুষ্ঠু ভাবে হয় সে জন্য সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে শ্রমিকদের আধার কার্ড থাকাও এ বার বাধ্যতামূলক করা হবে। সুতরাং রাজ্য সরকার যেন তার প্রস্তুতি শুরু করে দেয়।

প্রশ্ন হল, একশো দিনের কাজ প্রকল্পে কবে থেকে আধার কার্ড থাকা বাধ্যতামূলক হবে? জবাবে গ্রামোন্নয়ন দফতরের এক কর্তা জানান, সুব্রতবাবুকে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন
সচিব জানিয়েছেন, দু-এক দিনের মধ্যে রাজ্যকে চিঠি পাঠিয়ে তা জানিয়ে দেবে কেন্দ্র।

Advertisement

কেন্দ্রের এই ফরমান নিয়ে জানতে চাওয়া হলে সুব্রতবাবু কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন সচিবের সঙ্গে কথোপকথনের কথা স্বীকার করে নেন। তবে বলেন,‘‘ওঁরা আগে চিঠি পাঠাক। দেখি কী বলতে চেয়েছে। তার পরই রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে।’’

কেন্দ্র যে মজুরি দেওয়ার পদ্ধতি বদল করবে না তা কদিন আগে আনন্দবাজারকে জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন সচিব। তাঁর বক্তব্য ছিল, নতুন নিয়ম অনুযায়ী কোনও শ্রমিক কাজ করার ১৫ দিনের মধ্যে মজুরির টাকা তাঁর হাতে তুলে দিতে কেন্দ্র দায়বদ্ধ। তাই সময় বাঁচাতেই সরাসরি তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। নইলে রাজ্যের হাত ঘুরে শ্রমিকদের কাছে টাকা পৌঁছতে অযথা দেরি হয়। তা ছাড়া সেদিন তিনি এ-ও জানিয়েছিলেন, একশো দিনের কাজ প্রকল্পে শ্রমিকদের আধার কার্ড বাধ্যতামূলক করার পথেও অনেকটা এগিয়েছে কেন্দ্র। প্রকল্পের আওতায় দেশে যত শ্রমিক কাজ করেন তার ৭৭ শতাংশ তথা সাড়ে ৮ কোটি শ্রমিককে এখন আধার কার্ডের ভিত্তিতে মজুরি দেওয়া হয়। শীঘ্রই সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে আধার কার্ড পুরোপুরি বাধ্যতামূলক করা হবে।

প্রসঙ্গত, আধার কার্ড বাধ্যতামূলক করার পিছনে একটা বড় কারণ হল, ভুয়ো শ্রমিকের তালিকা তৈরি করে যেন প্রকল্পের টাকা অপচয় বা চুরি না হয়। যিনি শ্রম দিয়েছেন, তিনিই যেন মজুরি পান।

এখন প্রশ্ন হল, এ ক্ষেত্রে নবান্নের সমস্যা কোথায়? রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, বাংলায় একশো দিনের কাজ প্রকল্পে যে মজুররা কাজ করেন, তাঁদের মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশেরই আধার কার্ড রয়েছে। ফলে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের ফলে ওই প্রকল্প রূপায়ণে রাজ্যের খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সমস্যা হতে পারে অর্থ দফতরের। কারণ, প্রকল্প খাতে কেন্দ্রের থেকে রাজ্যের অর্থ দফতরের কাছে টাকা এলে ওই টাকা সাময়িক ভাবে অন্য খাতে ব্যবহারের সুযোগ পেয়ে যায় রাজ্য। আধার কার্ডের ভিত্তিতে সরাসরি শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠালে সেই সুযোগ হারাবে রাজ্য সরকার।

তবে প্রকল্প খাতে কেন্দ্রের পাঠানো কিছু টাকা এর পরেও অর্থ দফতরের হাতে আসবে। শ্রমিকদের মজুরি ষোল আনা দেওয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে উপাদান ও সরঞ্জাম বাবদ খরচের ৭৫ শতাংশ কেন্দ্র দেয়। তাও নয় নয় করে কম টাকা নয়। আধার কার্ড বাধ্যতামূলক হয়ে গেলে বছরে একশ দিনের কাজের প্রকল্পে ওই সাত-আটশ কোটি টাকাই শুধু আসবে অর্থ দফতরের কাছে। তবে সেই টাকাও বেশি দিন আটকে রাখার সুযোগ থাকবে না। তা হলে আবার জেলায় জেলায় প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যাবে। শ্রমিকরা কাজ পাবেন না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement