ফাইল চিত্র।
অতিমারি আবহে প্রায় ২০ মাস বন্ধ থাকার পর সদ্য খুলেছে স্কুল। তবে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের এখনই স্কুলে যেতে হচ্ছে না। গত প্রায় দু’ বছরে
গ্রামীণ এলাকার স্কুলগুলিতে নিচু ক্লাসের পড়ুয়ারা অনেকেই অনলাইনে ক্লাস করতে পারেনি স্মার্টফোন না থাকা-সহ নানা সমস্যায়। স্কুলে গিয়ে পঠনপাঠন ফের শুরু হলে ওই পড়ুয়াদের অঙ্ক, ইংরেজির নতুন নতুন বিষয়গুলি বুঝতে সমস্যা হবে না তো! শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ অবশ্য ইতিমধ্যেই এ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে ওই ‘পিছিয়ে পড়া’ পড়ুয়াদের জন্যে ব্রিজ কোর্স চালুর প্রস্তাব নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন বেলডাঙার একদল শিক্ষক।
শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের বক্তব্য, অতিমারি শুরু হওয়ার আগে যে পড়ুয়া পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত, আর ক’দিন পরেই সে সপ্তম শ্রেণিতে উঠবে। তবে গ্রামীণ এলাকায় গত দু’বছরে পড়ুয়ারা বাড়িতে পড়াশোনা করে নতুন ক্লাসের জন্যে নিজেদের কতটা তৈরি করতে পেরেছে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে যথেষ্টই। এই অবস্থায় বিশেষত অঙ্ক, ইংরেজির মতো বিষয়ে নতুন ক্লাসের পড়া বুঝতে তাদের সমস্যা হতে পারে। অন্য শ্রেণির অনেক পড়ুয়াও একই সমস্যায় পড়তে পারে বলে আশঙ্কা। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বেলডাঙার দেবকুণ্ড হাইমাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মহম্মদ সবুর আলি নিজের ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘‘দীর্ঘ উপবাসের পর যেমন একসঙ্গে সব খাবার খাওয়া যায় না, তেমনি ২০ মাস স্কুল বন্ধ থাকার পর শুধু সময় বাড়িয়ে পড়াশোনার ঘাটতি মেটানো সম্ভব নয়। চাই পরিকল্পনা, সেতু পাঠক্রম।’’ তিনি আরও লেখেন, ‘‘মাদ্রাসা শিক্ষায় এই সেতু পাঠক্রম বা ব্রিজ কোর্সের ব্যবস্থা রয়েছে। সরকার এগিয়ে এসে কাজ করলে ভাল। না হলে শিক্ষকদের নিজেদেরই দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে।’’
তাঁর ওই পোস্টে অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকাই নিজেদের মতামত জানিয়েছেন। অনেকে তাঁর প্রস্তাবে সহমত হয়েছেন। বেলডাঙা শ্রীশচন্দ্র বিদ্যাপীঠের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিম বিশ্বাস বলেন, “খুবই প্রাসঙ্গিক প্রস্তাব। প্রায় দু’ বছর স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনায় একটা শূন্যস্থান তো তৈরি হয়েছেই। মাঝে শুনছিলাম, রাজ্যের শিক্ষা দফতর এ বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে।’’
শক্তিপুর কেএমসিআই স্কুলের শিক্ষক প্রদীপনারায়ণ রায় বলেন, ‘‘সপ্তম, অষ্টম বা নবম শ্রেণিতে যারা এখন পড়ে, তারা নতুন ক্লাসে উঠলে প্রথম এক-দু’ মাস শিক্ষক-শিক্ষিকারাই দায়িত্ব নিয়ে আগের ক্লাসের পাঠ্যগুলি ফের ঝালিয়ে নিতে পারেন। তার পর না হয় নতুন ক্লাসের পড়া শুরু হবে। এতে পড়ুয়াদের কিছুটা সুবিধা হবে।”
দেবকুণ্ড এসএআরএম গার্লস মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষিকা মুর্শিদা খাতুনের প্রতিক্রিয়া, “ওই প্রধান শিক্ষক সঠিক প্রস্তাবই দিয়েছেন। এ নিয়ে শিক্ষক সংগঠনের বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে। সরকার না করলে শিক্ষকরাই ব্যক্তিগত উদ্যোগে এমন পরিকল্পনা করতে পারেন।’’ এ নিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) অমর শীল মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘এ নিয়ে যা বলার শিক্ষা দফতরই বলবে।’’