bomb blast

নারকেল নয় বোমা! মামাবাড়িতে বেঘোরে মৃত্যু নাবালিকার

বীরভূমের বহড়াপুর গ্রামে সম্প্রতি বোমার ঘায়ে এক ব্যক্তির হাত ও পা উড়ে গিয়েছে। ১৪ নভেম্বরের পরে তেরাত্তিরও কাটেনি, এর মধ্যে রাজ্যের দুই জেলায় পরপর বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় শঙ্কিত বিরোধীরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২২ ০৬:৫০
Share:

কেশপুরে বোমায় আহত তৃণমূল কর্মী শেখ রফিক আলি। নিজস্ব চিত্র

বাড়ির মাচায় নারকেল রাখা হয়েছে বলে ভেবেছিল মেয়েটি। সেটি পাড়তে যায় সে। সেই ‘নারকেল’ মাটিতে পড়ে ফাটে বিকট শব্দে। মারা গিয়েছে আট বছরের মেয়ে। বুধবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁ থানার চাঁপালি পঞ্চায়েতের বকচোরায়। এই ঘটনায় আরও দু’জন জখম হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের একটি সূত্র।

Advertisement

এই দিন বিকেলেই পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরে চরকা গ্রামে তৃণমূলের একটি মিছিলের উপরে বোমা পড়ে। তাতে এক তৃণমূল কর্মীর হাতের একটি আঙুল উড়ে যায়। অভিযোগ ওঠে, দলের অন্তর্দ্বন্দ্বেই এই বোমাবাজি। যদিও জখম ব্যক্তিকে তৃণমূল কর্মী হিসাবে মানতে চাননি জেলার মন্ত্রী শিউলি সাহা।

বীরভূমের বহড়াপুর গ্রামে সম্প্রতি বোমার ঘায়ে এক ব্যক্তির হাত ও পা উড়ে গিয়েছে। ১৪ নভেম্বরের পরে তেরাত্তিরও কাটেনি, এর মধ্যে রাজ্যের দুই জেলায় পরপর বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় শঙ্কিত বিরোধীরা। তাদের প্রশ্ন, তা হলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে পুলিশকে বোমা খুঁজে বার করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তার কী হল? মঙ্গলবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে গা-জোয়ারি হবে না। কোনও ভাবেই হবে না।’’ তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনকে স্বচ্ছ ভোটের নির্দেশ দিয়েছেন।’’ বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, যে ভাবে পরপর বোমা ফাটছে, তাতে অভিষেকের এই আশ্বাসের উপরে কতটা ভরসা করা যায়?

Advertisement

মিনাখাঁয় বিস্ফোরণের পরে বাড়িটিতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। সূত্রের দাবি, সেখান থেকে আরও বেশ কিছু বোমা উদ্ধার হয়েছে। মিনাখাঁর এসডিপিও আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘ঘটনার পরে পরিবারের সকলে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। বাড়িটি সিল করা হয়েছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আবু হোসেন গাইন নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে রান্নাঘরের মাচায় রাখা ছিল কয়েকটি বোমা রাখা ছিল। আবুর ভাগ্নি সোহানা খাতুন ওরফে ঝুমা নারকেল ভেবে একটি বোমা পাড়তে যায়। সেই বোমা মাটিতে পড়ে ফাটলে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় শিশুর শরীর। জখম সোহানাকে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্যে পুলিশ মিনাখাঁ গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল বৈদ্য, বাবলু মণ্ডলেরা জানান, আবু এলাকায় ‘তৃণমূলের লোক’ বলেই পরিচিত। যদিও তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি আইজুল গাজি বলেন, ‘‘আবু হোসেন গাইনের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’

এখানেই শেষ নয়। এ দিনই দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় থানার রাজাপুর গ্রামে দুই শিশু নারকেল ভেবে মাঠ থেকে বোমা তুলে নিয়ে যাচ্ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, বড়দের চোখে পড়ে যাওয়ায় তারা বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তিনটি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। কী ভাবে সেগুলি এলাকায় এল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এই জেলারই কুলপির ছামনামণি গ্রামেও এ দিন বিকেলে বাড়ির কাছে নালায় একটি ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখে দুলতে গিয়ে বোমা ফেটে জখম হয়েছে দু’টি শিশু। তাদের স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।

বুধবার বিকেলে বোমাবাজির ঘটনা ঘটে কেশপুরের চরকাতেও। সেখানে এ দিন তৃণমূলের একটি মিছিলের প্রস্তুতি শুরু চলছিল। তৃণমূল সূত্রের খবর, স্থানীয় রাজনীতিতে দলের দু’টি গোষ্ঠী সক্রিয়। এক দিকে দলের ব্লক সভাপতি প্রদ্যোত পাঁজার অনুগামীরা। অন্য দিকে, দলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি উত্তম ত্রিপাঠীর অনুগামীরা। ব্লক সভাপতি প্রদ্যোত মন্ত্রী শিউলি সাহার অনুগামী বলেই পরিচিত। দু’তরফেই মিছিলের প্রস্তুতি চলছিল বলে দাবি। হঠাৎই জমায়েত থেকে বোমাবাজি শুরু হয়। শেখ রফিক আলি নামে এক তৃণমূল কর্মীর ডান হাতের একটি আঙুল উড়ে যায়।

রফিককে তৃণমূল কর্মী হিসেবে মানতে নারাজ মন্ত্রী শিউলি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি মহম্মদ রফিককে চিনি। কেশপুরের নেতা। রফিক আলি নামে কাউকে চিনি বলে মনে করতে পারছি না!’’ অন্য দিকে, তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি উত্তম ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘ও (রফিক) দলের সক্রিয় কর্মী। সব কর্মসূচিতেই থাকে।’’ তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুরের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি বলেন, ‘‘তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা পুলিশকে বলা হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement