তিক্রমী: পুরস্কৃত তিন শিক্ষক। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
সারা বছরে এক দিনও ছুটি নেননি তাঁরা। ঝড়-বৃষ্টি থেকে শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও স্কুলে হাজিরার ক্ষেত্রে অক্লান্ত তাঁরা। তাঁরা অর্থাৎ হলদিয়া গভর্নমেন্ট সেকেন্ডারি হাইস্কুলের তিনজন শিক্ষক। স্কুল কামাই করার কথা এঁদের কেউ কল্পনাও করতে পারেন না। আর তাই পড়ুয়াদের কাছে জনপ্রিয় এই তিন শিক্ষককে পুরস্কৃত করলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনুপম বিশ্বাস জানান, সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের সম্পর্কে অনেক সময় ছুটি নেওয়া নিয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করা হয়। কিন্তু এঁরা দৃষ্টান্ত। ব্যতিক্রমী সেই ছবি তুলে ধরতেই এই স্বীকৃতি। হলদিয়ার মহকুমা শাসক শ্রুতিরঞ্জন মোহান্তি বৃহস্পতিবার ওই শিক্ষকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। হলদিয়ার উপ-পুরপ্রধান সুধাংশু মণ্ডল ও পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল জয়ন্তী রায় স্কুলের এই ভূমিকার প্রশংসা করেন। জয়ন্তী রায় বলেন, ‘‘এই শিক্ষকেরা উজ্জ্বল ছবি সমাজের।’’
কী বলছেন পুরস্কৃত শিক্ষকেরা!
পটাশপুরে বাড়ি গণিতের শিক্ষক কমলকান্তি বেরার। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলে না এসে থাকতে পারি না। তাই পরিকল্পনা করেই অন্য কাজের সময় বের করে নিই। এমনকী অসুস্থ অবস্থাতেও স্কুলে এসেছি।’’ গণিতের আর এক শিক্ষক শুভঙ্কর নাথের কথায়, ‘‘এই ধরনের মানসিকতা আমাদের সকলেরই আছে। গণিতের মতো বিষয় পড়াই। আমরা নিয়মিত না এলে ছাত্রছাত্রীরা অসুবিধায় পড়বে। তাই ছুটি নিই না।’’ বাংলার শিক্ষক গৌতম গুহ বলেন, ‘‘জ্বর নিয়েও স্কুলে এসেছি। আসলে স্কুলে না এসে থাকা যায় না। শুধু ছুটি আছে বলেই নিতে হবে, এর কোনও অর্থ খুঁজে পাই না।’’
ছুটি না নেওয়ায় পারিবারিক কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়নি? তিন শিক্ষকের মত, ‘‘শিক্ষকতার সঙ্গে অন্য পেশার ফারাক আছে। এখানে দায়িত্ববোধ ও চেতনা দিয়েও পেশাগত কাজ করতে হয়।’’
একই ভাই গত বছর পুরহস্কৃত হয়েছিলেন ভূগোলের শিক্ষক সমীরণ মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘এবছর একদিন ছুটি নিয়েছি। কারণ কলেজ সার্ভিস পরীক্ষার ইন্টারভিউ ছিল। তা ছাড়া কোনও কিছুই স্কুলে আসা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।’’
শিক্ষকদের এমন সম্মানে খুশি পড়ুয়ারাও। তারা জানায়, ওই তিন শিক্ষক তাঁদের কাছে আদর্শ। স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র সোহম দত্ত এবছর ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার পেয়েছে। তার কথায়, ‘‘স্যরদের এই সৃঙ্খলা আমাদের উদ্বুদ্ধ করবে।’’