ছেলেধরা সন্দেহে ভবঘুরে যুবককে গণপিটুনি। — নিজস্ব চিত্র।
বনগাঁয় ছেলেধরা ভেবে গণপিটুনির ঘটনায় আগেই গ্রেফতার হয়েছিলেন দু’জন। রবিবার আরও চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জনে জানালেন বনগাঁর এসডিপিও অর্ক পাঁজা। সেই সঙ্গে গুজব রটানোর অভিযোগেও এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রবিবার সাংবাদিক বৈঠক করে পুলিশ। সেখানে এসডিপিও জানান, সম্পূর্ণ গুজব ছড়ানো হয়েছে। যাঁদের উপর হামলা হয়েছে, তাঁরা কেউই ছেলেধরা নন। ধৃতদের সোমবার বনগাঁ আদালতে হাজির করানো হবে। একই সঙ্গে গাইঘাটার ঘটনাতেও দোষীদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে বলে জানান এসডিপিও। তাঁর কড়া বার্তা, ‘‘কেউ গুজবে কান দেবেন না। কোনও রকম সন্দেহ হলে পুলিশকে জানান। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। যাঁরা গুজব ছড়াবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
বারাসত, অশোকনগর, খড়দহের পর শনিবার রাতে ছেলেধরা সন্দেহে এক যুবককে মারধরের অভিযোগ ওঠে বনগাঁয়। বনগাঁ পুরসভা এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঠাকুরপল্লিতে রাস্তায় ভবঘুরে এক যুবককে ঘুরতে দেখে সন্দেহ হয় স্থানীয়দের। দ্রুত গুজব ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। স্থানীয়দের সন্দেহ হয়, ওই যুবক ছেলেধরা। শিশু অপহরণের উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছেন। মুহূর্তে এলাকায় লোকজন জড়ো হয়ে যায়। শুরু হয় গণপিটুনি। ছেলেধরা সন্দেহে ওই যুবককে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। গুরুতর জখম অবস্থায় তিনি এখন বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গণপিটুনির খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। তারা যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়। তদন্তে নেমে দু’জনকে গ্রেফতারও করা হয়। বনগাঁর এই গণপিটুনির ঘটনার ভিডিয়ো রাতেই সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। যেখানে দেখা যায়, যুবককে মাটিতে ফেলে মারধর করা হচ্ছে। যদিও সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।
উল্লেখ্য, এর আগে বারাসত, খড়দহ এবং অশোকনগরেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। বারাসতে একই দিনে দুই জায়গায় মোট তিন জনকে ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করা হয়। তাঁদের মধ্যে এক মহিলাও ছিলেন। পরে অশোকনগরে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দেওয়া হয় এক তরুণীকে। বাধা দিতে গেলে পুলিশকেও মারধর করে উন্মত্ত জনতা। খড়দহে শনিবার এক যুবককে ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করেন এলাকার মানুষ। প্রতি ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, ঘটনাগুলি ঘটছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কোনও না কোনও অংশে। জেলার নিরাপত্তা তাই প্রশ্নের মুখে। পুলিশ কেন বার বার এই ধরনের ঘটনা আটকাতে ব্যর্থ হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।