অনুব্রত মণ্ডল। ফাইল চিত্র।
প্রায় সাত মাস ধরে আসানসোলের জেলে বন্দি থাকলেও, সুযোগ পেলেই আদালত চত্বরে দলের নেতা-কর্মীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশ দিতেন অনুব্রত মণ্ডল। তবে শনিবার কলকাতা হাই কোর্ট তাঁকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার আবেদনে সায় দিয়ে দেওয়ায়, এর পরে যে আর সে সুযোগ মিলবে না, তা স্পষ্ট বীরভূমের তৃণমূল নেতাদের কাছে। দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত ওরফে কেষ্টকে ছাড়াই বীরভূমে দলের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে সাংগঠনিক কিছু রদবদল করেছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তা সত্ত্বেও, পঞ্চায়েত ভোটের আগে জেলায় দলের অন্দরে সমন্বয়ের অভাব বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন তৃণমূলের একাংশ।
অনুব্রত-হীন বীরভূমে দলের সংগঠন তিনি নিজে দেখবেন বলে জানিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানুয়ারিতে জেলায় দলের কোর কমিটি গড়ে দেন তিনি। সে কমিটিতে শামিল করা হয় এক সময়ে অনুব্রত-বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা বলে পরিচিত কাজল শেখকে। তৃণমূল সূত্রের খবর, কোর কমিটির সদস্যদের একটি অংশ কেষ্ট-ঘনিষ্ঠ। আর একটি অংশ অনুব্রত-বিরোধী। কর্মীদের অনেকের দাবি, কোর কমিটিতে তালমিলের অভাবে চিন্তা বাড়ছে।
হাই কোর্টের রায়ে অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে ইডি-র জেরা করায় বাধা কেটে যাওয়ার পরে কাজল দলের জেলা সভাপতির পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘আমারও চাই, (অনুব্রতকে) জেরা করা হোক, আসল সত্য উদ্ঘাটিত হোক। তবে অল্প দিনের মধ্যে অনুব্রত মণ্ডল বেকসুর খালাস হয়ে আসবেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনও অনুব্রতই করবেন।’’ শনিবার এ কথা বললেও, গত মাসখানেকে কাজল নানা বিতর্কিত মন্তব্য করে বিড়ম্বনা বাড়িয়েছেন বলে অভিযোগ দলেরই একাংশের। এমনকি, অনুব্রত আসানসোল জেলে থেকে দল চালাচ্ছেন, এ ধরনের অভিযোগও তুলেছিলেন তিনি।
ক’দিন আগে বোলপুরের রূপপুরে কাজল অনুগামী হিসেবে পরিচিত দু’জনকে মারধরের অভিযোগ ওঠে কেষ্ট-অনুগামীদের বিরুদ্ধে। এ সব সত্ত্বেও কাজলের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি জেলা তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি। এ নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে নারাজ। জেলা তৃণমূলের একটি পক্ষের দাবি, কাজলের মাথায় শীর্ষ মহলের ‘হাত’ রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, পঞ্চায়েত ভোট যত এগিয়ে আসবে, কাজল ও কেষ্টর গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত আরও বাড়বে, আশঙ্কা দানা বাঁধছে তৃণমূলের অন্দরেই। কাজলের বক্তব্য, ‘‘কোথাও কোনও সংঘাতের সম্ভাবনা নেই। বরং যা সংঘাত ছিল, সব মিটিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কোথাও বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু ঘটলে প্রশাসন দেখবে। দলগত বিষয় হলে আমরা দেখব।’’ তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কাজল শেখের কোর কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির পরে বিক্ষিপ্ত ভাবে কোথাও কোথাও অসন্তোষ হচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমে দেখেছি। সেটা বাড়ার আশঙ্কা নেই। জেলা নেতৃত্ব মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছেন। রাজ্য নেতৃত্বেরও সব নজরে রয়েছে। তাঁরাও উপযুক্ত পদক্ষেপ করবেন।’’