অয়ন শীল এবং সুজিত বোস। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
পুর নিয়োগ মামলার তদন্তে নেমে একটি নথিতেই পাওয়া গিয়েছিল রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর নাম। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির সূত্রে এমনই জানা গিয়েছে। এর আগে নিয়োগ মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হন অয়ন শীল। ইডি সূত্রের খবর, অয়নের বাড়ি এবং অফিসে তল্লাশি চালিয়ে তদন্তকারীরা যে নথি বাজেয়াপ্ত করেন, তাতেই পাওয়া যায় সুজিতের নাম।
তবে ইডি সূত্রের খবর, ওই নথিতে ‘এসবি’ সাঙ্কেতিক নামে সুজিতের পরিচয় দেওয়া হয়। সুজিতের নাম এবং পদবির আদ্যক্ষর মিলিয়ে তৈরি হয়েছিল এই সাঙ্কেতিক নাম। রাজ্যের আর এক বিধায়কের নামও রয়েছে ওই নথিতে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, ওই নথিতে পুরসভার বিভিন্ন পদে বিভিন্ন জনকে চাকরি দেওয়ার জন্য নাম সুপারিশ করেন সুজিত। সুজিত, রাজ্যের আর এক বিধায়ক এবং বেশ কয়েক জন পুরসভার পুরপ্রধানের সুপারিশক্রমেই মেডিক্যাল অফিসার, মজদুর, ওয়ার্ড মাস্টার, করণিক, গাড়িচালক ইত্যাদি পদে একাধিক ব্যক্তিকে নিয়োগ করা হয়েছিল বলে জানান অয়ন।
প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার কুন্তল ঘোষ এবং শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সূত্র ধরে প্রোমোটার অয়নের নাম প্রকাশ্যে আসে। ঘটনার সূত্রপাত গত মার্চ মাসের ১৯ তারিখ। সল্টলেকে অয়নের অফিস এবং হুগলিতে তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি। সেই সময় দিস্তা দিস্তা উত্তরপত্র (ওএমআর শিট)-এর পাশাপাশি ২৮ পাতার একটি নথি পান তদন্তকারীরা। আপাতদৃষ্টিতে তা প্রাথমিকে নিয়োগ সংক্রান্ত নথি মনে করা হলেও পরে দেখা যায় ওই নথির মধ্যে রয়েছে একাধিক পুরসভার প্রার্থী তালিকা এবং সেই সংক্রান্ত সুপারিশ। বাজেয়াপ্ত সেই নথির মধ্যেই প্রার্থীতালিকায় থাকা নামের পাশে বেশ কিছু ‘কোড ওয়ার্ড’ এবং সাঙ্কেতিক চিহ্ন পান তদন্তকারী আধিকারিকেরা।
ইডি সূত্রের খবর, তাদের জেরায় অয়ন জানিয়েছেন, পুর নিয়োগে দুর্নীতি ২০১৪-’১৫ সাল থেকে শুরু হয়েছিল। ঘটনাচক্রে, ২০১৬ সালে দক্ষিণ দমদম পুরসভার উপপ্রধান ছিলেন সুজিত। ওই সময়ের মধ্যে কমবেশি ৬০টি পুরসভায় কর্মী নিয়োগের কাজের বরাত অয়নের সংস্থা ‘এবিএস ইনফোজ়োন’ পেয়েছিল বলে ইডি আধিকারিকদের জানান অয়ন। সেই সময় এক একটি পুরসভায় প্রায় ১০০ জন করে নিয়োগ করা হয়েছিল। তদন্তকারী সংস্থা মনে করছে, সেই হিসাবে ৬,০০০ নিয়োগ হয়েছিল অয়নের সংস্থার মাধ্যমে। তার মধ্যে প্রায় ৫,০০০ নিয়োগের ফলাফল ‘বিকৃত’ করা হয়েছিল বলেও মনে করছেন ইডি কর্তারা।