Ration Distribution Case

তিন প্রকল্পের রেশন পণ্যের ৩০% বেআইনি ভাবে খোলা বাজারে বিক্রি, লোপাট গরিব চাষির টাকাও, দাবি ইডির

এই দুর্নীতিতে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৮ কোটি ২৯ লক্ষ টাকার হদিস পেয়েছে বলেও দাবি করেছে ইডি। এর মধ্যে তল্লাশি চালিয়ে ১ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৩ ০৫:৪০
Share:

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

রাজ্যে তিন ধরনের রেশন প্রকল্পের প্রায় ৩০ শতাংশ পণ্য গণবণ্টন ব্যবস্থাকে এড়িয়ে খোলা বাজারে বিক্রি হয়েছে বলে দাবি করল ইডি।

Advertisement

মঙ্গলবার বিবৃতি দিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির দাবি, দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষের রেশন (প্রায়োরিটি হাউসহোল্ড), রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা (আরএসকেওয়াই) এবং অন্নপূর্ণা অন্ত্যোদয় যোজনা— এই তিন প্রকল্পেরই রেশনের ৩০ শতাংশ পণ্য বেআইনি ভাবে খোলা বাজারে বিক্রি হয়েছে এবং সেই টাকা চালকল মালিক ও রেশন ডিলারদের একাংশের মধ্যে ভাগ হয়েছে।

এ ছাড়া, সরকার যে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনে, সেই টাকাও লোপাট করা হয়েছে। মূলত কিছু সমবায় সমিতির সঙ্গে হাত মিলিয়ে চালকল মালিকদের একাংশ কৃষকদের নামে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে সেই টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে ইডির অভিযোগ। বছরের পর বছর রাজ্যে এই দুর্নীতি চলেছে বলে দাবি করেছে তারা।

Advertisement

এই দুর্নীতিতে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৮ কোটি ২৯ লক্ষ টাকার হদিস পেয়েছে বলেও দাবি করেছে ইডি। এর মধ্যে তল্লাশি চালিয়ে ১ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া, এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ভুয়ো সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ১৬ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা ‘ফ্রিজ়’ করেছেন তদন্তকারীরা।

রাজ্যে স্কুল এবং পুর নিয়োগ দুর্নীতিতে কোটি কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ আগেই উঠেছে। কিন্তু অনেকের দাবি, রেশন বণ্টন দুর্নীতির যদি হিসাব বেরোয়, তা হলে তা স্কুল এবং পুর নিয়োগকে ছাপিয়ে যেতে পারে। ইডি সূত্রও এই আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না। ইডি সূত্রে দাবি করা হয়েছে যে, রেশন দুর্নীতির মূলত দুটি পর্যায় আছে। চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার সময়ে এক দফায় দুর্নীতি হয়েছে এবং চাষিদের প্রাপ্য টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। তার পর রেশনের বরাদ্দ চাল, গমের ৩০ শতাংশ খোলা বাজারে বিক্রি করে টাকা কামানো হয়েছে। বিবৃতিতে ইডি দাবি করেছে, এই মামলায় অন্যতম মূল সন্দেহভাজন ইতিমধ্যেই স্বীকার করেছেন যে, কুইন্টাল প্রতি ২০০ টাকা করে সহায়ক মূল্য হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। তা থেকে অনেকেই বলছেন, রাজ্য প্রতি বছর কত পরিমাণে চাল কেনে এবং সেই চালের মধ্যে কত শতাংশের টাকা লোপাট হয়েছে তা হিসাব করলেই এই দুর্নীতির পরিমাণ আঁচ করা করা সম্ভব। তার পরে তো খোলা বাজারে রেশনের চাল, গম বিক্রির মুনাফা আছেই।

প্রসঙ্গত, এই দুর্নীতিতে যে প্রভাবশালী যোগ আছে, তা ইতিমধ্যেই কার্যত স্পষ্ট করেছে ইডি। দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। পাকড়াও করা হয়েছে মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ চালকল ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানকেও। তবে তদন্তকারীদের সন্দেহ, এই চক্রে বাকিবুরের মতো এমন আরও অনেকেই জড়িত। এই দুর্নীতির টাকা আর কোন প্রভাবশালীর কাছে গিয়েছে তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে একাধিক চাল এবং আটাকলে তল্লাশি হয়েছে। উলুবেড়িয়ার একটি আটাকলের মালিক কোম্পানির ডিরেক্টর আবার প্রায় তিন দশক আগের বিহারের পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে যুক্ত ছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। ইডি সূত্রের দাবি, ওই সংস্থার অফিসেই তল্লাশি চালিয়ে প্রায় এক কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

দুর্নীতির পরিমাণের সূত্রেই ইডির তদন্তকারীদের একাংশের সন্দেহ, এ পর্যন্ত যত টাকার হদিস মিলেছে, তা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। এই দুর্নীতির টাকা অন্যান্য সম্পত্তিতে বিনিয়োগ এবং বিদেশে পাচার হয়েছে বলেও মনে করছেন তাঁরা। তবে এ ব্যাপারে এখনও কোনও নিশ্চিত সূত্র মিলেছে কি না, তা এখনই স্পষ্ট করতে চায়নি ইডি সূত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement