সমাজবিদ্যার ছাত্রী প্রাণিয়া
বয়স ২০ বছর। দু’বছর আগেই ভোটাধিকার পেয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এখনও ভোটার কার্ড করাতে পারেননি। প্রশাসনের দফতরে দফতরে কম ঘোরেননি। ফর্মটাই হাতে পাননি এখনও। উল্টে পেয়েছেন লাঞ্ছনা। বীতশ্রদ্ধ হয়ে ফর্ম তুলতে যাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছিলেন বুনিয়াদপুরের বাসিন্দা, সমাজবিদ্যার ছাত্রী প্রাণিয়া। প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘রূপান্তরকারী বলেই কি আমায় ফর্ম দেওয়া যাবে না? এটাই কি আমার অপরাধ?’’
দু’বছরে বংশীহারি ব্লক অফিস থেকে গঙ্গারামপুরে মহকুমা দফতরে ঘুরেছেন প্রাণিয়া। বলছিলেন, ‘‘কেউ ফর্ম অবধি দেয়নি। উল্টে বলেছে, রূপান্তরকামী বলে আমায় ফর্ম দেওয়া যাবে না।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘শেষে ৫ হাজার টাকা অবধি চাওয়া হয়েছে। রাগে, দুঃখে আমি ফর্ম তুলতে যাওয়াই ছেড়ে দিয়েছি।’’ শেষ অবধি গঙ্গারামপুরের মহকুমাশাসক দেবাঞ্জন রায়ের কাছে পৌঁছয় বিষয়টি। তিনি বলেন, ‘‘প্রাণিয়াকে আমি বলেছি, ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য সব রকম সহযোগিতা করা হবে। তবে ঘুষের বিষয়টি প্রাণিয়া আমায় জানায়নি।’’
একই সঙ্গে দেবাঞ্জনের বক্তব্য, ‘‘ওঁদের মতো মানুষরা যাতে ভোটার তালিকায় নাম তুলতে এগিয়ে আসেন, তার প্রচারে আমরা প্রাণিয়াকে সামনে রাখতে চাইছি। ’’
দু’বছর পরে ন্যায় পাওয়ার আশ্বাসে খুশি প্রাণিয়া। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি চাকরির আবেদনে পুরুষ ও মহিলা এই দু’টি ‘অপশন’ থাকে। রূপান্তরকামীদের জন্য কোনও ‘অপশন’ নেই। তাই আমাদের চাকরির আবেদন করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ভোটার তালিকায় রূপান্তরকামীদের নাম সহজে তোলার ব্যবস্থার পাশাপাশি চাকরির আবেদনপত্রেও যাতে আমাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়, সেই আবেদনও করব।’’
তাঁর আশা, এক দিন এই সমস্যাগুলি সরে যাবে। যে হেনস্থা তিনি সয়েছেন, তা আর পরের প্রজন্মকে সইতে হবে না।