হস্টেলের ভিতরেই ছাত্রীকে হাত-পা-মুখ বেঁধে মারধর করে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠল সহপাঠিনীদের বিরুদ্ধে। মেয়েকে আর হস্টেলে পাঠাতে চান না পরিবারের লোকজনও। থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
সোমবার ভোরে ঘটনাটি ঘটেছে বসিরহাটের একটি আবাসিক স্কুলে। নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীর দাবি, ভোরের দিকে অসুস্থ বোধ করায় চার তলার ঘর থেকে বাইরে বারান্দায় বেরিয়েছিল সে। হঠাত্ই জনা চার-পাঁচেক মেয়ে তাকে জাপটে ধরে। মুখ চেপে ধরে তাকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় পাঁচতলায়। ছাদের দরজা খোলার চেষ্টা করে ওই মেয়েরা। ইতিমধ্যে ওই ছাত্রীর মুখ বেঁধে ফেলা হয়েছিল তারই ওড়না দিয়ে। পা-হাতও বেঁধে ফেলা হয় কাপড় দিয়ে। মেয়েটির দাবি, “ওরা ছাদের দরজা খুলে আমাকে সেখান থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়ার মতলবে ছিল। কিন্তু কোনও কারণে দরজা খুলতে পারেনি।” ওই ছাত্রী জানায়, ইতিমধ্যে নীচের তলায় কিছুর আওয়াজ হয়। ভয় পেয়ে তাকে ছেড়ে দুড়দাড় করে নেমে যায় বাকি মেয়েরা। কোনও মতে হাত-পা বাঁধা অবস্থাতেই নীচের তলায় নেমে আসে মেয়েটি। ঘরের আরও দুই সহ-আবাসিককে ঘুম থেকে তোলে। তারাই হাত-পা-মুখের বাঁধন খুলে দেয়।
খবর যায় মেয়েটির কুলপির বুলারচকের বাড়িতে। অভিভাবকেরা এসে মেয়েকে সোমবারই ফিরিয়ে নিয়ে যান মেয়েকে। বৃহস্পতিবার তাঁরা অভিযোগ দায়ের করেন বসিরহাট থানায়। মেয়েটির বাবার কথায়, “মেয়েকে চক্রান্ত করে খুনের চেষ্টা হয়েছে। আমরা চাই, দোষী যে-ই হোক তাদের যেন গ্রেফতার করা হয়। সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। পড়াশোনা করতে এসে মেয়েকে এ ভাবে আক্রমণের শিকার হতে হবে, ভাবতেই পারছি না।”
প্রধান শিক্ষক লিয়াকত আলি অবশ্য মেয়েটির দাবি পুরোপুরি মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “ওকে হাত-পা-মুখ বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করেছিল দুই সহপাঠিনী। কিন্তু কে ওকে এ ভাবে বাঁধল, তা নিয়ে আমাদের ধন্দ আছে।” কেন এমন ভাবছেন? প্রধান শিক্ষকের কথায়, “এমনও হতে পারে, মেয়েটি এখানে আর পড়তে চাইছিল না। সে জন্য স্কুলের কোনও সহপাঠিনীকে সঙ্গে নিয়ে এমন ঘটনা সাজিয়েছে।”
প্রধান শিক্ষকের কথায় অবশ্য কোনও সারবত্তা খুঁজে পাচ্ছেন না ওই ছাত্রীর পরিবার। গত ৪ জানুয়ারি হস্টেলে ভর্তি হয়েছিল মেয়েটি। তার অভিযোগ, “শুরু থেকেই কয়েক জন মেয়ে আমাকে বিরক্ত করছিল। আমি পড়াশোনা নিয়ে থাকতে চাই। বেশি মেলামেশা পছন্দ করি না। এ সব ওদের ভাল লাগেনি। ৯ জানুয়ারি বাথরুমে ঢুকতে গেলে আমাকে পিছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিল কেউ। স্কুলকে জানিয়েছিলাম।”
ওই ঘটনার পরে মেয়েটিকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু তখন অবশ্য থানা-পুলিশ করেননি মেয়ের বাবা। স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছেও লিখিত অভিযোগ জানাননি। রবিবারই ফের হস্টেলে পাঠানো হয়েছিল মেয়েটিকে। সোমবার ভোরেই এমন কাণ্ড।
মেয়ের বাবার প্রশ্ন, “আমার মেয়ে ক্লাস করেছে সাকুল্যে মাত্র চার-পাঁচ দিন। এর মধ্যে ওর এমন কে বন্ধু হয়ে যাবে যে গোটা ঘটনাটা এ ভাবে সাজাতে সাহায্য করবে? আসলে স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলেই এমন সব আষাঢ়ে গল্প ফাঁদছেন।”
স্কুল কর্তৃপক্ষের আবার পাল্টা দাবি, তাঁদের সহযোগিতা করছেন না মেয়েটির পরিবার। প্রধান শিক্ষক বলেন, “আমাদের কাছে ওঁরা একবারও অভিযোগ করলেন না। আমরা বলেছিলাম, মেয়েটিকে স্কুলে এনে কথা বলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। কোনও ছাত্রী এই ঘটনায় জড়িত থাকলে মেয়েটিকে দিয়ে সনাক্তকরণ করানোর ব্যবস্থা করছি। উপযুক্ত শাস্তিরও দেওয়া হবে। কিন্তু সে সব না করে ওঁরা আগেই পুলিশের কাছে চলে গেলেন।”
মেয়েটির আতঙ্ক এখনও কাটেনি। তার কথায়, “স্কুলে পড়াশোনা করতে এসে এমন হবে ভাবিনি। সে দিন ছাদের দরজা খুলতে পারলে ওরা তো আমাকে মেরেই ফেলত।” মেয়েটির দাবি, বাথরুমে ঠেলে ফেলার ঘটনা শিক্ষকদের জানানোর জেরেই তার উপরে এমন আক্রমণ হয়েছে।