মারণ মোড়ের মোকাবিলায় পরিষদ

মহাকাশের সর্বগ্রাসী ‘ব্ল্যাক হোল’ বা কৃষ্ণগহ্বর নয়। প্রাণঘাতী ‘ব্ল্যাক স্পট’ বা মারণ স্থান ওত পেতে আছে খাস বাংলার বিভিন্ন জাতীয় সড়কেই। অতএব মারণ স্থানে সাবধান! কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ পর্যন্ত এই ধরনের জায়গার সংখ্যা আপাতত ২৫। এর বেশ কয়েকটিতে ২০১৪ সালে পথ-দুর্ঘটনায় পাঁচ জনের বেশি প্রাণ হারিয়েছেন বা মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটেছে ১০টির বেশি। রাজ্য পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সমীক্ষা চালিয়ে এই ধরনের ২৫টি বিপজ্জনক মোড়, ক্রসিং, সেতু কিংবা স্টপ চিহ্নিত করেছে। তবে এটুকুতেই থেমে থাকছে না প্রশাসন। কী ভাবে নিরাপদ স্থান হিসেবে ওই সব বিপজ্জনক জায়গার উত্তরণ ঘটানো যায়, কী করে ঠেকানো যায় দুর্ঘটনার প্রবণতা— চলছে তার পরীক্ষানিরীক্ষাও।

Advertisement

অত্রি মিত্র

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৫ ০৪:১১
Share:

মহাকাশের সর্বগ্রাসী ‘ব্ল্যাক হোল’ বা কৃষ্ণগহ্বর নয়। প্রাণঘাতী ‘ব্ল্যাক স্পট’ বা মারণ স্থান ওত পেতে আছে খাস বাংলার বিভিন্ন জাতীয় সড়কেই। অতএব মারণ স্থানে সাবধান!

Advertisement

কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ পর্যন্ত এই ধরনের জায়গার সংখ্যা আপাতত ২৫। এর বেশ কয়েকটিতে ২০১৪ সালে পথ-দুর্ঘটনায় পাঁচ জনের বেশি প্রাণ হারিয়েছেন বা মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটেছে ১০টির বেশি। রাজ্য পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সমীক্ষা চালিয়ে এই ধরনের ২৫টি বিপজ্জনক মোড়, ক্রসিং, সেতু কিংবা স্টপ চিহ্নিত করেছে। তবে এটুকুতেই থেমে থাকছে না প্রশাসন। কী ভাবে নিরাপদ স্থান হিসেবে ওই সব বিপজ্জনক জায়গার উত্তরণ ঘটানো যায়, কী করে ঠেকানো যায় দুর্ঘটনার প্রবণতা— চলছে তার পরীক্ষানিরীক্ষাও।

বিজ্ঞান বলছে, মহাকাশের ‘ব্ল্যাক হোল’ বা কৃষ্ণগহ্বর সব কিছুকে, এমনকী আলোকেও লহমায় জঠরস্থ করে ফেলে। জাতীয় সড়কের প্রায় অনুরূপ জায়গাগুলোকে ট্রাফিকের পরিভাষায় বলা হচ্ছে ‘ব্ল্যাক স্পট’। কালো তিল বা ‘বিউটি স্পট’ নয়। ওই জায়গাগুলির কুখ্যাতি ঘাতক হিসেবে। রাজ্য পুলিশের হিসেব অনুযায়ী বাংলায় সব চেয়ে বেশি ব্ল্যাক স্পট রয়েছে দু’টি এলাকায়। বর্ধমানের গলসি এবং হাওড়ার ডোমজুড়ে। দু’টি এলাকাতেই তিনটি করে এলাকা দুর্ঘটনাপ্রবণ বলে চিহ্নিত করেছে রাজ্য পুলিশ। এ ছাড়া দু’টি করে ব্ল্যাক স্পট রয়েছে অন্ডাল, নাকাশিপাড়া, নন্দকুমার এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরে। একটি করে এই ধরনের স্পট আছে দমদমের এয়ারপোর্ট গেট, দুর্গাপুরের গাঁধী মোড়, সাঁতরাগাছি সেতু, ধুলাগড় টোল প্লাজা, ডানকুনির এফসিআই ক্রসিং, ধুবুলিয়া বাজার, বহরমপুরের গিরজা মোড়, মধ্যমগ্রাম চৌমাথা, খড়্গপুরের লছমাপুর, সরিষা এবং চোপরার ডালুয়ায়।

Advertisement

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন।

ফি-বছর ঘটা করে পথ-নিরাপত্তা সপ্তাহ পালন করা হয়। কিন্তু পথের গ্রাসে ঘাটতির লক্ষণ নেই। কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর সারা দেশে গড়ে দেড় লক্ষ মানুষ পথের বলি হন। আর প্রতিদিন এ দেশে পথ-দুর্ঘটনা ঘটে গড়ে ১২১৪টি। মৃত্যু হয় সাড়ে তিনশোরও বেশি মানুষের। রাস্তায় দুর্ঘটনা বেড়ে চলায় কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক উদ্বিগ্ন। দুর্ঘটনা এবং তাতে প্রাণহানির ঘটনা নিয়ে বেশ কয়েক বার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্টও। পথ-দুর্ঘটনা কমাতে রাজ্য সরকারগুলিকে বারবার বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রাজ্য-ভিত্তিক একটি পথ নিরাপত্তা কমিটি গড়ারও নির্দেশ দিয়েছে তারা। নির্দেশ এসেছে কেন্দ্রের কাছ থেকেও।

কেন্দ্র ও শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মেনে বেশ কয়েকটি রাজ্য ইতিমধ্যেই পথ-নিরাপত্তা বাড়াতে নানান ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু এই ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ এত দিন মুখ ফিরিয়ে ছিল। দেরিতে হলেও অবশেষে হুঁশ ফিরেছে এ রাজ্যের। ট্রেনযাত্রার নিরাপত্তা দেখতে আছেন রেলওয়ে সেফটি কমিশনার। রাস্তায় নিরাপত্তার সব দিক দেখার জন্য ‘রোড সেফটি কাউন্সিল’ বা পথ-নিরাপত্তা পরিষদ তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। ওই পরিষদের মাথায় আছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র। সদস্য-সচিব হয়েছেন পরিবহণসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। পথ-নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত নানা ক্ষেত্রের ব্যক্তিদের ওই পরিষদে নেওয়া হবে বলে পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। শুধু রাজ্য স্তর নয়, একই ভাবে পরিষদ গড়া হচ্ছে জেলা স্তর এবং কমিশনারেট এলাকায়। জেলা পর্যায়ের পরিষদে চেয়ারম্যান হচ্ছেন জেলাশাসক, কমিশনারেট স্তরের পরিষদে ওই পদে বসছেন পুলিশ কমিশনার। সেগুলোর সদস্য-সচিব হচ্ছেন আঞ্চলিক পরিবহণ অফিসার কিংবা যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক)।

কী করবে এই কাউন্সিল?

রাজ্য পুলিশের এক কর্তা জানান, শুধু মার্কামারা ব্ল্যাক স্পট নয়, সার্বিক ভাবে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে সেই জায়গাগুলিকে নিরাপদ করাই হবে ওই সব পরিষদের লক্ষ্য। ওই কর্তার কথায়, ‘‘দুর্ঘটনা কমানোর মূল দায়িত্ব পুলিশ ও পূর্ত দফতরের। পুলিশ দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালিয়ে দুর্ঘটনা কমানোর চেষ্টা করবে। নানা ভাবে চালানো হবে প্রচারও। আর দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকার সড়কে বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রক্রিয়া এবং চিহ্ন ব্যবহার করে দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমিয়ে আনাটাই হবে পূর্ত দফতর আর জাতীয় সড়ক বিভাগের কাজ।’’ নজরদারির দায়িত্বে থাকছে রাজ্যের পরিবহণ দফতর। প্রাথমিক ভাবে ২৫টি ব্ল্যাক স্পট ভাল করে ঘুরে দেখার কাজ শুরু করেছে পুলিশ ও পূর্ত দফতরের একটি দল। ‘‘এর পরে এই ধরনের সব জায়গার প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে সেখানে দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমাতে রোডম্যাপ তৈরি করবে ওই দলটি,’’ বললেন এক পরিবহণ-কর্তা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement