প্রেমের কাছে তুচ্ছ হয়ে গিয়েছিল ভূতের ভয়। প্রতীকী ছবি।
মানুষের কাছ থেকে পালিয়ে তারা ‘ভূতের’ কাছে আশ্রয় নিয়েছিল!
সতেরো বছরের এক নাবালিকা আর তার বছর ছাব্বিশের প্রেমিক।
দুই বাড়িতে প্রেম নিয়ে আপত্তি। ফলে গত সেপ্টেম্বর মাসে বাড়ি থেকে পালিয়েছিল নদিয়া জেলার এই প্রেমিক-প্রেমিকা। প্রেমিক অত্যন্ত ডাকাবুকো এবং পালানোর অনেক দিন আগে থেকেই গা ঢাকা দেওয়ার যুতসই আস্তানার খোঁজ করেছিলেন বলে পুলিশ সূত্রের খবর। তেমন বাড়িও পেয়ে গিয়েছিলেন বাড়ি থেকে প্রায় ৭০-৭৫ কিলোমিটার দূরে। চাপড়ার দইয়েরবাজারের শেষ প্রান্তে পেল্লায় এক জরাজীর্ণ আদ্যিকালের বাড়ি। তার চার পাশে অন্তত কয়েকশো মিটার জুড়ে জঙ্গল, বাড়ির পিছনে জলাভূমি। এলাকায় হানাবাড়ি নামে কুখ্যাত এবং সেই বাড়ির ত্রিসীমানায় ভূতের ভয়ে দিনের বেলাও কেউ ঘেঁষে না।
কিশোরী প্রেমিকাকে নিয়ে এহেন হানাবাড়িতেই টানা আড়াই মাস গা ঢাকা দিয়েছিলেন ওই যুবক। পরিকল্পনা ছিল, এই ভাবে আর কিছু দিন কাটাতে পারলেই কিশোরী ১৮ বছরে পা দেবে। তখন বিয়েতে আর বাধা থাকবে না। কিন্তু সে আর হল না। ধরা পড়ে গেল যুগল।
সোমবার মধ্যরাতে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ‘হানাবাড়ি অভিযান’-এ নেমে নবদ্বীপ থানায় আট দুঁদে পুলিশ কর্মীরও যে রীতিমতো গা ছমছম করছিল, সে কথা তাঁরা গোপন করেননি। নবদ্বীপের আইসি অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওদের দুঃসাহস দেখে আমরা স্তম্ভিত। এ রকম পরিবেশে কী ভাবে ওরা এত দিন কাটাল, ভাবতে পারছি না।’’
আসলে ভূতের ভয়কে ঢাল করেছিল নবদ্বীপের মহিশুরা অঞ্চলের নাবালিকা আর তার প্রেমিক ধুবুলিয়ার বাসিন্দা যুবক। গত ২১ সেপ্টেম্বর ওই কিশোরী স্কুলে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়ে যায়। প্রেমিকের সঙ্গে সে পালিয়ে আশ্রয় নেয় হানাবাড়িতে। তার পর গত প্রায় আড়াই মাস তাদের হন্যে হয়ে খুঁজেছে পুলিশ। যেন হাওয়ায় উবে গিয়েছিল দু’জন। অবশেষে এক মৎস্যজীবীর দেওয়া খবরের ভিত্তিতে তাদের খোঁজ মেলে। তিনি হানাবাড়ির পিছনের জলাভূমিতে মাছ ধরতে গিয়ে দু’জনকে দেখে ফেলেছিলেন।
মঙ্গলবার ধৃত যুবককে আদালতে হাজির করানো হয়। উদ্ধার হওয়া নাবালিকার গোপন জবানবন্দিও নেওয়া হয়। জেরায় পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই যুবক মাঝে-মাঝে বেরিয়ে কিছু দিনের মতো শুকনো খাবার কিনে আনত। রাতে তারা স্বল্প আলোর লম্ফ জ্বেলে থাকত। প্রেমের কাছে ভূতের ভয় তুচ্ছ হয়ে গিয়েছিল।