সরস্বতী মূর্তি তৈরি করছে ধনজিৎ।
সকালে বইয়ের পাতা একটু উল্টে-পাল্টে দেখেছে ধনজিৎ। তার পর টুল নিয়ে বসে পড়েছে মূর্তি তৈরি করতে। কখনও জল-মাটি মেখে খড়ের তৈরি মূর্তির কাঠামোয় প্রলেপ দিচ্ছে। কখনও প্রতিমার ‘মুখাবয়ব’ রঙ করছে। দু’দিন পরে সরস্বতী পুজো। সরস্বতী মূর্তিগুলি সারিবদ্ধ ভাবে সাজানো ঘরে। তার বেশ কয়েকটি নিজের হাতেই গড়েছে ধনজিৎ। এখনও নিজে হাতেই অলঙ্কার পরিয়ে দিচ্ছে দেবীর মূর্তিতে। কাজের সময় যেন চোখের পাতা পড়ছে না একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রের। তার কথায়, “বৃহস্পতিবার স্কুল খুলবে শুনেই আনন্দ হচ্ছে। কত দিন স্কুলে যাইনি!’’
কোচবিহার শহর থেকে দশ কিলোমিটার দূরে ঘুঘুমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের তোর্সার চর এলাকায় ধনজিতদের বাড়ি। তাঁর বাবা নন্দ বর্মণ কৃষি কাজের সঙ্গে মূর্তিও গড়েন। নন্দর দুই ছেলেমেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছেলে এখনও পড়াশোনা করছে। ছেলে যাতে অন্তত স্নাতকস্তর পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পারে, সেই চেষ্টাও করছেন তিনি। স্কুলের পাশাপাশি গৃহশিক্ষকও রেখেছেন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় কোভিড। প্রথম লকডাউনে বন্ধ হয়ে যায় স্কুল, গৃহশিক্ষকদের পড়ানোও। তখন নবম শ্রেণির ছাত্র ধনজিৎ। সে বলে, ‘‘কিছু দিন বাড়িতে বসে থাকার পরে আর ভাল লাগছিল না। পড়াশোনা নিয়েও অনেক সমস্যা হচ্ছিল। তার পরেই বাবার কাছে মূর্তি তৈরি করতে শিখতে শুরু করি।’’
ছোট থেকেই বাবার মূর্তি তৈরি খুঁটিয়ে দেখত ধনজিৎ। তাই কাজ শিখতে তার খুব বেশি সময় লাগেনি। এর মধ্যেই সে মাধ্যমিক পাশ করে একাদশ শ্রেণিতে পৌঁছেছে। নন্দ বলেন, “ছেলে পড়াশোনা করতে ভালবাসে, আবার মূর্তি তৈরি করতেও। এ বারে নিজেই সরস্বতী মূর্তি তৈরি করেছে। আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, বাবা স্কুলে সরস্বতী পুজো হবে না? খুব খুশি হয়েছি এই সময় স্কুলে খুলে যাওয়ায়।” তিনি জানান, নিজের পড়াশোনার খরচ এখন নিজেই রোজগার করতে চায় সে। এত সব কথার মধ্যে ফের আপন মনে কাজ শুরু করে ধনজিৎ। কুয়াশাচ্ছন্ন বিকেল শেষে তখন সন্ধ্যে নামছে