বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ফাইল চিত্র।
নতুন রাজ্যপাল হিসেবে সি ভি আনন্দ বোস শপথ নেওয়ার পরেই তাঁর সঙ্গে দেখা করে এলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। অতিথি হিসেবে তাঁকে মর্যাদার আসন দেওয়া হয়নি, এই অভিযোগে বুধবার সকালে রাজভবনে নতুন রাজ্যপালের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যাননি বিরোধী দলনেতা। তবে তার কিছু ক্ষণ পরেই আলাদা ভাবে রাজভবনে গিয়েছিলেন তিনি, ছিলেন মিনিট কুড়ি। রাজভবন থেকে বেরিয়ে প্রশ্নের উত্তরে শুভেন্দুর মন্তব্য, ডিসেম্বরে ‘বড় চোর’ ধরা পড়বে! তিনি কোনও নাম না করলেও তৃণমূলের তরফে ফিরহাদ হাকিম ফের চ্যালেঞ্জ করেছেন, সৎসাহস থাকলে শুভেন্দু নাম বলুন!
রাজভবনে এ দিন রাজ্যপাল বোসের শপথের অনুষ্ঠানে অতিথিদের মধ্যে প্রথম সারিতে ছিল মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যের কয়েক জন সাংসদ প্রমুখের বসার আসন। তার পিছনে ছিল বিরোধী দলনেতার নাম লেখা চেয়ার। তাঁর পাশে ছিল বিজেপি-ত্যাগী বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী, বিশ্বজিৎ দাসদের আসন। শুভেন্দুর অভিযোগ, ওই অনুষ্ঠানের আয়োজক তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর ‘অসাংস্কৃতিক’ আচরণ করেছে বিরোধী দলনেতার সঙ্গে। নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হেরে গিয়েছিলেন। সেই ‘হিংসা’র জেরেই দলছুট বিধায়কদের (যাঁদের বিরুদ্ধে বিধায়ক-পদ খারিজের অভিযোগের শুনানি চলছে) সঙ্গে আসন দিয়ে বিরোধী দলনেতাকে অসম্মান করা হয়েছে বলেও শুভেন্দু অভিযোগ করেছেন। তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, আসন বিন্যাসের ব্যবস্থা তারা করেনি। আর রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ পাল্টা বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধেই ‘অসৌজন্যে’র অভিযোগ করেছেন। তাঁর দাবি, ‘চোর, তোলাবাজ, ব্ল্যাকমেলার’ শুভেন্দু সম্পর্কে সব তথ্য নতুন রাজ্যপালকেও দেওয়া হবে।
বিরোধী দলনেতাকে ‘মর্যাদা’ দেওয়া হচ্ছে না এবং রাজ্যের অন্য বিজেপি সাংসদদের অনুষ্ঠানে ডাকা হয়নি, এই অভিযোগ করে এ দিন রাজভবনে পৌঁছেও শপথ গ্রহণে না থেকেই বেরিয়ে আসেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। অনুষ্ঠানের পরে বিরোধী দলনেতার ক্ষোভ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে রাজ্যপাল বোস মন্তব্য করেন, ‘‘মনে রাখুন, আমি কিন্তু এখনও মাত্র কয়েক ঘণ্টার রাজ্যপাল!’’ কিছু ক্ষণ পরেই বিরোধী দলনেতাকে সময় দেন রাজ্যপাল। ডিসেম্বরে সরকার ভেঙে যাওয়া সম্পর্কিত যে দাবি শুভেন্দু-সহ বিজেপি নেতারা বারবার করছেন, সেই বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে রাজভবন থেকে বেরোনোর পথে বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘আপনারা যে অর্থে সরকার ভাঙার কথা বলছেন, আমরা সেটা বলছি না। আমরা বলছি, ডিসেম্বরে বড় চোর ধরা পড়বে! রাজ্যের সব চেয়ে বড় চোর!’’ তাঁরা বিধায়ক ভাঙানোর খেলায় নেই বলেও দাবি করেন শুভেন্দু। তাঁর ওই মন্তব্যের জবাবে রাজ্যের মন্ত্রী ও তৃণমূল নেতা ফিরহাদের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘সৎসাহস থাকলে উনি বলুন, কে বড় চোর! চাইলে সরকার ভেঙে দেখতে পারে। সরকার ভাঙার কথা বলবে কী করে? তা হলে তো গোটা রাজ্যের মানুষের বিরুদ্ধে যেতে হয়!
বিধানসভার অধিবেশনে এ দিন চুরি-দুর্নীতি নিয়ে হইচই করে স্লোগান দিয়েছিলেন শুভেন্দু-সহ বিজেপি বিধায়কেরা। দ্বিতীয়ার্ধে এই নিয়ে নিন্দা-প্রস্তাব আনেন পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। এই সূত্রেই তাঁর আচরণের জন্য বিরোধী দলনেতার উদ্দেশে সতর্ক-বার্তা দেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধী দলনেতা তখন ছিলেন না।