প্রকল্পের চেহারা যাই হোক, কৃষিজমির চরিত্র যেমন খুশি বদলের ঘোর বিরোধী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি চান, জেলা নয়, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিক নবান্ন। তাঁর সেই ভাবনায় সিলমোহর পড়ল শুক্রবার। এ দিন রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে ঠিক হয়েছে, রাজ্যের যে কোনও প্রান্তে এক লপ্তে বেশি পরিমাণ কৃষিজমির চরিত্র বদল করতে হলে নবান্নের অনুমোদন লাগবে। এ জন্য একটি নতুন মন্ত্রিগোষ্ঠী তৈরি করা হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, দিন কয়েকের মধ্যেই এ ব্যাপারে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে যাবে।
নবান্নের একাংশের ব্যাখ্যা, শিল্প, পরিকাঠামো অথবা পরিষেবা সংক্রান্ত যে কোনও ক্ষেত্রে প্রকল্প তৈরির জন্য পশ্চিমবঙ্গে মূলত কৃষিজমিই ভরসা। অথচ কৃষিজমি নেওয়ার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী বরাবরই স্পর্শকাতর। তাই ভাঙড়ের ঘটনার প্রেক্ষিতে কৃষি জমি নিয়ে আরও কড়া অবস্থান নিয়েছে সরকার। ভাঙড়ে গোলমালের প্রেক্ষিতে ভূমি দফতরের কাছে রিপোর্ট তলব করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ভূমি দফতর জানিয়েছে, ওই তল্লাটে কয়েকশো একর কৃষি জমি হাতবদল হয়ে গিয়েছে। এবং তিন-চারটি আবাসন নির্মাতা সংস্থার হাতেই তা রয়েছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, তলায় তলায় বেশ কিছু জমি কৃষি থেকে বাস্তুতে রূপান্তরিত হয়েছে। কিন্তু বহু জমির চরিত্র বদল এখনও আটকে রয়েছে। এই ঘটনা সামনে আসার পরেই মুখ্যমন্ত্রী সারা রাজ্যে কৃষি জমির চরিত্র বদল নিয়ে নতুন করে পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নেন।
ভূমি দফতর জানিয়েছে, এখন ব্লক স্তরের ভূমি আধিকারিকেরা আবেদনের ভিত্তিতে ৮ ডেসিমেল পর্যন্ত কৃষি জমির চরিত্র বদল করতে পারেন। আর জেলা ভূমি আধিকারিকেরা আবেদনের ভিত্তিতে যে কোনও পরিমাণ জমির চরিত্র বদল করতে সক্ষম। তবে কোথাও কৃষি জমির চরিত্র বদলের পরেও যদি তাতে সরকারের বিশেষ অনুমোদন লাগে, তা হলে তা খতিয়ে দেখার কথা ভূমি দফতরের।
ভূমি কর্তাদের একাংশ জানান, অনেক সময় জমির চরিত্র বদলে সরকারি অনুমতি না নিয়েই সেখানে কোনও নির্মাণ হয়ে যায়। পরে অনুমোদনের আবেদন আসে। একমাত্র এমন ক্ষেত্রেই (পোষ্ট ফ্যাক্টো) জেলাশাসক আবেদনপত্রটি ভূমি দফতরে পাঠাতেন। কিন্তু এ বার থেকে যে কোনও জমির চরিত্র বদলের ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রিগোষ্ঠী। তবে জেলা স্তরের আধিকারিকদের সামান্য পরিমাণ জমির চরিত্র বদলের ক্ষমতা দেওয়া হবে।
নবান্নের শীর্ষস্তরের খবর, রাজ্যে জমির চরিত্র বদল বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট নীতি নেওয়া হচ্ছে। তাতে সব জমিরই চরিত্র বদলের কথা বলা হবে। কৃষি জমির চরিত্র বদল অত্যন্ত স্পর্শকাতর বলে সরকার এ নিয়ে ধীরে চলার পক্ষে। কিন্তু একলপ্তে ন্যূনতম কত পরিমাণ জমি হলে তা মন্ত্রিগোষ্ঠীর অনুমোদনের জন্য আসবে অথবা সর্বোচ্চ কত পরিমাণ জমির চরিত্র বদলের অনুমতি দিতে পারবেন জেলা স্তরের আধিকারিক — তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান নবান্নের এক শীর্ষকর্তা। তাঁর কথায়, ‘‘সবে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর পর খুঁটিনাটি বিষয়গুলি ঠিক করা হবে।’’
জমি নিয়ে এটাই মমতা সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত নয়। প্রশাসনের কর্তারা জানান, এখন সিলিংয়ের অতিরিক্ত (প্রায় ২৪ একর) জমি রাখলে ভূমি আইনের ১৪ওয়াই ধারায় তার ছাড়পত্র দেওয়ার সুপারিশ করে বিশেষ মন্ত্রিগোষ্ঠী। সেই মতো মন্ত্রিসভা সিলিংয়ের বেশি জমি রাখার অনুমতি দেয়। একই ভাবে কৃষি জমির চরিত্র বদলের ক্ষেত্রেও নবান্ন তার নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার করতে চাইছে।