Calcutta High Court

শুক্রাণু কার ‘জানেই না’ ক্লিনিক! শিশুর মৃত্যুতে ৫ লাখ ক্ষতিপূরণ প্রত্যাখ্যান করে হাই কোর্টে দম্পতি

সংশ্লিষ্ট ক্লিনিকের দাবি, দম্পতির অনুমতিতেই গোটা পদ্ধতি হয়েছে। যদিও মামলাকারী দম্পতির অভিযোগ, সই জাল করেছে সংস্থা।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৫ ১৮:৫২
Share:
A couple file case in Calcutta High Court against IVF centre for negligence

—প্রতীকী ছবি।

আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তান নিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন! এমন অভিযোগ তুলে এ বার কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হলেন এক দম্পতি। সংশ্লিষ্ট ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের শাস্তি চেয়ে মামলা করলেন তাঁরা।

Advertisement

বিয়ের পর কয়েক বছর কেটে গেলেও কোনও সন্তান হয়নি কলকাতার ওই দম্পতির। তখন তাঁরা ঠিক করেন, ‘টেস্ট টিউব বেবি’ বা আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তান নেবেন! তার পরেই স্বামী-স্ত্রী একটি ক্লিনিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। প্রথম বারের চেষ্টা সফল হয় না, দ্বিতীয় বারও একই অবস্থা। পর পর দু’বার আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তান নেওয়ার চেষ্টা করেও না-হওয়ায় ওই দম্পতিকে ঘিরে ধরেছিল হতাশা। ঠিক করেন তৃতীয় বার, আবার চেষ্টা করবেন। তৃতীয় বারের চেষ্টা সফল হয়। কন্যাসন্তানের জন্ম হয় আইভিএফের মাধ্যমে। সংসারে কন্যাসন্তান আসার আনন্দ বেশি দিন টেকে না। জন্মের পর থেকেই রোগে ভুগতে শুরু করে শিশুটি। দুর্বলও ছিল সে!

অনেক চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করেন ওই দম্পতি। শেষে পরীক্ষা করে জানা যায়, ওই ছোট্ট মেয়ের শরীরে ক্যানসার বাসা বেঁধেছে। জন্ম থেকেই কর্কট রোগে আক্রান্ত সে। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে দম্পতির! চিকিৎসকেরা জানান, শিশুর চিকিৎসা সম্ভব একমাত্র ‘বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট’ পদ্ধতিতে। কিন্তু ওই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে চিকিৎসকেরা দেখতে পান শিশুর সঙ্গে তাঁর বাবা-মায়ের ‘বোন ম্যারো’র কোনও মিল নেই। শুধু তা-ই নয়, ডিএনএ-ও মিলছে না!

Advertisement

সময় যত গড়ায় শিশুর শারীরিক অবস্থা ততই অবনতি ঘটে। দ্রুত চিকিৎসা শুরু না-করলে তাকে বাঁচানো সম্ভব নয়! বার বার চিকিৎসকদের কাছ থেকে একই কথা শুনে ওই দম্পতি সংশ্লিষ্ট ক্লিনিকের কর্তৃপক্ষকে চিঠি লেখেন। আবেদন করেন, যাতে ওই শিশুর ‘বায়োলজিক্যাল’ বাবা-মায়ের খোঁজ দেওয়া হয়। জানতে চাওয়া হয়, কার শুক্রাণু ব্যবহার করা হয়েছে। মামলাকারীর আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তীর দাবি, প্রথমে ওই ক্লিনিক সেই পরিচয় জানাতে চায় না। বারংবার অনুরোধ করার পর তারা একটি নাম জানায়। পরে তাঁর খোঁজ করে জানা যায়, ওই শিশুকন্যার সঙ্গে ক্লিনিকের দেওয়া নামের ব্যক্তির ডিএনএ-ও মিলছে না! এই টানাপড়েনের মধ্যেই ২০২৩ সালে মাত্র চার বছর বয়সে মৃত্যু হয় শিশুটির। বলা চলে, এক প্রকার বিনা চিকিৎসাতেই মৃত্যু হয়েছিল তার। সংশ্লিষ্ট ওই ক্লিনিকের দাবি, দম্পতির অনুমতিতেই গোটা পদ্ধতি হয়েছে। যদিও মামলাকারী দম্পতির অভিযোগ, সই জাল করেছে সংস্থা।

সংশ্লিষ্ট ওই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ তুলে স্বাস্থ্য কমিশনের দ্বারস্থ হন ওই দম্পতি। অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত কমিটি শোনে তাঁদের অভিযোগ। পুরো বিষয় খতিয়ে দেখে ওই ক্লিনিকেরই গাফিলতি বলে জানায়। একই সঙ্গে পাঁচ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেয়। যদিও ওই দম্পতির বক্তব্য, ক্ষতিপূরণ কী হবে! টাকা চাই না, যে ক্লিনিকের গাফিলতি বা প্রতারণার কারণে তাঁরা সন্তানহারা হলেন, তার শাস্তি চান! সেই মর্মেই কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেন। বিচারপতি অমৃতা সিংহের এজলাসে চলতি সপ্তাহেই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement