Mamata Banerjee

বসল ৫৬ লক্ষের ক্যামেরা সেন্সর, নিরাপত্তা আরও জোরদার কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতার বাড়িতে

কয়েক মাস আগেই মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ঢুকে পড়েছিলেন এক ব্যক্তি। সেই ঘটনায় সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ আধিকারিকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১০:১৯
Share:

নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির আশেপাশে। — ফাইল চিত্র।

মাছি গললেও এ বার থেকে ধরা পড়ে যাবে! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি ঘিরে অত্যাধুনিক ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ হওয়ার পরে এমনটাই মনে করছেন সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি ঘিরে প্রায় ৫৬ লক্ষ টাকা খরচ করে এমন একটি নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে, যা সজাগ থাকবে সর্বক্ষণ। নজরদারিতে মানুষের ভুল হলেও জানান দেবে যন্ত্র। কিন্তু, এর মধ্যেও বাহিনীর মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে একাধিক বিষয় নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির আশপাশের গলিতে রাতপাহারায় থাকা অনেকেই জানাচ্ছেন, তাঁদের সঙ্গে তেমন কোনও অস্ত্র থাকে না। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখার মতো পর্যাপ্ত সংখ্যক ‘ম্যান প্যাক’ও নেই!

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ‘ডিরেক্টরেট অব সিকিয়োরিটি’ এবং কলকাতা পুলিশের কর্তারা এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদেরই এক জনের মন্তব্য, ‘‘ওই এলাকায় গেলেই বোঝা যাবে, নিরাপত্তার বন্দোবস্ত কতটা আঁটসাঁট। রাতে তো দূর, দিনেও কেউ বিনা কারণে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির গলিপথে ঘোরার সুযোগ পান না।’’ সেই সঙ্গেই ওই পুলিশকর্তা জানান, কড়া নজরদারি চালানোর জন্য জরুরি একটি কন্ট্রোল রুম ইতিমধ্যেই তৈরি করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই শেষ হয়েছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা লাগানোর কাজ।

Advertisement

কয়েক মাস আগেই মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ঢুকে পড়েছিলেন এক ব্যক্তি। সেই ঘটনায় সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ আধিকারিকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। চর্চা আরও বাড়ে, ওই ব্যক্তির হাতে লোহার রড ছিল, এমন খবর প্রকাশ্যে আসার পরে। ওই ব্যক্তি সারা রাত মুখ্যমন্ত্রীর ঘরের ঠিক বাইরেই এক জায়গায় লোহার রড নিয়ে বসে ছিলেন বলেও খবর মেলে। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ‘ডিরেক্টরেট অব সিকিয়োরিটি’র কাছে রিপোর্ট তলব করা হয়। ওই এলাকায় নিরাপত্তার একাধিক পদক্ষেপের পাশাপাশি পিআইডিএস বা ‘পেরিমিটার ইন্ট্রুশন ডিটেকশন সিস্টেম’ বসানোর সিদ্ধান্ত হয়।

নজরদারির এমন ব্যবস্থা এ রাজ্যে এই প্রথম। এর আগে দিল্লি ও মুম্বইয়ের কিছু কড়া নিরাপত্তা এলাকায় এ জিনিস ব্যবহার হয়েছে। নয়া ব্যবস্থার অঙ্গ হিসাবে ৩০টি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সেখানে এক-একটি খুঁটির সঙ্গে উঁচু জায়গায় ক্যামেরা ও সেন্সর লাগানো ডিভাইস বা বৈদ্যুতিন যন্ত্র বসানো থাকছে। ক্যামেরায় ছবি তোলার পাশাপাশি সেন্সরের আওতায় কেউ ঢুকলেই সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত কন্ট্রোল রুমে সতর্কবার্তা যাবে। যা খতিয়ে দেখে পুলিশ জরুরি পদক্ষেপ করতে পারবে তৎক্ষণাৎ। এই ব্যবস্থায় কোনও গাড়ি সেন্সরের মধ্যে দিয়ে গেলে তার সঙ্গে যুক্ত ফোন নম্বরও কন্ট্রোল রুমে পৌঁছে যায়। এই সেন্সর ও ক্যামেরার ব্যবস্থা মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির আশপাশের একাধিক গলি ও হরিশ মুখার্জি রোডের কিছু জায়গায় লাগানো হয়েছে।

সেই ব্যবস্থাপনা দেখতেই যাওয়া হয়েছিল ওই চত্বরে। হাজরা রোড থেকে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে ঢোকার মুখেই কড়া নিরাপত্তা। কোথায় যাওয়া হচ্ছে, কী উদ্দেশ্যে— ইত্যাদি শুনে তবে ছাড়া হল গাড়ি। ওই রাস্তায় ঢোকার মুখেই চোখে পড়ল খুঁটির সঙ্গে লাগানো ক্যামেরাগুলি। সঙ্গে সাদা সেন্সর বক্সের বৈদ্যুতিক যন্ত্র। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনেও গাড়ি থামিয়ে প্রশ্ন, কোথায় যাওয়া হচ্ছে? ক্যামেরা সম্পর্কে জানতে চাইতেই এক নিরাপত্তাকর্মী বললেন, ‘‘ক্যামেরার খোঁজ কেন দরকার?’’ পরিচয় জানিয়ে ফের প্রশ্ন করতে তিনি বললেন, ‘‘বেশি বলা বারণ। এটুকু বলতে পারি, এখানে মাছি গললেও এ বার ধরা পড়বে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement