Nadia

শখের মোটরবাইকে সওয়ারি নিয়ে ঘুরছেন আয়ের পথে, রাইডিং অ্যাপও চালু করতে চান নদিয়ার যুবক

বাবার কাছে আবদার করে কেনা মোটরবাইকে সওয়ারি নিয়ে সকাল-সন্ধ্যায় দৌড়চ্ছেন। মাস কয়েক ধরেই এ ভাবেই সংসারের হাল ধরেছেন নদিয়ার রানাঘাটের বছর চব্বিশের কলেজপড়ুয়া প্রসেনজিৎ বিশ্বাস।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শান্তিপুর শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৩ ১৬:৪০
Share:

সঙ্কুচিত কর্মসংস্থানের বাজারে নিজের মোটরবাইকের মাধ্যমে রোজগারের অভিনব পন্থা বেছে নিয়েছেন প্রসেনজিৎ বিশ্বাস। —নিজস্ব চিত্র।

তীব্র দাবদাহ হোক বা কনকনে ঠান্ডার মরসুম, প্রতি দিন সাতসকালেই নিজের মোটরবাইক নিয়ে রানাঘাট স্টেশনে হাজির হন। হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে থাকে নামমাত্র মূল্যে বাইক পরিষেবার প্রতিশ্রুতি। বাবার কাছে আবদার করে কেনা ওই বাইকে সওয়ারি নিয়ে সকাল-সন্ধ্যায় দৌড়চ্ছেন। মাস কয়েক ধরেই এ ভাবেই সংসারের হাল ধরেছেন তিনি। শীঘ্রই বাইক রাইডিংয়ের অ্যাপ চালু করতে চান নদিয়ার রানাঘাটের বছর চব্বিশের কলেজপড়ুয়া প্রসেনজিৎ বিশ্বাস।

Advertisement

সঙ্কুচিত কর্মসংস্থানের বাজারে নিজের বাইকের মাধ্যমে সংসারের হাল ধরতে এ হেন অভিনব পন্থা বেছে নিয়েছেন প্রসেনজিৎ। বাইক রাইডিং অ্যাপের আদলে রানাঘাট স্টেশন সংলগ্ন অঞ্চল থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শুরু করেছেন যাত্রিবাহী বাইক পরিষেবা। বাইকে করে স্টেশন থেকে নিত্যযাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেন তিনি। বদলে নেন কিলোমিটার প্রতি ১০ টাকা করে। গ্রাহক টানতে বিভিন্ন সমাজমাধ্যমে নিজের ফোন নম্বর ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। এতে সাড়াও মিলেছে ভালই। যার দৌলতে এই মুহূর্তে সমাজমাধ্যমে ভাইরাল প্রসেনজিৎ। সব মিলিয়ে দৈনিক প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় হচ্ছে প্রসেনজিতের। এ নিয়ে প্রসেনজিতের সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘‘বাবার পয়সা ইচ্ছেমতো না উড়িয়ে কিছুটা তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছি আর কি!’’

বাইক পরিষেবা শুরু করার কথা কী ভাবে মাথায় এল? রানাঘাটের হালালপুর তালবাগান এলাকার বাসিন্দা প্রসেনজিৎ ২০১৫ সালের মাধ্যমিক পাশ করেছিলেন। হিজুলি শিক্ষা নিকেতন থেকে ২০১৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর বাবার কাছে একটি বাইকের আবদার করেছিলেন। ছেলের আবদার রাখতে বাইক কিনে দিয়েছিলেন ফুলের ব্যবসাদার বাবা। তবে ২০২০ থেকে টানা লকডাউনে বাবার ব্যবসা মার খেয়েছিল। সে ক্ষতির ধাক্কা আজও সামলে উঠতে পারেনি প্রসেনজিতের পরিবার। পড়াশোনা স্থগিত রেখে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজে যোগ দেন প্রসেনজিৎ। তবে সে কাজ ছেড়ে কয়েক মাস আগে বাইকে যাত্রী পরিষেবা দিয়ে রোজগারের সিদ্ধান্ত নেন প্রসেনজিৎ। তিনি জানিয়েছেন, মূলত প্ল্যাকার্ডে লেখা ফোন নম্বরে যাত্রীদের গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ পান। সে অনুযায়ী পিক আপ এবং ড্রপিং পয়েন্টে নিয়ে যান যাত্রীদের। প্রসেনজিৎ বলেন, ‘‘যাত্রীদের কাছ থেকে কিলোমিটার পিছু ১০ টাকা চার্জ করি। সব মিলিয়ে প্রতি কিলোমিটার ৪ টাকা করে খরচ হয়।’’ প্রতি দিন ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার কাজ করেন প্রসেনজিৎ।

Advertisement

ছেলের এ কাজে গোড়ায় আপত্তি জানিয়েছিলেন প্রসেনজিতের বাবা পলান বিশ্বাস। তবে এখন তিনি সন্তুষ্ট। পলান বলেন, ‘‘এত কষ্ট করে ছেলেকে এ সব করতে হবে না বলেছিলাম। পরে দেখলাম, সৎ ভাবে উপার্জনের রাস্তা হিসাবে যদি এটা বেছে নেয় ও, আমার বাধা দেওয়া উচিত হবে না। তবে যে ভাবে পথ দুর্ঘটনা বাড়ছে, তাতে চিন্তা হয়।’’ প্রসেনজিতের মা শ্যামলী বিশ্বাস প্রতি দিন ছেলেকে নিজের হাতে খাইয়ে তাঁর জন্য দুপুরের টিফিন তৈরি করে দেন। তিনি বলেন, ‘‘করোনার পর থেকে আমাদের আর্থিক অবস্থা ভাল যাচ্ছিল না। তবে আমরা ওকে এ ভাবে রোজগারের কথা বলিনি। প্রথমের দিকে একটু আপত্তিও ছিল। তবে এখন বেশ ভালই লাগছে। ঠাকুরের কাছে সব সময় প্রার্থনা করি, ও যেন দিনের শেষে সুস্থ ভাবে ঘরে ফেরে।’’

বাবার সুচিকিৎসা, পরিবারের দায়িত্ব, বোনের উচ্চশিক্ষা— প্রসেনজিতের স্বপ্ন অনেক। প্লাস্টারহীন এক কামরার ঘরে বসে সফল ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্নে বুঁদ তিনি। নিজেই তৈরি করবেন এমন একটি অ্যাপ, যার মাধ্যমে গোটা বাংলা জুড়ে বাইক রাইডিংয়ে বিপ্লব হবে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কয়েক জন বন্ধু মিলে খুব তাড়াতাড়ি একটি অ্যাপ চালু করব। আমার মতোই আরও অনেকেই এ ভাবে নিজের শখের বাইক ব্যবহার করে কর্মসংস্থানের বিকল্প রাস্তা বেছে নিক, তা-ই চাই আমি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement