মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
চলতি নভেম্বর মাস জুড়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্র ভবানীপুর জুড়ে প্রশাসনিক ব্যস্ততা লক্ষ করা যাচ্ছে। রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক বেশ কিছু কর্মসূচি ঠিক করা হয়েছে ভবানীপুরে। যার সূত্রপাত হচ্ছে সোমবার বিধায়ক মমতার বিজয়া সম্মিলনী দিয়ে। ৬ নভেম্বর, সোমবার, সন্ধ্যা ছ’টায় আলিপুরের মুক্তমঞ্চ উত্তীর্ণতে এক বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করা হয়েছে ভবানীপুর বিধানসভা তৃণমূলের তরফে। এই রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেবেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই বিজয়া সম্মিলনীর গুরুত্ব তৃণমূলের অন্য রাজনৈতিক কর্মসূচির থেকে বেশি বলেই মনে করছেন বাংলার রাজনীতির কারবারিদের একাংশ। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী নিজের বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরে খুব বেশি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেন না। তাই এই সম্মিলনী যেমন তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে ‘গুরুত্বপূর্ণ’, তেমনই প্রশাসনের কাছেও এই কর্মসূচি আয়োজনের দায়িত্বও যথেষ্ট ‘তাৎপর্যপূর্ণ’।
কারণ, ভবানীপুর বিধানসভার অন্তর্গত যে আটটি কলকাতা পুরসভার ওয়ার্ড রয়েছে, সেই ওয়ার্ডগুলির কাউন্সিলর এবং ব্লক সভাপতিদের পাশাপাশি কর্মীরাও অংশ নিতে উত্তীর্ণতে আসবেন। তাই মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এ হেন রাজনৈতিক কর্মসূচির আয়োজন প্রশাসন এবং দলগত ভাবে তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে অত্যন্ত দায়িত্বপূর্ণ বিষয়। তাই রাজনৈতিক ভাবে এই বিজয়া সম্মিলনী আয়োজন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্যসভা সাংসদ তথা তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী এবং দক্ষিণ কলকাতা তৃণমূলের সভাপতি তথা রাসবিহারীর বিধায়ক দেবাশিস কুমারকে। এই কর্মসূচি আয়োজনের পর ভবানীপুর বিধানসভায় আরও একটি বড়সড় কর্মসূচি অপেক্ষা করছে। তবে রাজনীতির সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগ নেই বলেই পুলিশ-প্রশাসন সূত্রে খবর।
নিজের বিধানসভা কেন্দ্রের নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিজয়া সম্মিলনীর পাশাপাশি রাজ্যের শিল্পপতিদের নিয়েও একটি বিজয়া সম্মিলনী করবেন মুখ্যমন্ত্রী। ৯ নভেম্বর বিজয় সম্মেলনীর আয়োজনের প্রস্তুতির দায়িত্বে বিশেষ নজর দিচ্ছে নবান্ন। প্রতি বছর এই সম্মিলনের আয়োজন করা হত নিউ টাউনে। কিন্তু সেই সম্মেলনীর আয়োজন এ বছর করা হচ্ছে আলিপুর জেল মিউজিয়ামে। ঘটনাচক্রে ৯ এই আলিপুর জেল মিউজিয়ামটিও মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরের অন্তর্গত। সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের এক কিলোমিটারের মধ্যেই অবস্থিত। তাই মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা এই ‘হাই প্রোফাইল’ বিজয়া সম্মিলনী নিয়ে রাজ্য প্রশাসনিক তৎপরতা অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের শিল্পপতি তথা বিশিষ্টজনদের কাছে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দিয়েছে শিল্পোন্নয়ন নিগম।
চলতি নভেম্বর মাসের ২১ এবং ২২ তারিখে পশ্চিমবঙ্গে হবে বিশ্ব বাণিজ্য সম্মেলন (বিজিবিএস)। এই বছর বিশ্ব বঙ্গ কনভেনশন সেন্টারের পাশাপাশি মিলন মেলা প্রাঙ্গণ এবং ভবানীপুর বিধানসভার অন্তর্গত ধন ধান্য অডিটোরিয়ামেও বাণিজ্য সম্মেলনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান রয়েছে। এ বারের সম্মেলনে বিশেষ গুরুত্ব পাবে রাজ্যের ক্ষুদ্র শিল্প। তাই ধন ধান্য অডিটোরিয়ামে পৃথক ভাবে আয়োজন করা হচ্ছে এমএসএমই কনক্লেভের। যাতে যোগ দেবেন ২৫০০ হাজার প্রতিনিধি। গত শুক্রবার বাণিজ্য সম্মেলনের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। সংশ্লিষ্ট দফতরের উচ্চপদস্থ কর্তাদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন কলকাতা এবং বিধাননগর পুলিশের কমিশনার। ছিলেন কলকাতা বিমানবন্দরের আধিকারিকেরাও।
এই দুই কর্মসূচির মাঝে রয়েছে কালীপুজো, দীপাবলি উৎসব এবং ভাইফোঁটা। এই সময় মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাসভবনে ব্যাপক অতিথি-অভ্যাগতদের ভিড় হয়। কারণ, মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে কালীপুজো হয়, সেই পুজোয় যোগদান করতে কলকাতা তথা দেশের বহু গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আসেন। সঙ্গে ভাইফোঁটার দিনেও মুখ্যমন্ত্রী বাড়িতে অনেক অতিথি আসেন। তাই নভেম্বর মাস জুড়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুর জুড়ে প্রশাসনিক ব্যস্ততা থাকবে চরমে।