সালিশি সভা বসিয়ে একটি পরিবারের থেকে ১০ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়েছিল। প্রতীকী ছবি।
বাড়ির মেয়ে অন্য সম্প্রদায়ের ছেলেকে বিয়ে করে চলে গিয়েছে, এই ‘অপরাধে’ সালিশি সভা বসিয়ে একটি পরিবারের থেকে ১০ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়েছিল এবং তা দিতে না পারায় তাঁদের মারধর করে কার্যত একঘরে করা হয় বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, বাড়ির চারদিক বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়।
নদিয়ার পলাশিপাড়া থানার বার্নিয়া শ্রীকৃষ্ণপুরের বাসিন্দা গোবিন্দ বিশ্বাস গ্রামেরই ১০ জনের নামে জাতীয় তফসিলি জাতি কমিশনের কাছে এই মর্মে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তার প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছে নদিয়া জেলাশাসক, কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার ও পলাশিপাড়া থানাকে। তিন দিন আগে বেড়া খুলে দিয়ে গিয়েছে পুলিশ। তবুও বাড়ির লোকজন স্বস্তিতে নেই। দিন কয়েক আগেই বীরভূমের সাঁইথিয়ায় সালিশি সভা বসিয়ে আদিবাসী দম্পতিকে ‘ডাইন’ বলে পিটিয়ে মারা হয়েছে।
শুক্রবার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েই গোবিন্দ জানান, তাঁর মেয়ে সদ্য সাবালিকা হয়েছেন। মাসখানেক আগে তিনি বিয়ে করে চলে যান। এর পরেই গাঁয়ের কয়েক জন সালিশি সভা ডাকেন বলে দাবি। অভিযোগ, তার পরেই জরিমানা চাওয়া থেকে রাস্তা আটকানো, সব হয়। গোবিন্দ বলেন, “ভয়ে লুকিয়ে, ঘুর পথে বাজার করে আনতে হচ্ছিল। বাড়িতে বসেই শুনতে হত হুমকি।” তিন দিন আগে পুলিশ বেড়া খুলে দিয়ে গেলেও ‘সামাজিক বয়কট’ যে কার্যত জারি আছে, তা বেশ বোঝা যায়। গোবিন্দ বলেন, “যারা ১০ লক্ষ টাকা চেয়েছিল, তারা এখনও হুমকি দিচ্ছে।’’ অভিযুক্তদের কেউ এ নিয়ে একটি কথাও বলতে চাননি। তবে তাঁদের তরফে নির্মল মণ্ডল বলেন, “মেয়ে অন্য সম্প্রদায়ে বিয়ে করে চলে যাওয়ায় গ্রামবাসী ওঁদের একটু অন্য চোখে দেখছে। তবে কেউ ওঁদের একঘরে করেনি।” গ্রামবাসীর একাংশের দাবি, ওই বাড়ির রাস্তা পড়শিদের জমি দিয়ে গিয়েছে। তার জন্যই টাকা দেওয়ার কথা উঠেছিল।
নদিয়া জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠি বা কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশ সুপার ঈশানী পাল ফোন ধরেননি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) কৃশানু রায় বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে ১০ জনের নামে মামলা করে তদন্ত হচ্ছে।”