ফাইল চিত্র।
ওড়িশার উৎকল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োটেকনোলজি বা জৈবপ্রযুক্তিতে এমএসসি করে ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থায় চাকরির স্বপ্ন দেখেছিলেন মেদিনীপুরের যুবক। কিন্তু বাংলায় তেমন কাজ জোটেনি। বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদে ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থায় চাকরির সুযোগ থাকলেও করোনা আবহে সেখানে যাওয়ার সুযোগ মিলছে না। তাই কার্যত বাধ্য হয়েই নীলরতন সরকার (এনআরএস) মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবরেটরি অ্যাটেন্ড্যান্ট (ডোম)-এর পদে চাকরির জন্য আবেদন করেছেন ওই যুবক। লিখিত পরীক্ষায় পাশ করে প্র্যাক্টিক্যাল ও ইন্টারভিউয়ে বসার সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার ইন্টারভিউয়ে ঢোকার আগে হাসপাতালে বসে ওই কর্মপ্রার্থী বললেন, ‘‘এই কাজের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা চেয়েছিল অষ্টম শ্রেণি পাশ। সুযোগ পেলে চাকরিটা নিয়ে নেব। চাকরিটা পেলে কী কাজ করতে হবে, জানি। তবে কোনও কাজই ছোট নয়। ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থায় চাকরির সুযোগ এই রাজ্যে বিশেষ নেই। ভুবনেশ্বর আইআইটি-র ল্যাবরেটরিতে কিছু দিন অস্থায়ী ভাবে কাজ করেছিলাম। কিন্তু করোনার জন্য তো এখন সেই কাজও হচ্ছে না।’’
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই যুবক জানান, বাড়িতে না-জানিয়েই ডোমের পদে চাকরির জন্য আবেদন করেছেন তিনি। ‘‘বায়োটেকনোলজিতে এমএসসি করে হাসপাতালে ডোমের চাকরির জন্য আবেদন করেছি, এটা জানাতে কুণ্ঠা তো হচ্ছেই। তাই নামটা বলতে চাইছি না,’’ বলেন ওই প্রার্থী।
এ দিন প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা ছিল সকাল ৯টায়। বেলা ১টায় ইন্টারভিউ। ডাকের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘাটাল থেকে আসা প্রার্থী রিঙ্কু জানা জানালেন, তিনি এডুকেশনে এমএ। এই পদে চাকরি পেলে কী কাজ করতে হবে, সেই বিষয়ে তিনি সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। কিন্তু
চাকরিটা তাঁর খুবই দরকার। রিঙ্কু বলেন, ‘‘লিখিত পরীক্ষায় পাশ করে ৩৭ জন প্র্যাক্টিক্যাল ও ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাক পেয়েছেন। এসেছেন ৩৬ জন। প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা ভালই হয়েছে। মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেখিয়ে তার নাম ও কিছু তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছিল।’’ এর জন্য গুগ্ল দেখে প্রস্তুতি চালিয়েছিলেন তিনি।
বাংলায় এমএ পাশ মনোজ পাল ইন্টারভিউয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। মনোজ বলেন, ‘‘শিক্ষকতার চাকরির পরীক্ষায় দেব। বিএড করা হয়নি। ওটা করতে হবে। তার আগে এই ডোমের পদে লোক নিচ্ছে দেখে আবেদন করেছি। লিখিত পরীক্ষায় উতরে গিয়ে এতটা এসেছি। দেখা যাক, কী হয়।’’
মনোজদের সঙ্গে মৌখিক পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছিলেন সিউড়ি সদর হাসপাতালে ডোম-পদে কর্মরত প্রদীপ কাহার। ‘‘আমি মাধ্যমিক পাশ। সিউড়ি সদর হাসপাতালে ডোমের কাজের অভিজ্ঞতা আছে ১২ বছরের। নীলরতনে এই চাকরিটা পেলে বেতন অনেক বেশি পাব,’’ বলেন প্রদীপ।
মোট ছ’জনকে নেওয়া হবে। স্বাস্থ্য দফতরের বক্তব্য, অভিজ্ঞতার নিরিখে প্রদীপেরা হয়তো কিছুটা এগিয়ে থাকবেন। বাকিদের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে কি না, সেটাই এখন দেখার।