পুরুলিয়া শহরের হাসপাতাল মোড়ে শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
এক লাফে পুরুলিয়া জেলায় দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হল ৬০৫। শুক্রবার জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। এটাই গত এক বছরের রেকর্ড। আশা জাগিয়ে বেড়েছে দৈনিক সুস্থতার সংখ্যাও (১০৬ জন)। এ দিন পর্যন্ত জেলায় অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা ২,৯৭৫।
মঙ্গলবার এক দিনে ৪২৯ জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। বুধবার তা দাঁড়ায় ৩৮০, বৃহস্পতিবার কমে হয়েছিল ৩২৪। চলতি মাসের গোড়ায় জেলা জুড়ে সংক্রমণের হার যেখানে ছিল ১.৯২ শতাংশ, শুক্রবার তা পৌঁছে যায় ২৩.৫ শতাংশে।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলার আটটি ব্লকে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল শতাধিক। শুক্রবার সে তালিকায় যোগ হয়েছে আরও তিনটি ব্লক— মানবাজার ১ (১০৫), নিতুড়িয়া (১১৮) এবং পাড়া (১১৬)। সংক্রমণে এ দিনই দুশোর গণ্ডি অতিক্রম করেছে বলরামপুর (২২০), কাশীপুর (২১৯) ও রঘুনাথপুর ২ (২০৪)। এ ছাড়া, ঝালদা ১ (১৭৬), পুঞ্চা (১৮৪), পুরুলিয়া ১ (১৭২), পুরুলিয়া ২ (১৬৫), রঘুনাথপুর ১ (১৭০) ব্লকে উদ্বেগজনক ভাবে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। একে ভোট গিয়েছে। তার উপরে গাজনের মেলা ও বিভিন্ন হাটের ভিড় থেকেও সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশ।
পুরুলিয়া শহরেও গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার শহরে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫২৯। শুক্রবার সেই সংখ্যা পৌঁছেছে ৬৩৩-য়ে। পুরুলিয়া শহরের পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্স করেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের প্রধান সচিব খলিল আহমেদ। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিক সুমিত বক্সী বলেন, ‘‘বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে। সে জন্য আমরা এ দিন থেকে তিনটি গাড়ির ব্যবস্থা করেছি।’’
তবে এত কিছুর পরেও মানুষের অকারণে বাইরে বেরনো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। মাস্ক ছাড়া, লোকজনও রাস্তাঘাটে দেখা যাচ্ছে যথেষ্ট। এ দিনও পুরুলিয়া শহরের বিভিন্ন রাস্তায় দেখা গিয়েছে, থিকথিকে ভিড়। কারও মাস্ক রয়েছে, কারও নেই।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘এই পরিস্থিতিতেও যদি রাস্তায় বেরোনো মানুষজন মাস্ক না পরেন, সংক্রমণের হার কোথায় গিয়ে থামবে জানা নেই।’’ পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক তথা পুরুলিয়া মেডিক্যালের চিকিৎসক নয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘এক দিনে ৬০৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে কতটা মারাত্মক পরিস্থিতির মধ্যে আমরা দাঁড়িয়ে রয়েছি। তারপরেও মেলা, গাজন সবই হচ্ছে। বাজারে ভিড় থিকথিক করছে।’’ তাঁর মতে, প্রশাসনের তরফে মাস্ক পরার আবেদন জানালেই শুধু হবে না, রাস্তায় নেমে পুলিশ-প্রশাসনের আরও তৎপর হওয়া দরকার। জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার রাস্তায় নামছেন। তাঁরা যেখানে যাচ্ছেন, সেখানে কাজ হচ্ছে। তারপরে যে কে সেই। অন্তত মাস্ক পরতে বাধ্য করা হোক পথে বেরনো জনতাকে।
পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রশাসন যথারীতি মানুষের কাছে আবেদন জানাচ্ছে, পুলিশও রাস্তায় রয়েছে। পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হচ্ছে।’’