দেরিতে হলেও রাজ্যের চাষিরা ‘কিসান সম্মান নিধি’ প্রকল্পের টাকা পেতে শুরু করলেন। বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় এলে এতদিন না পাওয়া টাকাও দেওয়া হবে বলে ইস্তাহারে ঘোষণা করেছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু সেই স্বপ্ন অধরা থেকে যাওয়ায় বাংলার কৃষকরা সেই টাকা পাবেন না বলেই ধরে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু মূলত কৃষিজীবীদের ভোটে জেতা বিজেপি-র ৩ কৃষক পরিবারের বিধায়ক চাইছেন ক্ষমতায় না এলেও সেই টাকা দেওয়া হোক বাংলার চাষিদের। এর ফলে বিজেপি-র ভাবমূর্তি ভাল হবে বলেও মনে করেন তাঁরা। তবে ৩ জনেরই বক্তব্য, উদ্যোগী হতে হবে রাজ্য সরকারকেই।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই প্রকল্প চালু করার পরে শুক্রবার ছিল অষ্টম কিস্তির টাকা দেওয়ার দিন। কিন্তু বাংলায় আগে প্রকল্প চালু না হওয়ায় এতদিন টাকা পাননি রাজ্যের কৃষকরা। বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোট প্রচারে মোদী নিজে ঘোষণা করেছিলেন, বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় এলে প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকেই এই প্রকল্পে টাকা পাঠানোর সিদ্ধান্ত হবে। শুধু তাই নয়, বাংলার কৃষকরা আগে না পাওয়া ১৮ হাজার টাকা এককালীন পাবেন। ৭টি কিস্তিতে ২ হাজার টাকা করে দেওয়া ছাড়াও দেশজুড়ে লকডাউনের সময় দু'বার ২ হাজার টাকা করে দিয়েছিল কেন্দ্র। ৮ দফার ভোটের মাঝখানেই ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে প্রত্যয়ী মোদী বাংলার রাজ্য সরকারি আধিকারিকদের কৃষকদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করারও ডাক দিয়েছিলেন। পরে ওই ১৮ হাজার টাকার কথা বিজেপি-র ইস্তাহার ‘সঙ্কল্প পত্র’-এও জায়গা পেয়েছিল। কিন্তু এখন কি আর উদ্যোগী হবে কেন্দ্র? এমন প্রশ্নের জবাবে রাজ্য নেতারা বলছেন, ক্ষমতায় না আসায় ইস্তাহারে ঘোষিত প্রতিশ্রুতি পূরণের দায় নেই দলের। কিন্তু ৩ কৃষক বিধায়ক অন্য কথা বলছেন।
পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট নিজেও কৃষিকাজ করেন। তিনি চান কেন্দ্র পুরনো টাকাও দিক। তবে সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারের সহযোগিতা দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি। শীতল বলেন, “কেন্দ্র সবসময়েই মানুষের পাশে থেকে কাজ করতে চায়। সেটা কৃষক, মহিলা, পড়ুয়া সকলের জন্যই। কিন্তু রাজ্য সরকারের বাধায় অনেক কিছু করা যায়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেদ বজায় রাখার জন্যই এটা হয়েছে। এখন ওঁরও শিক্ষা পাওয়া দরকার। এখন মমতা যদি ভুল বুঝে কেন্দ্রের কাছে আবেদন করেন তবে বাংলার চাষিরা ওই সুযোগ পেতে পারেন। আমি সব সময়েই চাই কৃষকদের ভাল হোক।” একই সঙ্গে তিনি বলেন, “রাজ্যে আমরা হেরে যাওয়ার পরেও মোদী’জি কথা রাখছেন। আমরা ক্ষমতায় এলে আরও বেশি মিলত।’’
হুগলির গোঘাটের বিজেপি বিধায়ক বিশ্বনাথ কারক বলেন, “আমি নিজেও কৃষক। আমিও ‘কৃষক সম্মান নিধি’-র টাকার জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু এতদিন পাইনি। আমি চাই, রাজ্য সরকার ওই বকেয়া টাকাও চেয়ে নিক কেন্দ্রের থেকে। কৃষকরা যত বেশ পাবেন ততই ভাল। তবে কৃষকের ঘরে সেই টাকা আসুক যেমন চাই, তেমন রাজ্যের মানুষ আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সুবিধা যাতে পায় সেটাও চাই।” একই সঙ্গে বিশ্বনাথ বলেন, “নিজে কৃষক হওয়ায় কৃষিজীবী মানুষের কষ্টটা আমি বুঝি। এ বার তিল নষ্ট হয়ে গেল, মাঠে বৃষ্টির জলে ধান ভাসছে। কৃষকের পাশে দাঁড়াতে কেন্দ্র যে প্রয়াস নিয়েছে তাতে সহযোগিতা করুক রাজ্য সরকার। মনে রাখতে হবে, কৃষকরাই সমাজকে বাঁচিয়ে রেখেছে। রাজ্যের খুবই কম কৃষকের তালিকা পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার। আরও কৃষক যাতে এই সুবিধা পায় তার জন্য আমি নিজে বিধায়ক হিসেবে তালিকা তৈরির কাজ করব।"
মালদহের গাজোলের বিধায়ক চিন্ময় দেব বর্মণও কৃষক পরিবারের প্রতিনিধি। আবার তিনি যে বিধানসভা আসনের প্রতিনিধি সেটাও কৃষিনির্ভর। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের না পাওয়া টাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "রাজ্য সরকার যদি এ বিষয়ে উদ্যোগঈ হয় তবে কেন্দ্রীয় সরকার নিশ্চয়ই ভাববে। আমি মনে করি, বাংলার কৃষকদের কথা ভেবে সেটা করবেন মোদীজি। কিন্তু আমরা যেহেতু ক্ষমতায় নেই, তাই চেষ্টাটা রাজ্য সরকারকেই করতে হবে।"