প্রতীকী ছবি।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে অল্প দিনের মধ্যে দ্রুত রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ শরীরে সাইটোকাইন ঝড়। কোভিডের প্রথম ঢেউ থেকেই সাইটোকাইন ঝড় এবং তাঁর চিকিৎসা নিয়ে সতর্ক চিকিত্সকরা। রোগীর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া হোক বা প্রস্রাব কমে যাওয়া। টানা জ্বর থাকা বা কাশি না কমা সব কিছুই সাইটোকাইন ঝড়ের পূর্বাভাস বয়ে আনতে পারে। কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর কেউ বাড়িতেই সুস্থ হয়ে যান আবার কাউকে হাসপাতালে লড়াই চালাতে হয়। নির্ভর করছে রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর। চিকিত্সকদের মতে শরীরে ভাইরাস আক্রমণ হলে তা থেকে শরীরকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসে অ্যান্টিবডি। লড়াই চালায় শত্রু ভাইরাসের সঙ্গে। কিন্তু কখনও কখনও শত্রু ছাড়াও শরীরের ভাল, সুস্থ কোষকেও আক্রমণ করতে থাকে, তখনই শুরু হয় সাইটোকাইন স্টর্ম।
সাইটোকাইন ঝড় বুঝতে রক্তের বিশেষ কিছু প্রোটিন এবং উপাদানের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা হয়। মূলত আইএল ৬ বা ইন্টারলুকিন সিক্সের মাত্রা দেখে সাইটোকাইনের অবস্থা বোঝেন চিকিৎসকরা। তবে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজি এবং বেলেঘাটা আই ডির যৌথ গবেষণায় দেখা গিয়েছে শুধু আইএল সিক্স নয় এনসিপি ওয়ান, এনসিপি ৩ প্রোটিনও সাইটোকাইনের জন্য সমান দায়ী হতে পারে। এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত বিজ্ঞানী, ইমিউনোলজিস্ট দীপ্যমাণ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আইএল৬ ছাড়াও শরীরের অন্য প্রোটিন বেড়েও সাইটোকাইন ঝড় তুলতে পারে। তাই আইএল৬ কম থাকা সত্ত্বেও সাইটোকান স্টর্ম দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে অন্য প্রোটিনের উপরও নজর দেওয়া প্রয়োজন।’’
করোনা চিকিৎসার অন্যতম হাসপাতাল বেলেঘাটা আই ডির বক্ষ বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক কৌশিক চৌধুরী বলেন, ‘‘সাইটোকাইন স্টর্ম মূলত কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার ৭ থেকে ১০ দিন পর দেখা যায়।’’ রোগীর অবস্থা বুঝে টোসিলিজুমাব, স্টেরয়েড দিয়ে দ্রুত রোগীর চিকিত্সা শুরু করা হয়। চিকিৎসক কৌশিক চৌধুরী কথায়, ‘‘কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় দ্বিতীয় ঢেউয়ে সাইটোকাইন স্টর্মের বাড়বাড়ন্ত বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। পাশাপাশি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার অল্পদিনের মধ্যেও সাইটোকাইন স্টর্মও দেখা গিয়েছে রোগীর মধ্যে।’’ একজন রোগীর শরীরে একই সময় একাধিক সাইটোকাইন ঝড় চলতে পারে।
দীপ্যমাণের মতে, ‘‘ আইএল৬ বেড়ে সাইটোকাইন স্টর্মের চিকিৎসা টোসিলিজুমাব দিয়ে করা যেতে পারে। তবে অন্য প্রোটিন বাড়লে স্টেরয়েডের মাত্রার হেরফের করে চিকিৎসা চালাতে হবে।’’