Jaynagar Rape-Murder Case

৪ অক্টোবর-৬ নভেম্বর: জয়নগরে নাবালিকার দেহ উদ্ধার, তদন্ত, বিচার এবং শাস্তি ঘোষণার ৬৪ দিন

গত ৪ অক্টোবর জয়নগর থানা এলাকার একটি পুকুর থেকে উদ্ধার হয় ন’বছরের এক শিশুর দেহ। ওই দেহ উদ্ধারের পর থেকে নানা ঘটনাপ্রবাহের সাক্ষী থেকেছে এ রাজ্য।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০:২৯
Share:

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের এক নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় মুস্তাকিন সর্দার নামে এক যুবককে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা ঘোষণা করল বারুইপুরের ফাস্ট অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট জাজেস কোর্ট। শুক্রবার বারুইপুরের অতিরিক্ত জেলা দায়রা ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক সুব্রত চট্টোপাধ্যায় মুস্তাকিনকে ফাঁসির সাজা শোনান। ঘটনার ৬৪ দিনের মাথায় সাজা ঘোষণা। কী কী ঘটল এই ৬৪ দিনে?

Advertisement

গত ৪ অক্টোবর জয়নগর থানা এলাকার একটি পুকুর থেকে উদ্ধার হয় ন’বছরের এক শিশুর দেহ। ওই দেহ উদ্ধারের পর থেকে নানা ঘটনাপ্রবাহের সাক্ষী থেকেছে এ রাজ্য। অভিযুক্তকে গ্রেফতার, তদন্ত, ‘দ্রুত’ বিচার শেষ এবং সাজা ঘোষণা— গোটাটাই ৬৪ দিনে শেষ।

গত ৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল ওই নাবালিকা। মেয়ে বাড়ি না-ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন পরিবারের লোকজন। স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়েছিল প্রথমে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগও ওঠে। এর পর গভীর রাতে বাড়ির কাছের একটি জলাজমি থেকে উদ্ধার হয় ওই নাবালিকার দেহ। তার পর থেকেই উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। ৫ অক্টোবর ভোরে অভিযুক্ত মুস্তাকিনকে গ্রেফতার করে জয়নগর থানার পুলিশ।

Advertisement

অভিযুক্তকে গ্রেফতারির পরেও নেমেনি ক্ষোভে আগুন। ৫ অক্টোবর সকাল থেকেই দফায় দফায় চলতে থাকে বিক্ষোভ। দোষীর শাস্তির দাবিতে পথে নামেন স্থানীয়েরা। পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগও ওঠে। মহিষমারি পুলিশ ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। উত্তেজিত জনতাকে ঠেকাতে গিয়ে আহত হন বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী। পরিস্থিতি সামাল দিতে এলাকায় নামানো হয় র‌্যাফ। পুলিশি ধরপাকড়ের ফলে বিক্ষোভকারীরা পিছু হটলেও উত্তেজনা প্রশমিত হয়নি। ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় রাজনৈতিক তরজা। সরব হয় বাংলার বিজেপি এবং সিপিএম। জয়নগরেও ওঠে বিচারের দাবি। সেই সঙ্গে পুলিশের বিরুদ্ধে অনাস্থার কথাও শোনা যায় বিরোধীদের গলায়। এই ঘটনায় বিরোধীদের কটাক্ষ করলেও বাংলার শাসকদল তৃণমূলও জয়নগরকাণ্ডের নিন্দা করে। ঘটনার দ্রুত তদন্ত করে শাস্তির আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পরিবার ও গ্রামবাসীদের দাবি, নাবালিকা নিখোঁজ হওয়ার পর পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু প্রথমে পুলিশের ভূমিকা সদর্থক ছিল না। পুলিশ যদি প্রথমেই তৎপর হত, তা হলে নাবালিকার এই পরিণতি হত না। পুলিশ অবশ্য সেই অভিযোগ মানেনি। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেই ঘটনার চার দিনের মাথায় বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করে তদন্ত শুরু করে বারুইপুর থানার পুলিশ। সিটের মাথায় রাখা হয় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জ়োনাল) রূপান্তর সেনগুপ্ত এবং বারুইপুরের এসডিপিও অতীশ বিশ্বাসকে।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

তবে এর মাঝেই কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য পুলিশ। মৃতার বাবার দুই আবেদন নিয়েই আদালতে যান তদন্তকারীরা। মৃতার বাবা আবেদন করেন, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতেই যাতে মেয়ের দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। পাশাপাশি, কোনও কেন্দ্রীয় হাসপাতালে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করার আবেদনও করেন তিনি। এই দুই আবেদন নিয়ে প্রথম নিম্ন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল পুলিশ। নিম্ন আদালত সেই আবেদন খারিজ করে দেওয়ায় হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় পুলিশ। শুনানিতে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ কল্যাণীর এমসে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি, পুলিশকে পকসো আইনের ধারা যোগ করারও কথাও বলেন।

আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে শুরু হওয়া প্রতিবাদের সঙ্গে জুড়ে যায় জয়নগরের ঘটনা। দুই ঘটনাকে এক বন্ধনীতে রেখে বিচারের দাবি তোলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। ধর্মতলায় তাঁদের অনশনমঞ্চ থেকেও বার বার শোনা যায় জয়নগরের নির্যাতিতার কথা। সেই আবহেই চলে পুলিশি তদন্ত। ঘটনার ২৬ দিন পর, গত ৩০ অক্টোবর চার্জশিট পেশ করে তদন্তকারী দল। ৫ নভেম্বর থেকে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। মোট ৩৬ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল ওই মামলায়। বারুইপুরের ফাস্ট অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট জাজেস কোর্টে বিচারপ্রক্রিয়া চলে।

এক মাস পর, বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করে অভিযুক্ত মুস্তাকিনকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। ৫ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আর ৬ ডিসেম্বর শুক্রবার সাজা ঘোষণা করেন বিচারক। রায়দানের সময় বিচারক মুস্তাকিনকে ফাঁসির নির্দেশ দেন। পাশাপাশি, মৃতার পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশও দেন তিনি। ঘটনার দু’মাসের মধ্যেই বিচার শেষ হওয়ায় ‘খুশি’ রাজ্য পুলিশ। রায়দানের পরেই বিষয়টি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে তারা। তার আধ ঘণ্টার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীও পোস্ট করে নিম্ন আদালতের রায়কে স্বাগত জানান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement