(বাঁ দিকে) মুহাম্মদ ইউনূস এবং আসফাক হোসেন। —ফাইল চিত্র
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে শীঘ্রই দায়িত্ব গ্রহণ করতে চলেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর আত্মীয়ের খোঁজ মিলল পূর্ব বর্ধমানে! ‘জামাইবাবু’ বাংলাদেশের দায়িত্ব নিতে চলেছেন, এ কথা জানার পর থেকেই আনন্দে ভাসছে বর্ধমানের বাসিন্দা আসফাক হোসেনের পরিবার।
জন্মসূত্রে বর্ধমানে থাকেন আসফাক। ডাকনাম বাবু মিঞা। বর্ধমান শহরের রানিগঞ্জ বাজারের কাছে লস্করদিঘি এলাকায় তাঁর নিজের বাড়ি। নিজেকে ইউনূসের শ্যালক বলে দাবি করেছেন আসফাক। তিনি বলেন, ‘‘জামাইবাবু দায়িত্ব নিচ্ছেন শুনে আমরা খুবই আনন্দিত। আমাদের আবেদন, ভারতের সঙ্গে আরও মধুর সম্পর্ক গড়ে তুলুন। সকলে মিলে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যান।’’ আসফাকের দাবি, দুই পরিবারের মধ্যে নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। প্রায়ই বাংলাদেশে যান তাঁরা। আসফাকের কথায়, ‘‘আমার ভাগ্নেই তো আমার হার্টের চিকিৎসা করেছিল। স্টেন্ট বসিয়ে দিয়েছিল। ইউরিনের কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তখন ওখানেই চিকিৎসা হয়। না গেলে আবার দিদি রাগ করে। বলে, এত দিন আসিসনি কেন? আমারও তো মন কাঁদে। মামাতো ভাইবোনেরা থাকে যে!’’
মঙ্গলবার ঢাকার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মহম্মদ শাহবুদ্দিনের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বৈঠকে ইউনূসকে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইউনূস সেই প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন। সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, নোবেলজয়ী বর্তমানে প্যারিসে রয়েছেন। বৃহস্পতিবারই তিনি বাংলাদেশে ফিরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব নিতে পারেন। সেই ইউনূসের কাছে কয়েকটি আবদার রয়েছে বছর পঁয়ষট্টির আসফাকের। তিনি বলেন, ‘‘স্পট ভিসার ব্যবস্থা করা হোক। এখানে ১৫-২০ দিন সময় লেগে যায়। অন্য দেশে কিন্তু দিয়ে দেয়।’’ এ দেশের প্রবীণ নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশে যাওয়ার বিষয়টি যাতে সহজ করা যায়, ইউনূসের কাছে সেই আর্জিও জানিয়েছেন তিনি। আসফাক বলেন, ‘‘জামাইবাবুর কাছে আবেদন, আপনারা সকলে মিলে চেষ্টা করুন, যাতে সব কিছু ট্যাকল করে একটা সুন্দর দেশ গড়ে তোলা যায়। ঈশ্বরের কাছেও একই প্রার্থনা আমার। ’’
সোমবার প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বাংলাদেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। হাসিনার দেশত্যাগের পর সোমবারই বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান সাংবাদিক সম্মেলনে দেশে অন্তর্বর্তী সরকার গড়ার কথা ঘোষণা করেন। ওই সরকারের প্রধান কে হবেন, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয় সেনাপ্রধানের ঘোষণার পর থেকে। এই পরিস্থিতিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা নেওয়া ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর শীর্ষ সারিতে থাকা ছাত্রনেতারা জানিয়ে দিয়েছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে তাঁরা ইউনূসকে চান। এর পর মঙ্গলবারের বৈঠকে সেই প্রস্তাবে সিলমোহর পড়ে।
২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতেছিলেন ইউনূস। তাঁকে ওই সম্মান দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশের মাটিতে তাঁর তৈরি মাইক্রোফিন্যান্স ব্যাঙ্কের জন্য। ওই ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে ইউনূস বাংলাদেশের লক্ষাধিক দরিদ্র মানুষকে দারিদ্রসীমা থেকে টেনে তুলেছেন বলে মনে করেছিল নোবেল কমিটি। যদিও তাঁর নিজের দেশের সরকারের ভিন্নমত ছিল। প্রকাশ্যেই ইউনূসের সমালোচনা করতে দেখা যেত হাসিনাকে। ইউনূসের সংস্থা গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে দেশের শ্রম আইন ভাঙারও অভিযোগ ওঠে। বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী যে কোনও সংস্থায় কর্মীদের কল্যাণমূলক তহবিল তৈরি করতে হয়। কিন্তু গ্রামীণ টেলিকমে ওই তহবিলের ব্যবস্থা ছিল না। বাংলাদেশের শ্রম আইন ভাঙার অভিযোগে গত জানুয়ারি মাসে অর্থনীতিবিদকে ছ’মাসের জেলের সাজাও শুনিয়েছিল ঢাকার আদালত। এখন সেই ইউনূসের দিকেই তাকিয়ে গোটা বাংলাদেশ।