তাণ্ডব: উচ্চ মাধ্যমিকে নম্বর কম পাওয়ার অভিযোগ তুলে মুর্শিদাবাদের ডোমকলের রায়পুর হাইস্কুলে দোতলা থেকে বেঞ্চ ছুড়ে ফেলে বিক্ষোভ দেখান ছাত্রছাত্রীরা। সোমবার। ছবি: সফিউল্লা ইসলাম।
বিনা-পরীক্ষার উচ্চ মাধ্যমিকে এ বার যে আঠারো থেকে কুড়ি হাজার পড়ুয়া ফেল করেছিলেন, সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলির পাঠানো নতুন নম্বরের ভিত্তিতে তাঁদের ৯০ শতাংশই পাশ করে গিয়েছেন। সোমবার রাতে এ কথা জানান উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী মহুয়া দাস। তাঁর আশ্বাস, বিভিন্ন জেলায় যাঁরা বাকি থাকছেন, আবেদনের ভিত্তিতে তাঁদের বিষয়টিও সহানুভূতির সঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে।
রাতে সংসদ-সভানেত্রীর এই ঘোষণার আগে, সারা দিনই কলকাতা-সহ বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে পড়ুয়াদের বিক্ষোভ চলে। পরিস্থিতি জটিল হতে থাকায় রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী নির্দেশ দেন, যেখানে যেখানে অকৃতকার্য পড়ুয়াদের বিক্ষোভ চলছে, সেখানে জেলা প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিক্ষোভ মেটাতে রাজ্য সরকার ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ কী পদক্ষেপ করছে, স্কুলে স্কুলে গিয়ে তা জানাতে হবে এসডিও, বিডিও এবং জেলা স্কুল পরিদর্শকদের। ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
একই সঙ্গে মুখ্যসচিব জানিয়ে দেন, যে-সব স্কুল এখনও তাদের ফলাফলের বিষয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সঙ্গে আলোচনা করেনি, অবিলম্বে তারা যেন সংসদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পুরো বিষয়টি ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে মেটাতে হবে বলে সংসদকে জানানো হয়েছে।
সংসদ-সভানেত্রী সন্ধ্যায় একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানান, অকৃতকার্য ছাত্রছাত্রীদের অসন্তোষের বিষয়ে সংসদ ইতিমধ্যে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বিদ্যালয়গুলি যেন ২৯ জুলাইয়ের মধ্যে সংসদের আঞ্চলিক কার্যালয়ে যোগাযোগ করে। পড়ুয়াদের ৩০ জুলাই সংশ্লিষ্ট স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। তার কয়েক ঘণ্টা পরে মহুয়াদেবী জানান, প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা নতুন করে যে-নম্বর পাঠিয়েছেন, তার সুবাদেই ৯০ শতাংশ অকৃতকার্য পড়ুয়া উতরে গিয়েছেন।
সংসদ সূত্রের খবর, সল্টলেকের তাদের কার্যালয়ে ৬০-৬৫ জন প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকা উচ্চ মাধ্যমিকে নিজেদের স্কুলের ফল নিয়ে অভিযোগ জানাতে আসেন। সেই সব অভিযোগ গৃহীত হয়েছে। ই-মেলেও অভিযোগ পাঠিয়েছেন প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
ফল নিয়ে অভিযোগ ওঠার পরে আরামবাগের একটি স্কুলের বেশ কয়েক জন পড়ুয়ার নম্বর বেড়েছিল। প্রশ্ন উঠছিল, তা হলে তো এ বার যে-কোনও পরীক্ষার্থীই নম্বর বাড়ানোর আবেদন করতে পারেন। তখন কী হবে? অনেক পরীক্ষার্থীর প্রশ্ন, মূল্যায়নের সময় ভুলত্রুটি বা
অসঙ্গতি সংসদের নজরে এল না কেন? সংসদ অবশ্য জানিয়েছে, স্কুলগুলি যে-নম্বর পাঠিয়েছে, মূল্যায়ন হয়েছে তারই ভিত্তিতে। তাই স্কুলগুলিকে বলা হয়েছে, তারা যদি মনে করে, যে-সব নম্বর তারা পাঠিয়েছিল, তাতে কিছু ভুল ছিল বা কিছু নম্বর পাঠানো যায়নি, তা হলে তারা যেন সেই নম্বরগুলি সংশোধন করে আবার পাঠায়। সেই সব নম্বর খতিয়ে দেখা হবে। আগে অকৃতকার্যদের নম্বর যাচাই করা হচ্ছে। যাঁরা নম্বর রিভিউ করতে চান, তাঁদের বিষয়টি পরে দেখা হবে। সংসদের দাবি, তাদের বিশেষ মূল্যায়নের পদ্ধতিতে ভুল ছিল না। বেশ কিছু স্কুলের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানাচ্ছেন, কিছু স্কুল ভুল নম্বর পাঠাতে পারে, তবে তা সার্বিক চিত্র নয়। কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেসের সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, “ইতিমধ্যে বেশ কিছু স্কুলের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, যারা ঠিক সময়ে ঠিকঠাক নম্বর পাঠিয়েছিল। তা সত্ত্বেও সংসদ যে-পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, পরীক্ষার্থীরা ২০ থেকে ২৫ নম্বর কম পেয়েছে।”
নম্বর বাড়ানো এবং অকৃতকার্যদের পাশ করানোর দাবিতে এ দিনেও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ হয়। মুর্শিদাবাদের ডোমকলের রায়পুর হাইস্কুলের তরফে কম নম্বর দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে সদ্য পাশ করা ছাত্রছাত্রীরা সেখানে বিক্ষোভ দেখান। উলুবেড়িয়া-২ ব্লকের কল্যাণব্রত সঙ্ঘ উচ্চ বিদ্যালয়ের অকৃতকার্য ৫০ জন পরীক্ষার্থী বিক্ষোভ দেখান অতিরিক্ত জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিসে। তেহট্ট হাইস্কুলের শ’খানেক অকৃতকার্য পরীক্ষার্থী এবং তাঁদের অভিভাবকেরা অতিরিক্ত জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিসে গিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। বাসন্তীর ঋতু ভকত হাইস্কুলের পড়ুয়ারা বাসন্তী চুনাখালি রাস্তা আটকে দেন। পুলিশের হস্তক্ষেপে প্রায় দু’ঘণ্টা পরে অবরোধ ওঠে। নাকতলার আনন্দ আশ্রম বালিকা বিদ্যাপীঠের অকৃতকার্য ছাত্রী এবং তাঁদের অভিভাবকেরা এনএসসি বসু রোড অবরোধ করেন। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে বিক্ষোভ ওঠে। অকৃতকার্য ৬৬ জন ছাত্রীকে পাশ করানোর দাবিতে থুবার মোড়ে প্রায় দু'ঘণ্টা টাকি রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান ষষ্ঠীবর বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। পুলিশ এবং স্কুল-কর্তৃপক্ষের তরফে সংসদকে জানিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থাগ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় বিক্ষোভ তুলে নেওয়া হয়।