সুলতান আহমেদ
পেশায় তিনি মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট। গ্রামে গ্রামে ঘুরে লালারস সংগ্রহ করেন। বৃহস্পতিবারও সেই কাজেই বার হয়েছিলেন। দিনভর কাজ সেরে বাড়ি ফিরে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন বছর তিরিশের সুলতান আহমেদ। ফোনটা আসে রাত ১২টা নাগাদ। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত একটি শিশুকে রক্ত দিতে হবে। সুলতানের কথায়, ‘‘শুনে আর দ্বিতীয় বার ভাবিনি। জানিয়ে দিলাম, যাচ্ছি।’’
তার পরে প্রায় ৭০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে রক্ত দিতে গেলেন মালদহেরই হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট সুলতান। বৃহস্পতিবার মাঝরাতে হরিশ্চন্দ্রপুর থেকে রওনা দেন তিনি। রাস্তায় আবার গাড়ি খারাপ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ভোরবেলা পৌঁছন মালদহ মেডিক্যাল কলেজে। রক্ত দিয়ে ফিরে আসেন হরিশ্চন্দ্রপুরে। ফের লেগে পড়েন নিজের কাজে, হাসি মুখে।
সুলতান পাশে দাঁড়ানোয় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন রতুয়ার মহারাজপুরের বাসিন্দা, থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুর বাবা নুর সেলিম। পেশায় দিনমজুর নুরের তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে সাড়ে তিন বছরের ছোট ছেলেটি থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। তিনি বলেন, “প্রতি মাসে এক ইউনিট করে রক্ত দিতে হয়। গত বুধবার হাসপাতালে ভর্তি করি। কিন্তু ‘ও নেগেটিভ’ গ্রুপের রক্ত ব্লাড ব্যাঙ্কে পাইনি।’’
আরও পড়ুন: নবান্নে জানাল স্বাস্থ্য ভবন, সংক্রমণ বেশি, তবু পরীক্ষা কম কলকাতায়
তার পরেই বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন নুর। সে রকমই এক সংস্থার সদস্য স্নেহা জয়সওয়াল বলেন, ‘‘রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ঘটনাটি জানতে পেরে খোঁজ শুরু হয়। এর পরেই সুলতানের কথা জানতে পারি। ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এত রাতে ঘুম ভেঙে উঠলেও সমস্যার কথা শুনেই সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান তিনি।’’ আর নুরের কথায়, ‘‘উনি না-এলে জানি না কী হত!’’
সুলতান মালদহের বৈষ্ণবনগর থানার নন্দলালপুর গ্রামের বাসিন্দা। আগে কলকাতার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে কাজ করতেন। ১৩ জুলাই মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) হিসেবে হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে যোগ দেন। হরিশ্চন্দ্রপুর থেকে বৈষ্ণবনগরের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার। তাই বাড়ি ছেড়ে আপাতত রয়েছেন হরিশ্চন্দ্রপুরে। সুলতান বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাত ১২টা নাগাদ বাড়িতে ঘুমোচ্ছিলাম। তখনই একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার থেকে খবর পাই, থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত এক শিশুর জন্য ‘ও নেগেটিভ’ রক্ত লাগবে। আমার ব্লাড গ্রুপ সেটাই। ওই সংস্থার গাড়িতে করেই ভোর ৪টে নাগাদ হাসপাতালে পৌঁছই। শেষ পর্যন্ত আমার রক্ত শিশুটির কাজে লেগেছে, তাতেই আমি খুশি।’’
আরও পড়ুন: করোনা-আক্রান্ত ছাত্র, হস্টেল খালি করার নির্দেশ আইআইটিতে
মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সহ অধ্যক্ষ তথা সুপার অমিতকুমার দাঁ বলেন, ‘‘করোনা আবহে শিবির না-হওয়ায় রক্ত সঙ্কট চলছে। যত দ্রুত সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে ছোট ছোট শিবির আয়োজন করা দরকার, না-হলে যে কোনও দিন বড় বিপদ ঘটে যেতে পারে।’’