গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
“আমৃত্যু কারাবাস নয়, ফাঁসি হওয়া উচিত ছিল সঞ্জয় রায়ের। যে কাজ করেছে, তাতে জনসমক্ষে ফাঁসি দেওয়া উচিত”, সোমবার আর জি কর কাণ্ডের রায় শুনে এমন বলছেন যিনি, তাঁর নাবালিকা মেয়েকেও ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছিল। সাল ২০২৩। জেলা দার্জিলিং। গত বছর ৭ সেপ্টেম্বর শিলিগুড়ি মহকুমা আদালত ওই ঘটনায় মহম্মদ আব্বাসকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। সে দিনও আদালত চত্বর থেকেই আর জি কর-কাণ্ডে ধৃত সঞ্জয়ের ফাঁসির দাবি জানিয়েছিলেন দার্জিলিঙের নির্যাতিতার মা। তিনি আশায় ছিলেন, আব্বাসের মতো সাজা হবে সঞ্জয়ের।
সঞ্জয়ের জন্য একই রকম সাজার প্রার্থনা করেছিলেন মেয়ে হারানো আরও দুই দম্পতি। সম্প্রতি এ রাজ্যের দুই জেলায় (হুগলি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা) এক শিশুকন্যা ও এক বালিকাকে ধর্ষণ-খুনে ফাঁসির সাজা হয়েছে দুই অপরাধীর। হুগলির শিশুটির বাবা-মা দিনের কাজ ফেলে টিভির সামনে রায় জানতে বসেছিলেন। সঞ্জয়ের আমৃত্যু কারাবাসের সাজা শুনে শিশুটির মায়ের প্রতিক্রিয়া, “ভেবেছিলাম, ফাঁসি হবে। হল না। আমরা খুশি নই।” শিশুটির বাবা বলেন, “আর জি কর-কাণ্ডে বিচারের দাবিতে আমিও পথে নেমেছিলাম। পরে, আমার মেয়ের সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটে। মেয়ের মামলার রায়ে আমরা খুশি। কিন্তু আজকের রায়ে তা হতে পারছি না। নির্যাতিত-নিহত ডাক্তারের বাবা-মায়ের পাশে ছিলাম, আছি, থাকব।” দক্ষিণ ২৪ পরগনার নিহত বালিকার মা বলেন, “মেয়ের জন্য বিচার পেয়েছি। ডাক্তারদিদির জন্য একই রকম বিচার চেয়েছিলাম। এ ক্ষেত্রেও ফাঁসি হলেই ভাল হত।”
তবে আর জি করের ধর্ষণ ও খুনের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডকে ‘কম’ সাজা বলে মনে করে না মুর্শিদাবাদের নির্যাতিতার পরিবার। ওই পরিবারের ন’বছরের বালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় ৬২ দিনের মাথায় আদালত দু’জন অভিযুক্তের এক জনকে আমৃত্যু কারাবাস, অন্য জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে গত ১৩ ডিসেম্বর।
ওই নির্যাতিতার ঠাকুমা বলেন, “প্রথমে ভেবেছিলাম, আমাদের মেয়েকে যে ভাবে নির্যাতন করে খুন করেছে ওরা, ওদেরও ফাঁসি দেওয়া হোক। পরে ভেবেছি, মৃত্যুদণ্ড তো এক মিনিটের যন্ত্রণা। এমন ঘটনায় দোষীদের আমৃত্যু জেলে বন্দি থেকে যন্ত্রণা ভোগ করেই মৃত্যু হওয়া উচিত। তাদের পরিবারও বুঝবে, এ ভাবে আপনজন কাছছাড়া হওয়ার কষ্ট।”
দার্জিলিঙের নির্যাতিতার মা বলেন, “মেয়ের জন্য ন্যায় পেয়েছি। কিন্তু এখনও ফাঁসি হয়নি আব্বাসের। উচ্চ আদালতে গিয়েছে। শুনানি শীঘ্র শুরু না হলে আমরণ অনশনে বসব।” তাঁর সংযোজন: “মেয়ে হারানোর কষ্ট একমাত্র মা-বাবা জানে। দু’দিন পরে বাইরের সকলে সব ভুলে যাবেন। এক জন চিকিৎসকের সঙ্গে যে ঘৃণ্য কাজ সঞ্জয় করেছে, তাতে মানুষের করের টাকায় ও কেন জেলের ভাত খাবে?”