দেখা: পরিজনদের সঙ্গে লীলা। নিজস্ব চিত্র
বছর দেড়েক ধরে হন্যে হয়ে মা-কে খুঁজেছেন ছেলেমেয়েরা। ফিরে পাওয়ার আশা একটু একটু করে নিভে যাচ্ছিল। এমন একটা সময়ে পুরুলিয়া থেকে খবর গেল— তিনি রয়েছেন একটি সংস্থার তত্ত্বাবধানে। প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না পরিজনেরা। শনিবার বাগডোগরা থেকে ছেলে, পুত্রবধূ, মেয়ে এবং জামাই পুরুলিয়া শহরে এসে নিয়ে গিয়েছেন লীলা তামাং নামের বছর ছেচল্লিশের ওই মহিলাকে।
তবে বৃত্তান্তের একটা বড় অংশ ঘটেছে রাজস্থানে।
রাজস্থানের ভরতপুরে রয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রধান অফিস। রাস্তায় অসহায় যাঁরা ঘুরে বেড়ান, তাঁদের সেখানে নিয়ে গিয়ে শুশ্রূষা করা হয়। চেষ্টা করা হয় বাড়ি ফেরানোর। গত মাসের শেষে ভরতপুর থেকে লীলাকে উদ্ধার করে ওই সংস্থা। নাম-ঠিকানা কিছুই বলতে পারছিলেন না। তবে বাংলা আর হিন্দি মিলিয়ে কথা বলছিলেন। সংস্থার মুখপাত্র শৈলেন্দ্র ত্যাগী জানান, সেটা শুনে আঁচ করা গিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের কোথাও কিছু সূত্র পাওয়া যেতে পারে।
এ দিকে, সম্প্রতি পুরুলিয়া শহরে ওই সংস্থার একটি শাখা চালু হয়েছে। ৩০ মে লীলাকে ভরতপুর থেকে পাঠানো হয় পুরুলিয়ায়। সংস্থার সদস্য সত্যদাস কণ্ডু জানান, এখানে কাউন্সেলিং করে জানা যায়, তাঁর বাড়ি দার্জিলিং-এর বাগডোগরায়। থানার মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয় পরিবারের সঙ্গে। শনিবার পুরুলিয়ায় এসে লীলার ছেলে কৃষ্ণ তামাং বলেন, ‘‘২০১৭ সালের জানুয়ারিতে এক দিন আচমকা রহস্যজনক ভাবে মা উধাও হয়ে যান। কিছু মানসিক সমস্যা ছিল। কিন্তু এমনটা করবেন ভাবতেই পারিনি।’’ তিনি জানান, মায়ের খোঁজে হন্যে হয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। পুলিশে নিখোঁজের ডায়েরি করেছেন। খোঁজ করেছেন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতেও। কৃষ্ণ বলেন, ‘‘মা যে বেঁচে রয়েছেন সেই আশাও প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলাম।’’
এ দিন মেয়ে সঞ্জনা রাইকে দেখে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন লীলা। দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পরে সংস্থার প্রতিনিধিরা তাঁদের ট্রেনে তুলে দিয়ে এসেছেন। তবে কী ভাবে তিনি রাজস্থানে পৌঁছেছিলেন, দিনের শেষে সেটা রহস্যই থেকে গিয়েছে। লীলা বলেন, ‘‘ট্রেনে চড়েছিলাম। তার পরে আর কিছু মনে নেই।’’