রাজীব কুমার। —ফাইল চিত্র।
সন্দেশখালি-কাণ্ডের পরে ক্রমশ চাপ বাড়ছে রাজ্য প্রশাসনের উপরে।
লোকসভার স্বাধিকার কমিটি প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের তলব করার পরে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। সেই ডাকে সংশ্লিষ্টরা সাড়া দেবেন কি না, নবান্ন থেকে তার স্পষ্ট কোনও বার্তা পাওয়া না গেলেও বিশ্লেষকদের অনেকের মতে, এই ডাক এড়ানো কার্যত অসম্ভব। বিশেষত, ডাক পাওয়া শীর্ষ আধিকারিকেরা সর্বভারতীয় চাকরিতে (আইএএস বা আইপিএস) থাকার কারণে ‘রাশ’ কিছুটা হলেও থেকে যায় কেন্দ্রের হাতে। ফলে অন্যথা হলে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
প্রবীণ আধিকারিকদের অনেকেই জানাচ্ছেন, এ ভাবে ডেকে পাঠানো অভূতপূর্ব। অতীতে এমন নজিরের ব্যাপারে মনে করতে পারছেন না তাঁরা। তবে তাঁদের বক্তব্য, লোকসভার স্বাধিকার কমিটির ক্ষমতা অসীম। তারা শাস্তির সুপারিশও করতে পারে, যার গুরুত্ব কার্যত সর্বোচ্চ।
প্রসঙ্গত, ১৯ ফেব্রুয়ারি স্বাধিকার কমিটি ডেকে পাঠিয়েছে রাজ্যের মুখ্যসচিব ভগবতীপ্রসাদ গোপালিকা, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী, পুলিশ সুপার (বসিরহাট) হোসেন মেহেদি রহমান এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পার্থ ঘোষকে। সংশ্লিষ্টদের পাঠানো বার্তায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককেও বিষয়টি জানানোর উল্লেখ রেখেছে লোকসভার সচিবালয়। বিষয়টি নিয়ে ‘প্রোটোকল’ ভঙ্গের অভিযোগ উঠছে, তা-ও স্পষ্ট ওই বার্তায়। সেই কারণেই হাজিরা দেওয়া আবশ্যিক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের একাংশ।
প্রবীণ আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, সন্দেশখালি কাণ্ড এবং তার পরবর্তী পরিস্থিতি সামলাতে প্রশাসনিক ভূমিকা ক্রমশ আতশকাচের তলায় চলে আসছে। প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। এত দিন শুধুমাত্র পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও, সাধারণ প্রশাসনিক কর্তারাও যে সেই দায় এড়াতে পারবেন না, দিল্লির ডাকে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া লোকসভা ভোট ঘোষণা হওয়ার পরে এই প্রশাসনকে দিয়েই ভোট পরিচালনা করতে হবে জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে। ফলে এখনকার পরিস্থিতিতে প্রশাসনের ভূমিকা কমিশনকে কতটা আশ্বস্ত করবে, তা নিয়ে দ্বিধা-আশঙ্কা ঘোরাফেরা করছে প্রশাসনের অন্দরে। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করিয়ে দিচ্ছে, অতীতের ভোটে এ রাজ্যের পুলিশ এবং প্রশাসনিক শীর্ষ কর্তাদের একাংশকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার নজিরও রেখেছিল কমিশন। ফলে আরও তীব্র হচ্ছে জল্পনা।
গত ৫ জানুয়ারি থেকে প্রতি সপ্তাহের আইনশৃঙ্খলা-রিপোর্ট প্রতিটি জেলাকে পাঠাতে হচ্ছে দিল্লির নির্বাচন সদনে। ভোট-বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে, সেই রিপোর্টের মাধ্যমে কমিশন বোঝার চেষ্টা করে, যে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কতটা সক্রিয়।
বিরোধীরা সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে প্রশাসনিক ভূমিকাকে যে ভাবে কাঠগড়ায় তুলছেন, তাতে সেই বার্তা কমিশন-কর্তাদের কাছে পৌঁছবে বলেই অনুমান করা হচ্ছে। কারণ,
৪ মার্চ রাজ্যে আসছে কমিশনের ফুল বেঞ্চ। ৫ তারিখ জেলাশাসক, পুলিশ সুপারদের আগে তাঁরা বৈঠক করবেন স্বীকৃত সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে। ৬ মার্চ প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে কমিশন-কর্তাদের। তার আগে এই পরিস্থিতি যে মোটেই সুখকর নয়, তা মানছেন অভিজ্ঞ আধিকারিকদের অনেকেই।