এ-ও এক প্রতারণা! বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা তুলে পিঠ টান দেওয়ার ঘটনা!
পঞ্জি স্কিমের নামে বাজার থেকে টাকা তুলে আত্মসাতের অভিযোগে রোজ ভ্যালি ও সারদার মতো ৪০টির বেশি অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে ইডি এবং সিবিআই। কিন্তু এর বাইরেও যে একাধিক ভুঁইফোঁড় সংস্থা আন্তঃরাজ্য বহুমুখী সমবায় (মাল্টি স্টেট মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি) খুলে কোটি কোটি টাকা পকেটে পুরে ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়েছে, রাজ্যের সমবায় দফতরের খোঁজখবরে সম্প্রতি তা প্রকাশ্যে এসেছে।
নবান্ন সূত্রের খবর— গত ক’বছরে ওই আন্তঃরাজ্য সমবায়গুলিতে টাকা রেখে সর্বস্বান্ত হওয়ার বহু অভিযোগ জমা পড়েছে রাজ্য সমবায় দফতরে। সরেজমিনে খোঁজ করতে নেমে সমবায় কর্তারা দেখেছেন— যে ঠিকানা দেখিয়ে ওই বহুমুখী সমবায়গুলি খোলা হয়েছিল, সেগুলির বেশ কিছু ভুয়ো, অনেকগুলোই লাইসেন্স হাতে পাওয়ার পরে ঠিকানা বদলে ফেলেছে। ফলে, আমানতকারীদের টাকা উদ্ধার তো দূরের কথা, অভিযুক্তদের হদিসই পায়নি সমবায় দফতর।
ওই বহুমুখী সমবায়গুলির বেশ কিছু ঠিকানা এ রাজ্যের। তারা টাকাও তুলেছে এখান থেকে। আবার উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র বা দিল্লিতে নথিভুক্ত একাধিক সমবায়ও আমানত সংগ্রহ করেছে এ রাজ্যের বাসিন্দাদের থেকে। সূত্রের খবর, পুণের শিরোলের একটি বহুমুখী সমবায়ের অধিকাংশ এজেন্ট ছিল মহারাষ্ট্রের। কলকাতায় ঘর ভাড়া নিয়ে তাঁরা বহু টাকা তুলেছিলেন। পরবর্তী কালে ওই সমবায় সম্পর্কে অভিযোগ জমা পড়লে কৃষি মন্ত্রক এ রাজ্যের সমবায় দফতরকে খোঁজখবর করতে বলে। তদন্ত অবশ্য বেশি দূর এগোয়নি। কারণ, আন্তঃরাজ্য ওই সমবায়ের শিকড়ই খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সমবায় কর্তারা বলছেন, কেন্দ্রের কৃষি ও কৃষক উন্নয়ন মন্ত্রক ‘মাল্টি স্টেট ক্রেডিট কো-অপারেটিভ অ্যাক্ট, ২০০২’-এ ওই বহুমুখী সমবায়গুলির লাইসেন্স দেয়। তাই সেগুলির বিরুদ্ধে তদন্ত করার অধিকার রাজ্যের হাতে নেই। এমনকী, কোন রাজ্যের কোন সংস্থাকে সমবায় তৈরির অধিকার দেওয়া হয়েছে, রাজ্য সরকারকে সেটুকুও জানানো হয় না।
তা হলে এ রাজ্যের ভুঁইফোঁড় সমবায়ের খোঁজ মিলল কী ভাবে? নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘সেবি, ইডি-র মতো কেন্দ্রীয় সংস্থা কিংবা কৃষি মন্ত্রকের কাছে সরাসরি অভিযোগ জমা পড়লে সংশ্লিষ্ট রাজ্যকে সেই সমবায় সম্পর্কে খোঁজ করতে বলা হয়। সেই সূত্রেই এ রাজ্যের একাধিক বহুমুখী সমবায়ের নানা গন্ডগোলের তথ্য মিলেছে।’’
যেমন দিল্লির অনুরোধে নদিয়ার সীমান্ত লাগোয়া করিমপুরের জামতলায় এ রকমই একটি আন্তঃরাজ্য সমবায়ের খোঁজ করতে গিয়ে সেখানকার ইনস্পেক্টর দেখেছেন, যে ঠিকানায় সেটির রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল, ২০১২-তে সেই অফিস গুটিয়ে গিয়েছে। সমবায় কর্তারা জানাচ্ছেন, কৃষি মন্ত্রকের পাঠানো তথ্য হাতে নিয়ে সোদপুর, বিরাটি, শিবপুর, তারকেশ্বর-সহ বিভিন্ন জেলায় গোটা কুড়ি ঠিকানায় খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, বাজার থেকে টাকা তুলে ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়েছেন সমবায়ের লোকজন। গা ঢাকা দিয়েছেন এজেন্টদের পরিবারও।
নবান্নের কর্তারা বলছেন, আইনে ‘মাল্টি স্টেট’-এর উল্লেখ থাকায় একাধিক রাজ্যে আমানত ব্যবসার অধিকার পায় সমবায়গুলো। সেই সুযোগটাই নেয় অসাধু লোকজনেরা। আমানতে অধিক সুদ ও ঋণে কম সুদের লোভ দেখিয়ে বাজার থেকে টাকা তোলে ওই সব সমবায়ের এজেন্টরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এক রাজ্যের এজেন্টকে অন্য রাজ্যে টাকা তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফলে সমবায়ের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গেলেও এজেন্টদের নাগাল আর পান না আমানতকারীরা।
রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘সারদা, রোজ ভ্যালি বা এমপিএস-এর মতো সংস্থা এলাকার ছেলেদেরই এজেন্ট নিয়োগ করেছিল। সেই কারণে তাঁদের জেরা করে সংশ্লিষ্ট সংস্থা সম্পর্কে অনেক তথ্য মিলেছিল। কিন্তু আন্তঃরাজ্য বহুমুখী সমবায়গুলির ক্ষেত্রে সেই সুযোগও নেই।’’