দিঘার এই হোটেলেরই মালিক প্রসন্ন রায় বলে জানা যাচ্ছে (বাঁ দিকে)। গরুমারা জঙ্গল লাগোয়া লাটাগুড়ির সেই রিসর্ট। নিজস্ব চিত্র।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত ‘মিডলম্যান’ প্রসন্ন রায়ের একটি হোটেলের হদিশ মিলল নিউ দিঘায়। ‘দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ’-এর (ডিএসডিএ) নথি অনুযায়ী, বছর তিনেক আগে ওই বিলাসবহুল হোটেলের মালিকানা জনৈক পি কে রায়ের হাতে যায়। হোটেলের ম্যানেজারের দাবি, এই পি কে রায়ই আদতে প্রসন্নকুমার রায়! উত্তরবঙ্গেও প্রসন্নর একাধিক রিসর্ট রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ প্রসন্ন এক সময় টালির বাড়িতে দিন কাটিয়েছেন। তার পরে উত্থান হয়েছে রকেট গতিতে। সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতারের পরে নিউ টাউনে প্রসন্নের একাধিক ফ্ল্যাট, হোটেল ব্যবসা এবং সিনেমা প্রযোজনার তথ্য সামনে এসেছে। এই আবহেই নিউ দিঘার সন্ধ্যা রোডে ‘হোটেল মিলি’র কর্মীরাও জানাচ্ছেন, সেটির মালিক প্রসন্নই।
দিঘা স্টেশন থেকে কয়েক মিনিট হাঁটলেই ‘হোটেল মিলি’। বছর ছয়েক আগে পাঁচতলা ঝাঁ-চকচকে হোটেলটি মাথা তোলে। সব ঘর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। রয়েছে লিফট। দু’জন থাকার মতো ঘরে এক রাতের ভাড়া ৩৩৬০ টাকা। ছুটি বা সপ্তাহান্তে তা আরও বাড়ে। আগে নাম ছিল ‘হোটেল রুবিনা’। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে পাল্টে ‘হোটেল মিলি’ হয়। স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ীরা জানান, প্রসন্ন ওই বছরই হোটেলটি ১১ কোটি টাকায় কেনেন। ডিএসডিএ-র রেজিস্টারেও ‘এসডিডি’ সংস্থা পরিচালিত হোটেলের মালিকের নাম রয়েছে পি কে রায়। তবে এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি ডিএসডিএ-র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক মানসকুমার মণ্ডল।
শনিবার সকালে হোটেলে ঢুকতেই ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে বেণু নামে এক ব্যক্তি জানালেন, মালিকের নাম প্রসন্ন রায়। তবে তিনি তাঁকে কখনও দেখেননি। বিকেলে ম্যানেজার হিসাবে পরিচয় দিলেন শিশিরকুমার দাস নামে আর এক কর্মী। মাস ছয়েক হল তিনি কাজে যোগ দিয়েছেন। শিশির বললেন, ‘‘হোটেলের মালিক বা সংস্থার আধিকারিকেরা কখনও এখানে আসেননি। কোনও সমস্যা হলে আমাদের সল্টলেকের অফিসে গিয়ে কথা বলতে হত।’’
উত্তরবঙ্গেও আলিপুরদুয়ারের চিলাপাতায় একটি রিসর্ট বছর কয়েক আগে প্রসন্ন কেনেন বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি। সেখানকার ম্যানেজার জানান, চার বছর ধরে রিসর্টের ট্রেড লাইসেন্সে প্রসন্ন রায়ের নাম রয়েছে।
জলপাইগুড়ির আরও দু’টি রিসর্ট ও দু’টি চা বাগানের সঙ্গে নাম জড়িয়েছে প্রসন্নের। রিসর্ট ও বাগানের কর্মীদের দাবি, ‘মালিক’ বলে প্রসন্নকেই জানতেন। জলপাইগুড়ির রিসর্ট দু’টি রয়েছে লাটাগুড়ি ও মূর্তিতে। দু’টি চা বাগানের আবার প্রতিটিতেই দু’টি করে ডিভিশন বাগান রয়েছে। সেগুলি হল, মেটেলি থানার সামসিং এবং তার ডিভিশন বাগান ইয়ংটং আর নাগরাকাটা থানার বামনডাঙা ও তার ডিভিশন বাগান টন্ডু। সূত্রের খবর, এই চা বাগানগুলির ডিরেক্টরস্ বাংলোয় মাঝেমধ্যেই এসে থাকতেন প্রসন্ন। সমাজ মাধ্যমে বাগান ও রিসর্টগুলির ছবি দিয়ে প্রচারও চালাতেন।
সমাজ মাধ্যমে কেউ প্রচার চালালেই, তাঁকে মালিক মেনে নেওয়ার কারণ নেই। তবে মেটেলি ও মালবাজারের বিএলএলআরও দফতর সূত্রের দাবি, দু’টি রিসর্টের রেজিস্ট্রেশন একটি বেসরকারি সংস্থা নামে। সংস্থার ওয়েবসাইটে ডিরেক্টর হিসাবে প্রসন্ন রায়েরই নাম রয়েছে।