School Building

ভেঙে ঝুলছে বিদ্যালয়ের ছাদ, প্রশাসনকে জানিয়েও মেলেনি সুরাহা, আতঙ্কের ক্লাস চন্দ্রকোনার স্কুলে

স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, বছরের পর বছর কেটে গেলেও বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতরে ওই ভবন ভেঙে ফেলা ও নতুন ভবন তৈরির আবেদন জানিয়েও কোনও সাড়া মেলেনি। এই নিয়ে ক্ষোভের কথা জানান অভিভাবকেরাও।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৩ ১৮:২৬
Share:

বাঁশদহ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভেঙে পড়া ছাদ। —নিজস্ব চিত্র।

ভেঙে ঝুলছে ছাদ, বিপজ্জনক অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে স্কুল ভবন। এই অবস্থাতেই খুদে পড়ুয়াদের নিয়ে ক্লাস চলছে চন্দ্রকোনা পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের বাঁশদহ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, বছরের পর বছর কেটে গেলেও বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতরে ওই ভবন ভেঙে ফেলা ও নতুন ভবন তৈরির আবেদন জানিয়েও কোনও সাড়া মেলেনি। পাশেই নতুন তৈরি হওয়া একটি ছোট ভবনে পড়ুয়াদের মেঝেতে বসিয়ে গাদাগাদি করে চলছে প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস। দ্রুত ভগ্নপ্রায় স্কুল ভবন ভেঙে নতুন ভবন তৈরির দাবি তুলেছেন অভিভাবক থেকে স্কুলের শিক্ষিকেরা।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এই স্কুলে বর্তমানে ৩৭ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করেন। দু’জন শিক্ষক এবং এক জন পার্শ্বশিক্ষক রয়েছেন সেই স্কুলে। মিড ডে মিল রান্না করার জন্য রয়েছেন দু’জন রাঁধুনি। ১৯৫৯ সালে তৈরি হয় এই প্রাথমিক স্কুলটি। দীর্ঘ কাল একটি মাত্র ভবনেই চলত পঠনপাঠন। ২০০৭ সালে পুরনো ভবনের পাশেই তৈরি হয় নতুন একটি স্কুল ভবন। ২০১০ সাল নাগাদ পুরানো স্কুল ভবনটিতে ফাটল দেখা দেয়। তার পর থেকেই পুরনো ভবনটি ভগ্নপ্রায় অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। ওই ভবনের ভিতরে কংক্রিটের ছাদ ভেঙে ঝুলছে, দেওয়ালের ভিতরে ও বাইরে একাধিক জায়গায় বড় বড় ফাটল তৈরি হয়েছে। স্কুলের তরফে জানানো হয়েছে, ২০১০ সালেই তালা পড়ে যায় পুরনো ভবনটিতে। শিক্ষক, স্থানীয় বাসিন্দা এবং অভিভাবকদের একাংশের আশঙ্কা, বর্ষার মরসুমে যে কোনও দিন পুরনো ভবনটি ভেঙে পড়তে পারে। তাঁদের আরও আশঙ্কা, শিক্ষক শিক্ষিকাদের নজর এড়িয়ে পুরনো ভবনের কাছে চলে যাওয়া খুদে পড়ুয়ারা বড়সড় বিপদের মুখে পড়তে পারে।

এই প্রসঙ্গে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রত্না কুন্ডু সেন বলেন, “২০১০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত স্থানীয় পৌরসভা, বিডিও, ব্লকের স্কুল পরিদর্শক থেকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কাউন্সিল, সমস্ত দফতরে পুরনো ভগ্নপ্রায় ভবনটি ভেঙে ফেলা এবং শ্রেণিকক্ষ বাড়ানোর জন্য একাধিক বার লিখিত আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও সাড়া মেলেনি। বাধ্য হয়ে পাশের ভবনটিতে একটিমাত্র শ্রেণিকক্ষেই স্কুলের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখা হচ্ছে। সেখানেই পড়ুয়াদের বসিয়ে একসঙ্গে সমস্ত ক্লাস নিতে হচ্ছে।” এতে যে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে, তা মেনে নিয়েছেন প্রধান শিক্ষিকা। এই ভাবে স্কুলে পঠনপাঠন চলায় অখুশি অভিভাবকরাও। তাঁদের এক জনের কথায়, “ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়। শিক্ষিকদের নজর এড়িয়ে যদি ছেলেমেয়েরা ভাঙাচোরা ভবনের দিকে চলে যায় এবং কোনও দুর্ঘটনা ঘটে যায়, তখন কী হবে?

Advertisement

এই বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “আমি ছ’মাস হল দায়িত্বে এসেছি। তার আগে থেকেই এই সমস্যা রয়েছে। যে কোনও মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আমি স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে স্কুলের সভাপতি, সকলকে নিয়ে স্কুল পরিদর্শককে জানিয়েছি যাতে দ্রুত ওই ভবনটি ভেঙে ফেলা হয় এবং নতুন শ্রেণি কক্ষ তৈরি করে দেওয়া হয়। আমি আশাবাদী যে, দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’’ স্কুলের এ হেন সমস্যা ও বেহাল দশার কথা মেনে নিয়েছেন চন্দ্রকোনা-২ চক্রের স্কুল পরিদর্শক দীপাঞ্জন মণ্ডলও। তিনি বলেন, “স্কুলের তরফে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছিল নতুন শ্রেণিকক্ষ তৈরি করার জন্য। সেই মতো আমরা প্রস্তাব সর্বশিক্ষা মিশনে পাঠিয়ে দিয়েছি। আর পুরনো ভবনটি ভেঙে ফেলার জন্যও আমরা অনুমতির জন্য আবেদন করছি। এখনও অনুমতি মেলেনি। তা পেয়ে গেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement