২০১৫ সালে উচ্চ প্রাথমিকে হিন্দি শিক্ষিকার চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন পিয়ালি। প্রতীকী ছবি।
তাঁর অবস্থা অনেকটা গ্রিক পুরাণের টেন্টালাসের মতো। অদূরেই জল। কিন্তু তিনি পান করতে পারছেন না।
টেন্টালাসের শাস্তি হয়েছিল। কিন্তু উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থী, শান্তিনিকেতনের শ্যামবাটির বাসিন্দা পিয়ালি পাসোয়ান জানেন না, তাঁর অপরাধ কী? পদ খালি। লিখিত নিয়োগ পরীক্ষা, ইন্টারভিউ— সব ধাপ পেরিয়েও তাঁর নিয়োগ হয়নি। অথচ মেধা-তালিকা বেরোলেই পিয়ালির চাকরি পেয়ে যাওয়ার কথা। কারণ, তাঁর কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। এমন নিশ্চিত চাকরির অদূরে ঠায় দাঁড়িয়ে তিনি। টেন্টালাসের মতোই।
আট বছর ধরে অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু মেধা-তালিকাই বেরোচ্ছে না। পিয়ালি বললেন, “তফসিলি জাতি ক্যাটিগরিতে বাংলা মাধ্যম স্কুলে হিন্দি শিক্ষকের শূন্য পদ ১২টি। লিখিত পরীক্ষায় পাশ করে ইন্টারভিউ দিয়ে ১২টি শূন্য পদের জন্য প্রার্থী এখন একমাত্র আমিই। মেধা-তালিকা বেরোলেই আমার নিয়োগ নিশ্চিত।”
২০১৫ সালে উচ্চ প্রাথমিকে হিন্দি শিক্ষিকার চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন পিয়ালি। তিনি বলেন, “সাধারণ ক্যাটিগরিতেও বাংলা মাধ্যম স্কুলে হিন্দি শিক্ষকের জন্য ৩৫টি শূন্য পদের মধ্যে মাত্র আট জন প্রার্থী রয়েছেন। সেখানেও মেধা-তালিকা বেরোলেই আমার চাকরি হয়ে যাবে।”
ভরসা এখন আন্দোলন। ঠা ঠা রোদে মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে উচ্চ প্রাথমিকের বিক্ষোভ মঞ্চে বসে পিয়ালি বলেন, “স্বামী একটি খাবার প্রস্তুতকারী সংস্থায় হোম ডেলিভারির কাজ করেন। খুব সামান্য আয়। ১২ বছরের মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। চাকরিটা খুব দরকার।”
পশ্চিমবঙ্গ আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা সুশান্ত ঘোষ জানান, পিয়ালির মতো বেশ কিছু চাকরিপ্রার্থী মেধা-তালিকা বেরোনোর অপেক্ষায় বসে আছেন। যেমন বাংলা বিষয়ে তফসিলি উপজাতির ক্ষেত্রে মোট শূন্য পদ ১১০১টি। উপযুক্ত প্রশিক্ষিত প্রার্থী না-পাওয়ায় ইন্টারভিউয়ে ডাক পেয়েছেন ৩৫৭ জন প্রার্থী। ওঁরা সবাই ইন্টারভিউ দিয়ে বসে আছেন। আবার অঙ্ক, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন বিভাগে তফসিলি জাতি ক্যাটিগারিতে মোট শূন্য পদ ১০৫৭টি। উপযুক্ত প্রশিক্ষিত প্রার্থী না-পাওয়ায় ইন্টারভিউয়ে ডাক পেয়েছেন ১০২২। ‘‘যে-হেতু এই সব ক্যাটিগরিতে শূন্য পদের তুলনায় প্রার্থী কম, তাই মেধা-তালিকা বেরোলেই এদের নিয়োগ হওয়ার কথা,” বলেন সুশান্ত। কবে বেরোবে মেধা-তালিকা?
এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের এক কর্তা বলেন, “উচ্চ প্রাথমিকের মেধা-তালিকা প্রকাশ নিয়ে ১৭ এপ্রিল শুনানি হয়। সেখানে মেধা-তালিকা নিয়ে কিছু প্রশ্ন ওঠায় আদালত অতিরিক্ত হলফনামা জমা দিতে বলেছিল। কমিশন ২০ এপ্রিল অতিরিক্ত হলফনামা জমা দেয়। পরবর্তী শুনানি ১১ মে। আশা করছি, দ্রুত মেধা-তালিকা প্রকাশ করা হবে।”