—ফাইল চিত্র
দিন আনি দিন খাই পরিবারের সন্তান তিনি। তার পরেও ইচ্ছে এবং অদম্য জেদে ভর করে ডাক্তারির সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষা নিট-এ সাফল্য ছিনিয়ে আনলেন কৃষি শ্রমিক পরিবারের ছেলে খোকন রায়।
হলদিবাড়ি ব্লকের হেমকুমারী গ্রামের বামনপাড়ার বাসিন্দা খোকন। বাবা সর্বেশ্বর রায় পেশায় একজন ঠিকা কৃষি শ্রমিক। যে দিন কাজ করেন, সে দিন টাকা মেলে। কাজ না করলে মজুরি নেই। এ ভাবেই সংসার চলে তাঁদের। অভাব ছিল পরিবারের নিত্য সঙ্গী। তা সত্ত্বেও ছেলের পড়াশোনায় বিন্দুমাত্র ঢিলে দেননি সর্বেশ্বর। তাঁরাই জানাচ্ছেন, ছোট থেকে আর পাঁচটা ছেলের মতো ছিল না খোকন। পড়ার বই নিয়ে বসতে ভালবাসত। সেই দেখে সর্বেশ্বর ও তাঁর স্ত্রী উদয়াস্ত পরিশ্রম করেছেন পড়াশোনার টাকা জোগাড় করতে। ২০১৭ সালে দেওয়ানগঞ্জ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ৫৯৯ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করে হলদিবাড়ি
উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন খোকন। দু’বছর পরে বিজ্ঞান বিভাগে ৪৩৬ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ২০২০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর নিট পরীক্ষায় বসেন তিনি। ১৬ অক্টোবর নিট পরীক্ষার ফল বার হলে দেখা যায়, তিনি সর্বভারতীয় তালিকায় ৯১৯৮১ নম্বরে ও তফসিলি জাতির তালিকায় ৩৯৭৩ নম্বরে রয়েছেন। ১৩ নভেম্বর অনলাইনে কাউন্সিলিং হওয়ার পর ১৬ নভেম্বর উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে তাঁর আসন সংরক্ষণ করা হয়। বুধবার দুপুরে খোকনের বিষয়ে খোঁজ নিতে ওঁদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জমি থেকে ধান মাথায় করে বাবার মোটর ভ্যানে তুলে বাড়িতে নিয়ে আসছেন।
তাঁর সাফল্যের কথা জিজ্ঞাসা করলে খোকন বলেন, ‘‘নিত্য অভাব থাকলেও মা বাবা সব সময় পড়াশোনার কথা বলতেন। বলতেন, একমাত্র পড়াশোনা করলেই নাকি এই অভাব মেটানো সম্ভব। তাই মন দিয়ে পড়েছি। ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়ে খুব ভাল লাগছে। ইচ্ছে আছে, ডাক্তারি পড়া শেষ করে গ্রামের কোনও হাসপাতালে রোগী দেখব।’’
সর্বেশ্বর রায় জানান, তাঁদের মাত্র দুই বিঘা জমি আছে। জমিতে চাষাবাদ করেই সংসার চলে। বাড়তি টাকার জন্য মাঝেমধ্যে মোটর ভ্যান চালান। তাঁর বিশ্বাস, তাঁর ছেলে একজন ভাল ডাক্তার হয়ে সমাজের সেবা করবে।