বিকাশ ভবন। —ফাইল চিত্র।
বিকাশ ভবনের কর্তারা তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় না বসলে এবং সমস্যার কোনও সমাধানসূত্র না বেরোলে তাঁরা আমরণ অনশন চালাবেন। শুক্রবার এমনটাই জানিয়ে দিলেন বিকাশ ভবনের কাছে ধর্না-অবস্থান ও অনশনে বসা ইন্টারভিউ-বঞ্চিত উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরা।
বুধবার বিকাশ ভবনের কাছে টানা ৭২ ঘণ্টার জন্য ধর্না-অবস্থানে বসেন তাঁরা। ওই দিন থেকে ধর্না-অবস্থান চললেও চাকরিপ্রার্থীরা অনশনে বসেন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। আজহার শেখ নামে এক চাকরিপ্রার্থী বললেন, ‘‘এখানে আমরা ২৫০ থেকে ৩০০ জন অবস্থান-বিক্ষোভ করছি। তার মধ্যে অনশন করছেন অনেকেই। বিকাশ ভবনের কাছে যেখানে আমরা বসে রয়েছি, সেখানে শনিবার দুপুর পর্যন্ত থাকার অনুমতি আছে। তবে, আমাদের দাবি না মিটলে এখান থেকে উঠব না। শান্তিপূর্ণ ভাবে এখানে বসে গণতান্ত্রিক উপায়ে বিক্ষোভ চালাব। আমরণ অনশন চলবে। আমরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ দাবি করছি।’’
শুক্রবার বেলার দিকে তিন জন চাকরিপ্রার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। চাকরিপ্রার্থীরা জানাচ্ছেন, অসুস্থদের নাম দীপান্বিতা সাঁতরা, অপর্ণা রায় এবং পরিতোষ রায়। পরে বিকেলে প্রীতিলতা মাইতি ও কাকলি সরকার নামে আরও দু’জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনশন শুরু করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারিয়েছেন কেউ কেউ। আজহার বলেন, ‘‘এখানে অনেকেরই সুগার আছে, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাও আছে। বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা রয়েছে কারও কারও। চাকরির দাবি জানিয়েও না পাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছেন অনেকেই। বুধ ও বৃহস্পতিবার, দু’রাত ঘুম হয়নি একটুও। ফলে, এতটা শারীরিক ধকল নিতে পারছেন না অনেকেই। অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।’’
এ দিন সকাল থেকে বিরোধী দলের অনেক নেতাই ইন্টারভিউ-বঞ্চিত উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীদের মঞ্চে আসেন। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। হাবিব শেখ নামে আর এক চাকরিপ্রার্থী বললেন, ‘‘বিরোধী দলের নেতারা তাঁদের বক্তব্য জানাচ্ছেন। আমরা সকলেরই বক্তব্য শুনেছি। কিন্তু নিজেদের দাবিতে আমরা অনড়। আমাদের দাবি হল, গেজেটের নিয়ম মেনে আসন আপডেট করে আমাদের ইন্টারভিউয়ে ডাকতে হবে। আমাদের দশ বছরের বঞ্চনার দ্রুত অবসান করতে হবে।’’ চাকরিপ্রার্থীরা জানালেন, তাঁরা এক দিকে বিকাশ ভবনের পাশে বিক্ষোভ-অনশন চালাচ্ছেন, আবার মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশেও বিক্ষোভ চলছে। সেই বিক্ষোভ-আন্দোলন ৫২৭ দিন ধরে চলছে।
এ দিন সন্ধ্যায় বিকাশ ভবনের কাছে গিয়ে দেখা গেল, চাকরিপ্রার্থীদের ভিড় কমেনি একটুও। স্লোগান চলেছে সারা দিন ধরে। তাঁরা জানালেন, এ দিন বিকেল পর্যন্ত বায়ো-টয়লেটের ব্যবস্থা হয়নি। শুধু দু’টি অ্যাম্বুল্যান্স অনশন মঞ্চের কাছে দেখতে পাওয়া গিয়েছে। এক চাকরিপ্রার্থী বললেন, ‘‘ন্যায্য অধিকারের দাবি জানাতে এসে মশার কামড়ে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেও আমাদের কোনও আফশোস নেই। গত দশ বছর ধরে যে ভাবে বেঁচে আছি, সেটা কি আর বেঁচে থাকা বলে?’’