বৃহস্পতিবার টাকি সাংস্কৃতিক মঞ্চে পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসীদের একটি অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে বিমান বসু।
তৃণমূল ছেড়ে বেশ কয়েক জন নেতা-কর্মী যোগ দিলেন কংগ্রেসে। বুধবার বসিরহাটের রবীন্দ্রভবনে এই উপলক্ষে কংগ্রেসের এক কর্মিসভায় হাজির ছিলেন সাংসদ অধীরঞ্জন চৌধুরী। তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেওয়া কয়েক জন নেতা-নেত্রী বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সততার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলাম। এখন দেখছি তৃণমূল স্তরের কথা শোনার মতো লোক নেই দলে।” দলের কর্মীদের প্রতি অধীরবাবুর পরামর্শ, স্থানীয় সমস্যা চিহ্নিত করে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করুন।
এ দিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন অসিত মজুমদার, কাজি আব্দুল রহিম দিলু, তাপস মজুমদার, কৃষ্ণা মজুমদার, বাবলি বসু, দিলীপ মজুমদার, অমিত মজুমদার-সহ বহু নেতা। মূলত মিনাখাঁ এবং বসিরহাট থেকে কয়েক জন তৃণমূল নেতা-নেত্রী অধীরবাবুর হাত থেকে কংগ্রেসের পতাকা তুলে নেন। দল বদলের পর জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন সহ সভাপতি গিয়াসুদ্দিন মোল্লা, প্রাক্তন ব্লক সভাপতি রাম মণ্ডল, জেলা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য প্রতিভা মণ্ডলরা বলেন, ‘‘কাজের স্বচ্ছতা আসবে, মানুষের উপকার হবে মনে করে একদিন মমতার সততার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি নেতা সর্বস্য হয়ে উঠেছে দলটা। প্রতিবাদ জানালেও তৃণমূল স্তরের মানুষের কথা শোনার মতো কেউ নেই। তাই কংগ্রেসে যোগ দেওয়া।’’
দলের কর্মীদের চাঙ্গা করতে অধীর বলেন, “আগে কর্মীরা বলবে। তারপর নেতারা।” জেলার নানা প্রান্ত থেকে আসা কর্মীদের অনেকে নেতাকে কাছে পেয়ে বলেন, ‘‘তৃণমূলের অত্যাচারে ভয়ে আমরা মুখ খুলতে পারছি না। আপনি কিছু করুন।” কেউ কেউ আবার বলেন, ‘‘আয়লা বিধ্বস্ত সুন্দরবন এলাকায় বাঁধের অবস্থা খারাপ। সম্পত্তির নিরাপত্তা নেই। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার অবস্থা শোচনীয়।” কারও আবার বক্তব্য, ‘‘দলের মধ্যে চরম গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। আপনি সমাধান করুন।”
অধীরবাবু কর্মীদের মনে করিয়ে দেন, কেন্দ্রে কিম্বা রাজ্যে কোথাও কংগ্রেসের সরকার নেই। তাই কোনও আন্দোলনের ক্ষেত্রে আর আমাদের কোনও বাধ্যবাধকতাও নেই। এই প্রসঙ্গেই কর্মীদের প্রতি তাঁর পরামর্শ, “এলাকার সমস্যা চিহ্নিত করে রাজ্যের এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করুন। মনে রাখবেন যে ভাবে নৈরাজ্যের বাতাবরণ শুরু হয়েছে, তাতে তৃণমূলের প্রতি মানুষের মোহভঙ্গ হতে শুরু করেছে।” সামনেই বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন।য় সে দিকে তাকিয়ে অধীরের বক্তব্য, ‘‘কংগ্রেস কিন্তু মরে যায়নি। সব ভূলে গিয়ে এই কেন্দ্রে দল যাকে প্রার্থী করবে তার হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। দেখবেন এখান থেকেই কংগ্রেস আবার জেগে উঠবে।”
বসিরহাটের রবীন্দ্রভবনে কর্মিসভায় অধীররঞ্জন চৌধুরী।
এ দিনই টাকি সাংস্কৃতিক মঞ্চে পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী অধিকার মঞ্চের প্রথম জেলা সম্মেলনের উদ্বোধন করতে এসেছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। সেখানে তাঁকে অভিযোগ শুনতে হয়, তৃণমূলীদের অত্যাচারে মিনাখাঁ এবং হাড়োয়াতে থাকা যাচ্ছে না। পুরুষরা সব বাড়ি ছাড়া। প্রতিবাদ করলেই মিথ্যা মামলায় জড়ানো হচ্ছে। খুন-ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের কাছে গেলে তারাও কথা শুনতে চাইছে না। বাছড়া মোহনপুর, ট্যাংরামারি, ব্রাহ্মণচক-সহ কয়েকটি গ্রামের বেশ কিছু মহিলা-পুরুষের কাছে এই অভিযোগ শুনে বিমানবাবু বলেন, “মনে রাখতে হবে, যদি সোজা আঙুলে ঘি না ওঠে, তা হলে আঙুল বেঁকিয়ে তুলতে হবে। পুলিশ যদি শাসকদলের হয়ে কাজ করে, তা হলে বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে হবে।”
কেন্দ্রের মোদির সরকারের বিরুদ্ধে তিব্র সমালোচনা করে বিমানবাবু বলেন, “রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সঙ্গে পরিকল্পনা করে বিজেপি বিভাজনের রাজনীতির মাধ্যমে আদিবাসী মানুষদের ভাগ করে সমস্ত রকম সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছে। প্রচার মাধ্যম মোদি চা বিক্রেতা, গরিব মানুষের বন্ধু বলে মানুষকে ভূল বুঝিয়ে প্রচার করল। অথচ মোদি মুখে আদিবাসী, পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য উন্নয়ন নিয়ে যাই বলুন না কেন, বিভাজন এবং ভাঁওতাবাজির রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন। তাই তো মোদি প্রধান মন্ত্রী হলে জিনিসপত্রের দাম কমবে বলে প্রচারের ঝড় তোলা হলেও কার্যত দেখা যাচ্ছে রেল, পেট্রোল, ডিজেল, গ্যাস-সহ সমস্ত কিছুর দাম বেড়েই চলেছে।” এ দিন সকালে জেলা সম্মেলনের শুরুতে পতাকা তোলেন পুলিনবিহারী বাস্কে। আদিবাসী মহিলারা নৃত্য পরিবেশন করেন। উপস্থিত ছিলেন, দেবলিনা হেমব্রম, রেখা গোস্বামী, নিরাপদ সর্দার, রবীন মণ্ডল, মৃণাল চক্রবর্তী, নেপালদেব ভট্টাচার্য, মজিদ আলি (মজিদমাস্টার), নিরঞ্জন সাহা প্রমুখ।
ছবি: নির্মল বসু।